ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি

0
187

মধ্যপন্থী ধর্মীয় নেতা ড. হাসান রুহানি কট্টরপন্থী প্রার্থীদের পেছনে ফেলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের hasan ruhane১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। আগে এক জনমত জরিপে জানা গিয়েছিল, দেশটিতে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোট ছাড়াই সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। রুহানি ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। শুক্রবার ইরানে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড় এতই বেশি ছিল যে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা কয়েকবার বাড়িয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত করা হয়। এবারের নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আইআরআইবি, প্রেসটিভি
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে একমাত্র রুহানি মধ্যপন্থী, বাকি সবাই কট্টরপন্থী। মোট ৫ কোটি ভোটের মধ্যে ৫২ লাখের বেশি গণনার পর রুহানির পক্ষে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে সংবিধান অনুযায়ী শীর্ষ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে ২১ জুন দ্বিতীয় দফা ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রুহানি তা এড়াতে পেরেছেন। রুহানির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের রাজধানী তেহরানের কট্টরপন্থী মেয়র মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ পেয়েছেন মাত্র ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট। কট্টরপন্থী অন্য প্রার্থীদের অবস্থা আরো শোচনীয়। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে সংস্কারবাদী প্রার্থী মোহাম্মদ রেজা আরেফ রুহানির পক্ষে নিজ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে তার পালে জোর হাওয়া লাগে। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও আলি আকবর হাশেমি রাফসানজানি তার হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। বিপরীতে কট্টরপন্থীরা একক কোনো প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হন, আর তাতেই কট্টরপন্থীদের এমন ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশটির এই নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবাই সতর্ক নজর রাখছে দেশটির ওপর। কারণ পশ্চিমের কট্টর সমালোচক মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এই নির্বাচনের পর বিদায় নেবেন। কিন্তু নতুন যিনি এলেন, সেই ড. রুহানি কি বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখবেন? নাকি সরে আসবেন পশ্চিমাদের চাপে? দেশটির পররাষ্ট্রনীতি কি আগের মতোই থাকবে, নাকি বদলাবে? এসব নিয়েই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে পশ্চিমা দুনিয়ায়। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দেশটির অবস্থান ভবিষ্যতে বদলালেও বিতর্কিত পরমাণু ইস্যু থেকে ইরানের সরে আসার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সবধরনের সিদ্ধান্ত তাদের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্দেশনা এবং পরামর্শ মতেই সম্পাদন করা হয়। ফলে ইরানের অবস্থান আগের মতোই থাকছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ড. হাসান রুহানি ইরানের সেমনান প্রদেশের সোরখেহ শহরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মীয় পরিবারের সন্তান রুহানি ১৯৬০ সালে সেমনানের ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রে ইসলামের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। এক বছর পড়ার পর তিনি ইরানের পবিত্র নগরী কোমে চলে যান। ১৯৬৯ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন হাসান রুহানি। তিন বছর পর আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো কালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ এবং পিএইচডি লাভ করেন হাসান রুহানি।
তরুণ বয়সেই রুহানি ইরানের তৎকালীন একনায়ক রেজা শাহের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইমাম খোমেনি ১৯৭৯ সালে ফ্রান্স থেকে নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসার সময় হাসান রুহানি ইউরোপে রাজনৈতিকভাবে তৎপর ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর তিনি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধারে পাঁচবার তিনি এমপি ছিলেন। রুহানি পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার এবং প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া, ইরানের নীতিনির্ধারণী পরিষদ এবং বিশেষজ্ঞ পরিষদেরও সদস্য তিনি। পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পরিষদের কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রেরও পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।