ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা ডন জিয়াবুল

0
62

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ইয়াবা মহাজন বার্মাইয়া জিয়াবুল পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে কুতুপালংয়ের প্রভাবশালী এক পরিবারের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে রয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ৮ টায় কুতুপালংস্থ ভাড়াবাসায় জিয়াবুলকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু গ্রেফতার এড়াতে জিয়াবুল আগে ভাগেই আত্মগোপনে চলে যায়। ঐদিন দিনঅবধি রাত গভীর পর্যন্ত কুতুপালংয়ের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির মাধ্যমে জোর তদবীর চালায় পুলিশী গ্রেফতার রক্ষা ও মামলা থেকে রেহাই পেতে। জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ গত সোমবার দিবাগত রাত ৯ টায় মিয়ানমারের রাইম্যাখালী থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান নিয়ে তুমব্রু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে রাতে পাহাড়ি পথে আসছিল নুরুল ইসলাম নামক মিয়ানমারের এক যুবক। ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের একটি দল গোপন সুত্রে খবর পেয়ে ঘুমধুম রাবার বাগান সংলগ্ন উৎপেতে থেকে ইয়াবার চালান বহনকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। ইয়াবাসহ আটক মিয়ানমারের তুমব্রু এলাকার নাগরিক নুরুল ইসলামের দেহ তল্লাশি চালিয়ে ১০০০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আটক মিয়ানমার নাগরিক নুরুল ইসলাম সীকারোক্তিতে বলেন ইয়াবা গুলো কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের অবস্থানকারী জিয়াবুল হকের। সে কুতুপালং বাজারে দ্ধিতল একটি বিল্ডিংয়ের উপর তলায় ভাড়ায় বসবাস করে। তার স্ত্রী হালিমা রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের হলেও কুতুপালংয়ে ভাড়া বাসায় থাকে। যার এমআরসি নং- ২০৩৫২, ব্লক- ডি, শেড নং- ১৯, রুম নং- ৪/৫। জিয়াবুলের পিতার নাম শামশুল আলম হলেও কখনো মোঃ হাকিম, আবদুল হাকিম, বলাইয়া, বলা সহ একাধিক ছন্দ নাম ব্যবহার করে থাকে। রেজিষ্ট্রার্ট রোহিঙ্গা শিবিরে রেশন বোর্ডে পিতার নাম লিপিবদ্ধ করেছে দিল মোহাম্মদ, মাতার নাম নুর আয়েশা। আশ্বর্য জনক হলেও সত্য কখনো চেহেরায় দাড়ি, কখনো দাড়ি ছাড়া। ওই জিয়াবুল এক সময় মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে সফর করে রোহিঙ্গাদের নামে অর্থ সংগ্রহ করতো। বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে এদেশে চলে এসে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মরণ ঘাতক ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিল। যেখানে যে সময় অবস্থান করে,সেখানকার প্রভাবশালী লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতো। ব্যবহার করতো ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী লোকজন। স্থানীয়দের ছত্রছায়ায় থাকে দাপিয়ে বেড়ায় রোহিঙ্গা জিয়াবুল। রাত গভীরেও ব্যবহার করে মোটর সাইকেল। ইতিপূর্বে তার বৃহৎ ইয়াবার চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও একটি প্রভাবশালী চক্রের তদবিরে মোটা টাকার বিনিময়ে ইয়াবা বাহী নোহা গাড়িটি কৌশলে ছাড়িয়ে আনে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ধারাবাহিকতায় কুতুপালং বাজারে অবস্থান নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছিল। গত সোমবারে জিয়াবুলের ইয়াবার বৃহৎ চালান আসার খবর পেয়ে পুলিশ আগে থেকে জংগলে উৎপেতে থাকে। ভাগ্যিস ছোট চালান পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বৃহৎ চালান পিছন দিক থেকে কৌশলে সটকে পড়ে। জিয়াবুলের ইয়াবার চালান কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যে সময় ঢুকবে, তখনই ঘুমধুম, তুমব্রু ও কুতুপালং এলাকার বহু ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে প্রশাসনের টহল দলের গতিবিধি নজরদারি লক্ষ্য করতো। ঠিক সোমবারের ঘটনাও একই হলেও বৃহৎ ইয়াবার চালানসহ জিয়াবুল এবং তার সিন্ডিকেটের লোকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।