ইনশাল্লাহ সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবো

0
128

সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মেয়র নাছির
%e0%a6%87%e0%a6%a8%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b9-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%ac-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9aচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৩ শত ৬০ কোটি টাকা বকেয়া, দুর্বল প্রশাসন এবং ব্যাপক অনিয়ম মাথায় নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে আমি লক্ষের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আগামী ৩ বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন করবো। এ ব্যাপারে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সাথে এক মতবিনিময়কালে মেয়র নাছির এসব কথা বলেন। সিটি কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, এর অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ব্যাপক তথ্য উপস্থাপন করে মেয়র আরো বলেন, নগরীকে ডাস্টবিনমুক্ত করে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন ও সবুজ জনপদে পরিণত করা হবে। মেয়রের সাথে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম. এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক এবং দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ।
চট্টগ্রাম নগরীকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহর হিসাবে গড়ে তুলতে সম্পাদকবৃন্দ সিটি মেয়রকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম.এ মালেক বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত খালগুলো খনন করতে হবে। চান্দগাঁও এলাকায় জবাইখানার জন্য নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত থাকলেও তাতে গার্মেন্টস পল্লী করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় অন্যত্র পর্যাপ্ত জবাইখানা নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে এবং প্রয়োজনীয় পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে সুপার কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় প্রকৃত লক্ষ অর্জন সম্ভব হবেনা। এখন আইটির যুগ, নবপ্রজন্মের দেশীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগালে সিঙ্গাপুরের মত শহর গড়ে তুলতে তেমন কষ্ট হবেনা। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোকে অবশ্যই আরো অত্যাধুনিক করে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বিউটিফিকেশনের নামে এমন কোন কাজ করা উচিত হবেনা যা রক্ষনাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া সুশীল সমাজের কথায় তেমন কর্ণপাত না করে যারা কাজের মানুষ তাদের পরামর্শ গ্রহণ করলে নগরীর অনেক উন্নতি হবে।
দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর বলেন, মোড়ে মোড়ে যেসব মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে তা দৃষ্টিকটূ এবং নিম্নমানের। এসব দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা জরুরি। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে ¯প্রীড ব্রেকার দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিউটিফিকেশন করতে গিয়ে বড় বড় নামফলক লাগানোর কারণে বাগানের সৌন্দর্যহানি হয়েছে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ বলেন, নগরীর ট্রাফিক সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। একটি স্টাডি টিম তৈরি করে সিগন্যাল লাইটগুলো চালু করতে হবে। পরিবহণ ব্যবস্থায় নিয়মনীতি নীতি না থাকায় নগরীতে অহেতুক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে আরো গতিশীল করতে হবে। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে একজন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। কারণ নবীন কোন কর্মকর্তার চেয়ে প্রবীণ অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদই পারেন সিটি কর্পোরশেনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাণ সঞ্চার করতে। এছাড়া এ খাতে যথাযথ তদারকি না থাকায় অনেক প্রবীণ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক অবহেলিত হচ্ছেন। একইভাবে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মগুলো আমলে নিয়ে দোষীদের শাস্তি দেয়া জরুরি। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে সম্পাদকদের পরামর্শগুলো শুনেন এবং নগরীকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময়কালে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এই নগরীকে বাসযোগ্য আধুনিক ও নান্দনিক নগরে পরিণত করতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। নগরীকে গ্রীণ ও ক্লিন সিটিতে রূপান্তরের প্রাথমিক পদক্ষেপে সমস্ত বিলবোর্ড, ওভারহেড, ইউনিপোল, মিনিপোল, মেগাসাইনসহ প্রায় ৫ হাজার অবৈধ সাইনবোর্ড কঠোরহস্তে উচ্ছেদ করেছি। বয়ভীতি ও নানা চাপের কাছে মাথা নত না করে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে নগরকে আবরণমুক্ত করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের সংবাদপত্রের সম্পাদকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিলবোর্ড আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে চট্টগ্রামের দৈনিক গুলোর সম্পাদকদের সাহসী ভূমিক অনস্বীকার্য।