সম্পত্তি দখল করতে আমেরিকা থেকে এসে মা ও তার বড় বোনকে খুনে অংশ নিয়েছে ছেলে। হত্যার পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্যদের কোরআন ছুঁয়ে শপথও করায়, যাতে এ ঘটনা কেউ প্রকাশ না করে।
নগরের খুলশী থানার আমবাগান ফ্লোরাপাস রোডের নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে মনোয়ারা বেগম (৯৭) ও তার মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকতা শাহ মেহেরুন নেসা বেগমকে (৬৭) খুনের ঘটনায় গ্রেফতার দুইজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (২৫ মে) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে গ্রেফতার হারুন অর রশিদ মুন্না (৩৯) ও গাড়িচালক মো. মাহফুজ (২৮) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে বাংলানিউজকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ খান।
শুক্রবার (২৪ মে) রাতে তাদের দুজনকে নগরের টাইগারপাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১৫ জুলাই নগরের খুলশী থানার আমবাগান ফ্লোরাপাস রোডে নৃশংসভাবে খুন হন মনোয়ারা বেগম (৯৭) ও তার মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকতা শাহ মেহেরুন নেসা বেগম (৬৭)। মেহেরুন নেসা রুপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন। কয়েকবছর আগে তিনি অবসরে যান। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
এ ঘটনায় মনোয়ারা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে খুলশী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ খান বলেন, ‘গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী-মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাসুদুর রহমান জড়িত। আমেরিকা থেকে দেশে এসে মা ও বোনকে খুন করে পরদিন আবার চলে গেছেন বলে জানিয়েছে তারা। হত্যার পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্যদের কোরআন ছুঁয়ে শপথও করায়, যাতে এ ঘটনা কেউ প্রকাশ না করে। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।’
ইলিয়াছ খান বলেন, ‘আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হারুন অর রশিদ মুন্না ও মো. মাহফুজ জানিয়েছে-শাহাবউদ্দিন সাবুর বাসায় বসে মাসুদুর ও মুশফিকসহ ছয়জন মিলে হত্যার পরিকল্পনা হয়। মাসুদুরের পরিকল্পনা ছিল-মায়ের কাছ থেকে খুলশীর ওই বাড়ির দানপত্র আদায় করা। পরে এসব সম্পত্তি শাহাবউদ্দিন সাবুর মাধ্যমে তিন কোটি টাকায় বিক্রির কথা ছিল।’
‘হত্যাকাণ্ডের দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদুর নিজেই বাসার দরজায় টোকা দিলে মেহেরুন্নেসা দরজা খুলে দেয়। এ সময় মেহেরুন নেসা বলেন, ‘তুই বিদেশ থেকে হঠাৎ দেশে কেন?’ পরে বাসার ভেতরে মাসুদুর মেহেরুন নেসার কাছ থেকে সম্পত্তির দুটি দলিলে সই নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেহেরুন নেসা সই দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তাকে গলাটিপে ধরে এবং পিঁড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। সবাই মিলে তাকে হত্যার পর মরদেহ ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে মেহেরুন নেসার মা মনোয়ারাকে হত্যা করতে চাইলে মাহফুজসহ কয়েকজন মাকে হত্যা না করার অনুরোধ করলে মাসুদুর বলে- ‘এই বুড়িটাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কী’। পরে মনোয়ারাকে গলাটিপে হত্যার পর তার মরদেহ পানির রিজার্ভ ট্যাংকিতে ফেলে দেওয়া হয়।’
ঘটনার মেহেরুন নেসার ভাইয়ের ছেলে মুশফিকুর রহিম ব্যাপ্তীকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে মুশফিকুর রহিম ব্যাপ্তী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। এ খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. মাসুদ রানা (৩৯) ও মো. শাহাবউদ্দিন ওরফে সাবু ওরফে মুছা (৩৭) নামে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।