আমি কাশ্মীরি, এটাই কি আমার অপরাধ

0
61

“যারা ওই পুরষ্কারটা দিল, তাদের সন্তানকে যদি আমার মতো জীপের সামনে মানব-ঢাল করে বসিয়ে রাখা হত?”
প্রশ্নটা করেছেন কাশ্মীরের যুবক ফারুক আহমদ ডার।
এপ্রিল মাসে মি. ডারকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের জীপের সামনে বেঁধে উপ-নির্বাচনের দিন ঘুরছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী ।
সে ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
তবে বহু মানুষ ভারতীয় সেনার ওই কাজকে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক মন্তব্যও করেছেন।
সে ঘটনা দু’দিন আগে আবারও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, যখন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত সেনা কর্মকর্তাকে সম্মানিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর মেজর লিতুল গগইকে ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে’ তার ধারাবাহিক অবদানের জন্য প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।
সে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মি. ডার বলছেন, “আমার কি এটাই অপরাধ যে আমি কাশ্মীরি? এতো দেখা যাচ্ছে ন্যায়বিচারকে কবর দেওয়া হচ্ছে! যে জুলুম করল, সে পুরস্কৃত হচ্ছে!”
যে সেনা কর্মকর্তা তাকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন, তার শাস্তির দাবী করছেন ফারুক আহমেদ ডার।
অন্যদিকে যে সেনা মেজর মি. ডারকে জীপে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই মেজর গগই অবশ্য বলছেন “যারা আমাদের দিকে সেদিন পাথর ছুঁড়ছিল, তাদের উস্কানি দিচ্ছিলেন ফারুক আহমেদ ডার। তাঁকে আটক করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।”
নতুন করে বিতর্কটা সামনে আসার পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন মেজর গগই।
মি. ডারকে জীপের সামনে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্তটা যে সঠিক ছিল, সেটা বোঝাতে গিয়ে মেজর গগই বলছিলেন, “যখনই আমার কর্মীদের আদেশ দিই যে মি. ডারকে ধরে জীপের সামনে বেঁধে রাখ, তখনই পাথর ছোঁড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আমরা ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম।”
“সেদিন অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল। যদি আমাকে তখন গুলি চালানোর আদেশ দিতে হত, তাহলে অন্তত ডজন খানেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল,” বলছিলেন মেজর গগই।
তবে মি. ডার প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে তিনি সেদিন উপ-নির্বাচনে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন কট্টরপন্থীদের ভোট বয়কটের ডাক উপেক্ষা করে। ভোট দিয়েছিলেন তিনি।
এখনও সেদিনের কথা মনে পড়লে আতঙ্ক গ্রাস করে মি. ডারকে।
“সেদিনের ঘটনার পরে আমার মাথা কাজ করছে না। আগে দিনে কাজ করে ৫০-১০০ টাকা আয় করতাম। সেদিনের পর থেকে তাও বন্ধ।”
সন্ধ্যে হলেই আতঙ্ক তাকে আরও যেন গ্রাস করতে থাকে, বলছিলেন মি. ডার।
“ওই কর্মকর্তাকে যখন সম্মানিত করা হয়েছে, তখন তিনি নিশ্চয়ই আবারও এই ক্যাম্পে আসবেন। আমার তো ভয় হচ্ছে ,এখন আমার কী হবে! তিনি ফিরে এলে আমার অবস্থা তো আরও কঠিন করে দেবেন,” বলছেন মি. ডার।
পুলিশ ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে। সেনাবাহিনীও আলাদা কোর্ট অফ এনকোয়ারি বসিয়েছে।
শ্রীনগরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বলছেন, সেই কোর্ট অফ এনকোয়ারির কাজ শেষ পর্যায়ে।
পুলিশের তদন্তও চলছে একই সঙ্গে।