আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ নয়

0
41

আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ না দিয়ে শিল্পে দ্রুততম সময়ে গ্যাস সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সংশ্রিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে স্থল ও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দিতে নিষেধ করেছেন। বরং শিল্পে বিশেষ করে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেড) যেসব কারখানা রয়েছে তাদের দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিতে বলেছেন। আর আবাসিকের জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়ানো তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী তিন বছরে সারা দেশে এলপিজিকে সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে বলেছেন।’

সকালে প্রধানমন্ত্রী এ মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো জ্বালানি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন। এর আগে গত বছরের ৯ ফেব্রেুয়ারি তিনি এ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। সেবার তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার ও উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের ২২ দফা নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও তার একটিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

এবারও তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। উল্লেখ্য এ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীন।

এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের অগ্রগতির বিষয়ে পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো পৃথক পৃথকভাবে তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে।

তবে উপস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তাবায়নে নিজেদের ব্যর্থতার বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে সেগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উপস্থাপনায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে দেখানো হয়েছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আহ্বান। কিন্তু এই দুটি প্রকল্পই গত পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে।

প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, গত এক বছরে ৭৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৫৬ মেগাওয়াট। গত এক বছরে ২৫৫ কিলোমিটার সঞ্চালন ও ২২ হাজার বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এসময়ে গ্রাহক বেড়েছে ১৬ লাখ। মাথাপিছু বিদ্যুৎ ভোগের পরিমাণ ২৪ কিলোওয়াট/ঘণ্টা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭২ কিলোওয়াট/ঘণ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এ সময়ে ১৩টি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ৬৬ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবাঢিত হচ্ছে।

উপস্থাপনায় পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ঘাটতি, কয়লা সরবরাহের অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ ঝুঁকিকে সরকরের লক্ষ্য পূরণে বাধা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ২০২১ পর্যন্ত ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বদলিয়ে নতুন জ্বালানি সাশ্রয়ী কেন্দ্র স্থাপন করতে বলেছেন। তিনি সৌর বিদ্যুতের ব্যhহার আরও বাড়াতে বলেছেন। তবে সোলার প্যানেলের কারণে কৃষি জমির যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে নজন রাখতে বলেছেন।

শেখ হাসিনা গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’

বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এখন নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বদ্ধ ভবন নির্মাণ না করে আলো বাতাস চলাচলের উপযোগী ভবন নির্মাণ করতে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

সরকার বিরোধী সহিংস আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, জ্বালাও-পোড়াও কেন করা হয় তা আামর বোধগম্য নয়।’

এসময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।