আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে দু’জন নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন

0
145

নগরীর পাহাড়তলী থানার অলংকার মোড়ে নিউ গোল্ডেন সিটি নামে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে দু’জন নারী ও বস্তাবন্দি যুবকের লাশপুরুষের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ তাদের পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছে।

পুলিশ ওই কক্ষে মৃত অবস্থায় থাকা পুরুষ সাইফুল ইসলামের (৩৫) পকেট থেকে একটি চিরকূট উদ্ধার করেছে। এছাড়া মৃত অবস্থায় থাকা নারী আজেদা বেগমের (৩২) পাশ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, সাইফুল ইসলাম ও আজেদা বেগম পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। সাইফুলের কাছ থেকে পাওয়া চিরকূটে লেখা আছে, তাদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া লেগে থাকত। জীবনযাপন অসহ্য হয়ে উঠায় সে স্ত্রীকে জবাই করে নিজে আত্মহত্যা করেছে।

শনিবার সকাল ১১টার দিকে নিউ গোল্ডেন সিটি হোটেলের ৪র্থ তলার ২০৫ নম্বর কক্ষ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে আটক করেছেন।

তবে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের আলামত সংগ্রহের জন্য লাশগুলো হোটেলেই রেখে দেয় পুলিশ। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে সিআইডির একটি টিম এসে ফরেনসিক আলামত সংগ্রহের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হোটেলে আসেন আজিয়া বেগমের মা রহিমা বেগম। তিনি জানান, আজেদা একটি বেসরকারী কোম্পানিতে নিম্ন পদে চাকুরি করেন। স্বামী সাইফুল নগরীতে রিক্সা চালায়।

সাইফুল তার গ্রামে একটি বাড়ি করছিলেন। এজন্য তার অনেক টাকার দরকার। টাকার জন্য সে সবসময় আজেদাকে নির্যাতন করত। মেয়ের সুখের জন্য ছয় মাস আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাইফুলকে ৮০ হাজার টাকা দেন আজেদার মা।

রহিমা বেগম জানান, সাইফুল আজেদার দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী গোলাম মওলার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সাইফুলের সঙ্গে এক বছর আগে বিয়ে হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৫টায় হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দু’জন একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত তাদের কক্ষ বন্ধ থাকায় পুলিশকে খবর দেন হোটেল ম্যানেজার।

পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে সাইফুলকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় এবং আজেদাকে জবাই করা অবস্থায় দেখতে পায়।

হোটেল রেজিস্টারে সাইফুলের পরিচয় লেখা আছে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার বাড়াই গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তারা চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন বলে উল্লেখ করেছিল।

তবে আজেদার মা রহিমা বেগম জানিয়েছেন, তারা স্বামী-স্ত্রী অলংকার এলাকাতেই থাকত।

হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া আজেদা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নাম মো.গোলাম মওলা লেখা আছে। মায়ের নাম লেখা আছে রহিমা বেগম। জন্ম সাল এক সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ এবং পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯৪৩১৩৮৫৩১৩০। ঠিকানা লেখা আছে ডিজেল কলোনি, পাহাড়তলী।

অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, কুমিল্লার বাড়ই গ্রামে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সাইফুলের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ঘটনায় আটক তিনজন হল, হোটেলের ম্যানেজার মো.রফিক, হোটেল বয় তারেক ও ফারুক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাহাড়তলী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।