আজ থেকে বান্দরবানে মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে

0
97

 

%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a7%aa %e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a7%87আজ ১৫ অক্টোবর থেকে ৪ দিনব্যাপী মারমা সম্প্রদায়ের উদ্যোগে বান্দরবানে শুরু হয়েছে মাহা ওয়াগ্যোয়াই উৎসব।

বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী পল্লীগুলো সেজেছে নতুন সাজে। জেলায় এবারও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, ফানুস বাতি ওড়ানো, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন, মঙ্গল রথযাত্রাসহ তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সন্ধ্যায় উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ওই দিন রাতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে আকাশে ওড়ানো হবে শত শত ফানুস।

এ ছাড়াও ওই দিন পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে পিঠা তৈরি উৎসব ও ফানুস ওড়ানো হবে। চলবে মারমা তরুণ-তরুণীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

মারমা সম্প্রদায় থেকে জানা যায়, তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর পাহাড়ী মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে আকাশে ওড়ানো হয় শত শত ফানুস বাতি। পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায় নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে।

মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস : আকাশে ওঠার আগেই যে ব্যক্তির ফানুস মাটিতে পড়ে যায় তাকে পাহাড়ীরা পাপী লোক হিসেবে চিহ্নিত করে। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে ফানুস উড়িয়ে পাহাড়ীরা নিজেদের পাপমোচন ও পাপী মানুষের খোঁজ বের করে। এ কারণে ফানুস আকাশে ওড়ানোর সময় পাহাড়ীরা মারমা ভাষায় ‘সাও দো, সাও দো’ বলতে থাকেন। অর্থাৎ ‘শুভ মুক্তি’। পাহাড়ী পল্লীগুলো ও ক্যায়াং থেকে রং-বেরঙের শত শত ফানুস বাতি ওড়ানো হয়। অপরদিকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েকে ঘিরে বান্দরবানে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ধুম পড়েছে পিঠা তৈরির। পাহাড়ী তরুণ-তরুণী সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা তৈরি করেন। যা প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করেন এ উৎসবে। অপরদিকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- মঙ্গল রথযাত্রা। বিশাল আকৃতির ময়ূর তৈরি করে তার ওপর একটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে পুরো শহর ঘুরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় বৌদ্ধধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে উপচেপড়া ভিড় জমে।

ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। উৎসবকে ঘিরে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। তবে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ফানুস বাতি ওড়ানো ও পিঠা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান চলছে কয়েকদিন আগে থেকেই। এবারও উৎসব আয়োজন কমিটি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ফানুস বাতি ওড়ানো, মঙ্গল প্রদীপ জ্বলন, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ এবং ময়ূর রথযাত্রা ও বিসর্জন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারও উৎসাহ-উদ্দীপনায় পোয়ে উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।

এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন গত কাল বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বান্দরবান মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব পরিচালনা পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে রি সং সং রেস্টুরেন্টে মাহা ওয়াগ্যোয়াই পরিচালনা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লাগ্যচিং মার্মা সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মলনে বৃহস্পতিবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আজ ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়াগ্যেয়াই উৎসবের উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এছাড়াও রথযাত্রা, ফানুস উৎস, পিঠা তৈরি এবং রথ বন্দনাসহ নানা কর্মসূচি ও শেষে রথ সাঙ্গু নদীতে বিসর্জনের মাধ্যমে ওয়াগ্যোই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে বলে জানানো হয়েছে। জেলা সদর ছাড়াও ৭টি উপজেলার নানাস্থানে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মারমা সম্প্রদায় এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এ উৎসব পালন করবেন।