অসুস্থ এবং সফররত ব্যক্তিদের রোজা

0
294

অসুস্থ এবং সফররত ব্যক্তিদের রোজা পালন প্রসঙ্গে আল কোরআনে বলা হয়েছে- ‘(তাও আবার সারা বছরের জন্য নয়, রোজা ফরজ করা হয়েছে) হাতে গোনা কয়েক দিনের জন্য। (তার পরেও তোমাদের) কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় কিংবা কেউ যদি সফরে থাকে সে ব্যক্তি সমপরিমাণ দিনের রোজা (সুস্থ হয়ে গেলে অথবা সফর থেকে ফিরে এলে) পরে আদায় করে নেবে। এর পরও যাদের জন্য রোজা রাখা একান্ত কষ্টকর ব্যাপার বলে মনে হবে তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে।

যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে তার জন্য তা কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখ তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার’। (সূরা বাকারা আয়াত-১৮৪)। অসুস্থতার কারণে কিংবা ভ্রমণরত অবস্থায় রোজা পালন করা কষ্টদায়ক হলে সে ক্ষেত্রে অন্য সময়ে অনুরূপ সংখ্যক (অর্থাৎ যে কটি রোজা পালন করা সম্ভব হয়নি) রোজা অবশ্যই পালন করার কথা বলা হয়েছে। সে রোজা পালনও সম্ভব না হলে ফিদায়া হিসেবে গরিব মিসকিনকে খাদ্যদানের মাধ্যমে তা পূরণের সুযোগ রয়েছে। তবে সম্ভব হলে (অর্থাৎ কষ্টদায়ক না হলে) রোজা পালন করা ‘বিশেষ কল্যাণকর’ হবে বলে আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে লক্ষণীয়।

রোজার ব্যাপারে ইসলামের প্রধানতম সংস্কার হলো এর বাস্তবিকতা এবং ধারণাগত পরিবর্তন। অসুস্থতা কিংবা সফরের কারণে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, শ্রান্তি ও অবসাদে রোজাদার যাতে সর্বপ্রকার হুকুম আহকাম পালন করে যথার্থভাবে ইবাদত করতে অসুবিধার সম্মুখীন না হয় সে জন্য অসুস্থতা ও সফরকালে রোজা পালন থেকে অব্যাহতির বিধান দেওয়া হয়েছে। বস্তত রোজা পালনের মাধ্যমে রোজাদার যাতে সজীবতা, হৃদয়ের পবিত্রতা এবং চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা অর্জনসহ রুহানি তৃপ্তি, নতুন উদ্যম ও প্রেরণা লাভ করে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তি বলতে তাফসিরে মারেফুল কোরআনে বলা হয়েছে- রোজা রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাফসিরে ফি জিলালিল কোরআনে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে যে, কোনো বিশেষ রোগব্যাধির উল্লেখ করে অসুস্থ ব্যক্তির রোজা কাজা করার নির্দেশের পরিধিকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়নি। যে কোনো রোগ- যাতে রোজা রাখা তার জন্য দুরূহ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রের জন্য এই অনুমতি। প্রকৃত প্রস্তাবে অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোজা রাখার কারণে কোনো শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যুর আশঙ্কা বোধ করে তবে এ অবস্থায় রোজা রাখবে না। সুস্থ হওয়ার পর কাজা করবে। শুধু মনের ধারণায় অসুস্থতার অজুহাতে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকা দুরস্ত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা নিজের পূর্বঅভিজ্ঞতা কিংবা কোনো লক্ষণ দ্বারা প্রবল ধারণা জন্মে যে, রোজা রাখলে ক্ষতি হবে তখন রোজা রাখা ত্যাগ করা যাবে।

‘সফররত ব্যক্তি’ বলতে কোরআনের তাফসিরকারক এবং শরিয়তের পরিভাষাবিদগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, ওই ব্যক্তি- যিনি সফরে আছেন। বাড়িঘর হতে বের হয়ে কোথাও যাওয়া নয়, সফর দীর্ঘ হতে হবে। রসুলে করিম (স.)-এর হাদিস এবং সাহাবিদের অনুসরণের ওপর ভিত্তি করে ইমাম আবু হানিফা (র.) এবং অন্যান্য ফেকাহবিদগণ সফরের দূরত্বকে তিন মনজিল বলে মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ একজন লোক স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে তিন দিনে যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ততটুকু দূরত্বকে বোঝায়। পরবর্তীকালের ফেকাহবিদগণ এ দূরত্বকে আটচল্লিশ মাইল সাব্যস্ত করেন। মহানবী (স.)-এর হাদিস মতে সফরের সময়সীমা বলতে সফরকালীন সময় এবং মধ্যবর্তী যাত্রাবিরতির মেয়াদ ঊর্ধ্বপক্ষে পনের দিনের কম সময়কে বোঝায়। কেউ যদি সফরের মধ্যেই কোথাও পনের দিন অবস্থান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন সেটা আর সফরের মধ্যে বিবেচিত হবে না। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক সচিব ও এন বি আরের সাবেক চেয়ারম্যান ।>>মোহাম্মদ আবদুল মজিদ