আটক করা হয় জিয়াবুলের ইয়াবার চালান বহনকারী মিয়ানমার নাগরিক নুরুল ইসলাম কে। পরদিন মংগলবার আটক ইয়াবার বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং -০৫ /১৭ ,তারিখ -২৫ /০৪ /২০১৭ ইংরেজী। ধারা ১৯৯০ইং সনের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১)এর ৯ (খ) তৎসহ বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারা। এতে ইয়াবাসহ আটক মিয়ানমারের তুমব্রুর আনু মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম ও মিয়ানমারের তুমব্রুর রাইম্যাখালী খাল কাটা প্রজেক্ট সংলগ্ন মোঃ হাকিম ওরফে শামসুল আলম প্রকাশ বলা “র ছেলে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির বাজারে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত জিয়াবুল হক কে আসামী (পলাতক) করা হয়। আটক আসামী নুরুল ইসলাম কে মংগলবার ১হাজার পিচ ইয়াবা সহ নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সোপর্দ করা হয় বলে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ইনচার্জ মোঃ এরশাদ উল্লাহ জানান।উক্ত জিয়াবুল দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র ,জংগী তৎপরতা ও ইয়াবা পাচারে তৎপর ছিল। রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক ইয়াবা আটকের মামলায় আসামী হলেও থেমে নেই তার অপকর্ম। সে মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু থানার ঢেকিবনিয়া ইউনিয়নের তুমব্রুর রাইম্যাখালী খাল কাটা প্রজেক্ট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জিয়াবুল হক। তার বাবা মোঃ হাকিম ওরফে শামসুল আলম প্রকাশ বলা। জিয়াবুল কিশোর বয়সে এপার বাংলায় পাড়ি দেয়। উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা -মুুছনী রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছে জিয়াবুলের আত্মীয়। এদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে না ফেরার পক্ষে জংগী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা যুবক জিয়াবুল হক। বহির্বিশ্বে বসবাস করা রোহিঙ্গা ও সাবেক আরএসওর সমর্থিত এনজিওদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে মাঝ পথে মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ পাড়ি দেওয়া যুবক এক সময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠাতো জিয়াবুল। তার পাঠানো অর্থ ব্যয় করা হতো জংগী রোহিঙ্গাদের রসদ সামগ্রী প্রদান, জংগী রোহিঙ্গাদের জংগী প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করার কাজে। এভাবে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে জিয়াবুল হয়ে যায় দুধর্ষ রোহিঙ্গা নেতা। তার সাথে এদেশের জঙ্গি নেতা হাফেজ সালাউল, নাইক্ষ্যংছড়ি এক জঙ্গি সম্পৃক্ত আওয়ামীলীগ নেতা ও ঘুমধুম ইউনিয়নের আরেক আওয়ামীলীগ নেতা সহ অনেকের সাথে উক্ত জিয়াবুলের দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে। সে আন্তর্জাতিক ভাবে কোটি -কোটি টাকা রোহিঙ্গাদের জন্য সংগ্রহ করে এদেশে চলে আসে। জংগী তৎপরতা থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা জংগীদের বেতন -ভাতা ও অস্ত্রের যোগানদাতা বনে যান। মিয়ানমার সরকার বিরোধী বলয় সৃষ্টি করতে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক গড়ে তুলেন অনন্ত ২ শতাধিক রোহিঙ্গার সমন্বয়ে ইয়াবা সিন্ডিকেট। মিয়ানমার ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক ইয়াবার বিশাল চালান মজুদ করে এদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে থাকে জিয়াবুল। খুব অল্প সময়েই কুতুপালংয়ের প্রভাবশালী চক্রের আশ্রয় -প্রশয়ে থেকে চালাতে থাকে হরদম ইয়াবা ব্যবসা।ইয়াবা ব্যবসার আয় থেকে লাখ -লাখ টাকা ব্যয় করা হয় জংগী রোহিঙ্গাদের জন্য। এখানকার প্রভাবশালী লোকজনের সাথে চলাফেরা করতে ব্যয় করা হয় লাখ-লাখ টাকা। কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ট রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মোঃ শামশুদ্দোজা জানান, জিয়াবুল নামক একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারে। ইয়াবা সংক্রান্ত জড়িত কে আমার কাছে চিহ্নিত নেই। তবে দেশদ্রেুাহী কাজে কোন রোহিঙ্গা জড়িত থাকলে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হউক। এদিকে কুতুপালং অবস্থান করা জিয়াবুল নিজের অপকর্ম নিবিঘœ করতে কতিপয় প্রভাবশালী লোকজন, পাতি মাস্তান, রাজনৈতিক ক্যাডার, প্রশাসন কতিপয় লোকজনদের মাসোহারা দিয়ে থাকে। আর এ সকল মাসোহারা প্রদানে কুতুপালংয়ের একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী পরিবার জড়িত রয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত নয় বলে দাবী করেন।