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি, দুর্গন্ধমুক্ত ফুটপাতের অবসান, সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ হকারমুক্তকরণ, সড়কবাতি নিশ্চিতকরণ, মশার উপদ্রব দূর সহ বেশকিছু সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমি আমার কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, হকারদের রুটি রোজগারের ব্যাপারে আমি সজাগ, তাদের এমন ব্যবস্থা করব যাতে নগরবাসীকে কোন অসুবিধায় না ফেলে তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেব। দায়িত্বগ্রহণের সময় চসিক আর্থিক ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে তিনি চসিককে সাবলম্বী করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে যে নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে তা খণ্ডন করে মেয়র বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিধি বিধানের বাইরে চসিক কর আদায়ের কোন সুযোগ নেই। হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণে বাড়ির মালিক নিজেই এসেসমেন্ট করে কর দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কেউ অতিরিক্ত কর আদায়ে চাপ প্রয়োগের কোন সুযোগ নেই। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর নির্ধারণের ধাপগুলোর বিস্তারিত বিবরণও প্রকাশিত হয়েছে।
মেয়র আরো বলেন চসিকের অন্যতম কাজ নগরকে পরিচ্ছন্নতা রাখা। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও বিশ লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ করেছি। বিগত ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দিনের পরিবর্তে রাতে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহে বিনামূল্যে বিন বিতরণ কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকভাবে ৭,৮, ১৫, ২২, ২৩ ও ৩১ নং ওয়ার্ডে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে এই পদ্ধতি চালু হবে। এই যুগান্তকারী প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন হলে রাস্তার পাশে আর ডাস্টবিন দেখা যাবে না। এতে নগরীর পরিবেশ অনেক উন্নতি হবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। এই প্রকল্পে অতিরিক্ত ২ হাজার সেবক ১০ লক্ষ বিন ও ২ হাজার রিকশা ভ্যান প্রয়োজন হবে। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার বিন সংগ্রহ হয়েছে, ভ্যান মিলেছে ৭০০ মাত্র। এ খাতে বেতন ভাতা লাগবে বছরে প্রায় ২৮.৫০ কোটি টাকা।
মেয়র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত নানা পরিকল্পনা তুলে ধরে সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে নগরবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি চসিক’র সমস্ত কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানান। চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অটোমেশনের আওতায় এনে শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
চসিক’র জেনারেল হাসপাতালকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করে সার্বক্ষনিক সেবা গ্রহণের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। তাছাড়া এই হাসপাতালের দন্ত বহিঃবিভাগ ম্যাটস কোর্স চালু ও প্রতিবন্ধী কর্ণার স্থাপনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। এছাড়া চসিক’র স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর সেবার মান বাড়াতে সম্প্রতি ৭৭ জন ডাক্তার নার্স মিডওয়াইফ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুঃস্থদের চিকিৎসা নিতে এখন রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে।
মেয়র নাছির সম্পাদকদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে বলেন, আমি নগরের সন্তান। আপনারা যখন লেখনির মাধ্যমে সমস্যার কথা তুলে ধরেন তখন আমারও কাজ করতে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কিন্তু এত সমস্যা ইচ্ছে থাকলেও রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। তবে যে দায়িত্ব নগরবাসী আমাকে দিয়েছেন তা শতভাগ সততার মধ্যদিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবো।
মেয়র ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, এই নগরী অচিরেই সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগরে পরিণত হবে। নগরীর ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের যাতায়াতের জন্য ২০টি এসি বাস চালু করা হবে। জলাবদ্ধতা ১৯৯৫ সালের প্রস্তাবিত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান আরো যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন করা হবে। কালুরঘাটে গার্মেন্টসপল্লী, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টস স্থাপন, অত্যাধুনিক নগরভবন নির্মাণ, বাকলিয়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস কমপ্লেক্স-এ রূপান্তর, জাইকার সহায়তায় অত্যাধুনিক সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন, নগরীর বিদ্যমান অব্যহৃত পাহাড় সমূহে পর্যটন সুবিধার সৃষ্টি, ২৬ খাল খনন, পাম্প হাউজসহ স্নুইস গেইট নির্মাণ, নগরীর যেকানে মাঠ সংরক্ষণও অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দিঘি ও জলাশয় সংরক্ষণ পাহাড়ে বসবাসরত বস্তিবাসীদের অন্যত্র পুর্নবাসন, ইনার রিং রোড স্থাপন করে যানজট নিরসন, নগরীর সমস্ত সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন, প্রতিটি সড়কের পাশে বাগান ও বিউটিফিকেশনসহ এই নগরীকে বাসযোগ্য করার বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা মেয়র তুলে ধরেন।