আফগানবধ

0
166

একের পর এক উইকেট পতন। সাকিবে ধরাশয়ী আফগানরা। বন্দি হয়ে গেল বাঘের খাঁচায়। আফগানবধ। সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দারুণ জয় তুলে নিল বাংলাদেশ।

ম্যাচটা কি টেস্ট না কি ওয়ানডে, ধন্দে পড়ে যেতে হলো ক্ষণিকের জন্য। আফগানিস্তান ইনিংসের তখন ৩১তম ওভার। উইকেটের পেছনে স্লিপে দাঁড়ানো একজন। উইকেটের পেছনে না হোক, সামনের দিকে তাকিয়ে যে একটু স্বস্তি খুঁজবেন ব্যাটসম্যান, সে উপায়টুকুও নেই। সিলি মিড অফেও যে ওঁত পেতে আছেন আরেকজন!

ইনিংসের অর্ধেক পার হয়ে যাওয়ার পর এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়াটা একটু বিরলই বটে। আজ সাকিব আল হাসানের সৌজন্যে সেটিও দেখা হয়ে গেল। ওয়ানডেতে এমন ফিল্ডিং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে চোখে আঙুল তুলে দেওয়া। ফুটবলে নাটমেগড হওয়ার মতোই সমান লজ্জার। আজ আফগানদের সেই লজ্জাই দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব যে ‘বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না’—এমন গা জ্বলুনি কথা শুনিয়েছিলেন। এও বলেছিলেন, আমরা তো ডুবছিই, বাংলাদেশকে নিয়েই ডুবব।

ডুবল আফগানিস্তানই। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল আশা এখনো জেগে রইল। গুলবদিনের কথাগুলো স্রেফ গুলতাপ্পি প্রমাণ হয়ে গেল। এখন ওই বদন তিনি কোথায় লুকোবেন!

অহমে চোট লাগলে সাকিব আল হাসান কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, সেটিই যেন আজ নতুন করে টের পেল আফগানিস্তান।

ব্যাটসম্যান সাকিবের পরিচয় এ বিশ্বকাপে নিয়মিতই পাওয়া যাচ্ছে। আজও ৫১ করে ডেভিড ওয়ার্নারের মাথা থেকে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের মুকুটটা আরও একবার নিয়ে এসেছেন নিজের কাছে। বোলিংয়েও নিজের কাজটা করে যাচ্ছিলেন নীরবে, কিন্তু ঠিক যেন সাকিব-সুলভ হচ্ছিল না। ৬ ম্যাচে ৫ উইকেট যে সাকিবের নামের পাশে বড্ড বেমানান! আজ বোলার সাকিবও দেখা দিলেন স্বরূপে। আর সাকিব যেদিন ব্যাটে-বলে জ্বলে ওঠেন, সেদিন বাকি সবাই হয়ে যান পার্শ্ব চরিত্র।

যে কারণে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৩ করেও মুশফিকুর রহিম আজকের ম্যাচে পার্শ্বনায়ক। মুশফিকও তাতে খুব একটা আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না। পঞ্চপাণ্ডবের ‘অর্জুন’ যেদিন সবটুকু আলো নিজের দিকে কেড়ে নেন, বাকি চার পাণ্ডবও যে হয়ে যান নীরব সমর্থক! বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে ফিফটি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে দিনটাকে করে নিলেন শুধুই নিজের। বিশ্বকাপ ইতিহাসে যে কীর্তি এর আগে ছিল শুধুই যুবরাজ সিংয়ের। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এ কীর্তি ছিল সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডারের।

ব্যাট হাতে প্রতি ম্যাচে রান পেয়েছেন বলেই কি না, আজ বোলার সাকিবের মাহাত্ম্যই বড় হয়ে দেখা দিল। ১০ ওভার পার হয়ে গেছে, অথচ মাশরাফি তখনো স্পিনত্রয়ীর কাউকেই আক্রমণে আনেননি। আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডেও ততক্ষণে উঠে গেছে ৪৮ রান। অস্বস্তি তখন একটু একটু করে উঁকি দিতে শুরু করেছে। একাদশ ওভারে আক্রমণে এসে অস্বস্তির মেঘ প্রথম দূর করলেন সাকিবই। রহমত শাহকে মিড অনে তামিম ইকবালের ক্যাচ বানিয়ে জানান দিয়ে রাখলেন, বাংলাদেশ নয়, আজকের ম্যাচে ডুববে শুধু আফগানিস্তানই।

তবে সাকিব নিজের বোলার সত্ত্বার সেরাটা দেখালেন ইনিংসের ২৯তম ওভারে। মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই ১০০ পার করে ফেলেছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশের সমর্থকদের কপালে আবারো দুশ্চিন্তার ভাঁজ। শর্ট কভারে দুজন ফিল্ডার রেখে গুলবদিনের জন্য টোপ পাতলেন সাকিব, প্রথম বলেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিলেন আফগান অধিনায়ক। লিটন দাসের বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাচ বানিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল পূর্ণ করেছেন।

এমন অনন্য একটা অর্জন উদযাপন করা উচিত, এমনটা ভেবেই কি না, দুই বল পর আবারো আঘাত হানলেন সাকিব। উইকেটে পড়ে হালকা ভেতরে ঢুকে যাওয়া বলের গতিপথ বুঝতে না পেরে বোকা বনলেন মোহাম্মদ নবী, আফগানিস্তানের জয়ের আশাও তখন নিভুনিভু।

মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আফগান আশার প্রদীপে একটু একটু করে সলতে দিচ্ছিল সামিউল্লাহ শেনওয়ারি- নজিবুল্লাহ জাদরানের ৮ম উইকেট জুটি। মাত্র ৪৫ বলে ৫৬ রান তুলে ভয় দেখাচ্ছিলেন দুজনে। নজিবুল্লাহকে নিজের ৫ম শিকার বানিয়ে সে ভয়ও দূর করেছেন সাকিব। এর আগে আসগর আফগানকেও ডিপ মিড উইকেটে বানিয়েছিলেন সাব্বির রহমানের ক্যাচ।