উখিয়ার ব্যাংক গুলোতে ছোট গ্রহন না করার অভিযোগঃ বিপাকে ব্যবসায়ীরা
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি তারিখ: ২৮/০৪/২০১৭ইং
উখিয়ার বানিজ্যিক ব্যাংক গুলো খুচরা টাকা ও সামান্য ছেঁড়া নোট গ্রহন না করায় চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারন ব্যাংক গ্রাহকরা, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের মাধ্যে বাকবিতণ্ডা সহ অপ্রীতিকর পরিস্হিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলায় মোট বানিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে ৭টি তৎমধ্যে উখিয়া সদরে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও পুবালী ব্য্ংাক, জন বহুল ব্যস্ততম ষ্টেশন কোটবাজারে রয়েছে রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্ষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মরিচ্যা বাজারে রয়েছে একমাত্র অগ্রণী ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় কোটবাজার ভিক্তিক ব্যাংক সমূহে।
সারাদেশের ব্যাংক গুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১টাকার নোট সহ সকল রাষ্ট্রিয় নোট লেনদেনের বিধান থাকলেও স্হানীয় গ্রাহকদের অভিযোগ উখিয়ার কোন ব্যাংকই বিশ টাকার নিচের খুচরা নোট গুলো ব্যাংক কতৃপক্ষ গ্রহন করেনা। অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ এক লক্ষ টাকা জমাদান কালে সর্বোচ্ছ ২হাজার টাকার ২০ টাকার নোট নিলেও ১০,৫,২,ও ১টাকার নোট কোন অবস্হাতেই গ্রহন করছেনা, যার কারনে স্হানীয় ছোট, বড় সব ব্যবসায়ীই চরম বিপাকে পড়ছে বলে একাধিক ব্যাংক গ্রাহক জানান।
কোটবাজারের টোবাকো ডিলার মমতাজ উদ্দিন, পান দোকান মালিক আবু বাক্কর, বিস্কোট ডিলার আবছার উদ্দিন সহ অনেক ব্যাংক গ্রাহক ক্ষোভের সাথে বলেন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে, হাট বাজারে পাইকারি, খুচরা মালামাল বিক্রি করে সকালে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলেই হয়রানীর শিকার হতে হয়, প্রতিদিন অতি কষ্টের বিনিময়ে ছোট নোট নিয়ে অপরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বড় নোট করে ব্যাংকে যেতে হয়। কোন মতেই ব্যাংক গুলোতে বিশ টাকার নিচের ছোট নোট গ্রহন করাতে পারিনা। উখিয়া উপজেলা ট্রাক চালক সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ শাহজাহান বলেন, দেশে প্রচলিত সকল নোটই রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর এ সকল নোট দিয়েই দেশে ব্যবসা-বানিজ্য, লেনদেন হয়ে আসলেও উখিয়ার ব্যাংক গুলো যদি ছোট নোটের লেনদেন বন্ধ করে দেয় তাহলে ঐসব টাকার নোট নিয়ে দেশের জনগন কোথায় যাবে? কোথায় গিয়ে ঐ নোট লেনদেন করবে? ছোট নোট গুনে নেয়া ঝামেলার অজুহাতে ব্যাংক কতৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়ছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে গ্রাহকের অভিযোগ অস্বীকার করে কোটবাজার ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন আমরা গ্রাহকের সমস্ত নোট সাদ্বরে গ্রহন করে থাকি তবে ছোট নোট গুলো একটু কম দেয়ার জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়। একই কথা বললেন পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসাইন, তিনি বলেন দেশের কোন ব্যাংক অতিরিক্ত ছোট নোট নেয় না, আমরা যদি নিয়ে তা দিতে না পারি তাহলে কি ভাবে নেব, বর্তমানে আমাদের ব্যাংকে প্রচুর ছোট নোট পড়ে রয়েছে, যা কোন গ্রাহক গ্রহন করছেনা সুতারাং আমাদের অতিরিক্ত ছোট গ্রহন করা সম্ভব নয়, নিয়মিত গ্রাহকদের কখনো ফেরত দেয়া হয়না।