ঈদগাঁওর শামসুল আলম পারিশ্রমিক চাইতে গিয়ে খুন

0
87

সেলিম উদ্দীন,ঈদগাঁও,কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও জালালাবাদে পারিশ্রমিক চাইতে গিয়ে শামসুল আলম নামের এক শ্রমিক পাওনাদারের হাতে খুন হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাইপো বাদী হয়ে ৮জনকে এজাহার নামীয় ও ৪/৫জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কয়েকজনকে আসামী করায় এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর দাবী, নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক এবং খুনীর যথাযথ শাস্তি চাই এলাকাবাসী। মামলা দায়েরের ৮দিন পেরিয়ে গেলেও একমাত্র আসামী নুরুল হক ছাড়া বাকীরা গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বাদীপক্ষ।
প্রাপ্ত তথ্যে ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শামসুল আলম হত্যার অজানা কাহিনী। বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাহার ছড়া এলাকার মৃত আবদুর রহমান গংয়ের ওয়ারিশ সূত্রে ৩ কানি জমি রয়েছে (তার মধ্যে খাসও) বাহার ছড়া ও ফরাজী পাড়ার মধ্যবর্তী ধানী জমিতে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তা ভোগ করে আসছিল মৃত আবদুর রহমানের পুত্র আবছার। এরই মধ্যে জায়গা জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ফরাজী পাড়ার ক্ষমতাধর এক ব্যক্তির। তারা একপর্যায়ে ২০১৫ সালে ঐ জমিটুকু দখলের চেষ্টা চালায়। জমির প্রকৃত মালিক আবছার উক্ত জমি দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে মৃত শামসুল আলমসহ আরো ১৫/২০জনকে চুক্তিতে ভাড়া করে। এসময় চুক্তি অনুযায়ী জমিগুলো বিক্রি হলে ২ লক্ষ টাকা না হয় আধা কানি জমি দেওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে আবছার গোপনে জমিগুলো ফরাজী পাড়ার মোর্শেদ ফরাজী ও বায়েজিদ নামে অন্য এক ব্যক্তিকে রেজিষ্ট্রিমূলে বিক্রি করে দেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শামসুল আলম গংয়ের ব্যক্তিরা আবছারকে চাপ সৃষ্টি করে টাকার জন্য। আবছার আজ দেব কাল দেব বলে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এরই মধ্যে জমি ক্রয়কারী মোর্শেদ ফরাজী জালালাবাদ পাবলিক স্কুলের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেয় শামসুল আলমগং।
তাদের দাবী, চুক্তি অনুযায়ী হয়ত টাকা না হয় জমি। কিন্তু আইনী বাধ্যকতায় ক্রয়কৃত জমির মালিকদের কাছ থেকে কিছুই না পাওয়ার কথা। এ জমি নিয়ে ২০১৬ সালেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পারিশ্রমিকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে শামসুল আলমগং। ঘটনার দিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে বাহারছড়ায় জহির আহমদের দোকানে মোবাইল চার্জে দিয়ে এক পাশে বসেছিল আবছার। খবর পেয়ে শামসুল আলম গংয়ের ইসলামের পুত্র জিল্লু, অংকুর ছেলে রাসেল নামের ২ ব্যক্তি মৃত শামসুল আলমকে ডেকে আনে। এসময় চুক্তির টাকার জন্য বাদানুবাদ হলে আবছারকে উপর্যুপরী মারধর করে তারা।
স্থানীয় মনজুর, বেলাল, জহির, ইব্রাহিম নামে ৪ প্রত্যক্ষদর্শী তাদের মারামারির ঘটনাটি নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আবছারকে দোকানে বসিয়ে রাখে এবং শামসুল আলম গংয়ের ব্যক্তিদ্বয়কে সরিয়ে দেয়। তারপরও ক্ষান্ত হননি শামসুল আলম। দলবল নিয়ে উঁৎপেতে থাকে মাঝপথে। আবছার বাড়ী ফেরার জন্য বের হলে মৃত গুরা মিয়ার পুত্র নুরুল হককে চাকু দিয়ে আঘাত করে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় শামসুল আলম আবছারকে ধরে রাখার চেষ্টা করলে তাকেও উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে পরদিন তাকে দাফন করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাইপো শাহ আলমের পুত্র আসকর আলী বাদী হয়ে প্রথমে একটি এজাহার তৈরি করে। ঐ এজাহারের কপিটি স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করার পর ৪নং আসামী মাষ্টার আমান উল্লাহ ফরাজীর পুত্র মোর্শেদ ফরাজীকে বাদ দিয়ে পুনরায় আরো একটি এজাহার দায়ের করে। এতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কয়েকজনকে আসামী করায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি উত্তেজনাও বিরাজ করছে।
এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক লোক জানান, প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। উক্ত মামলায় মৃত রশিদ আহমদের পুত্র ছৈয়দ নুর ও তার পুত্রকে আসামী করা হয়েছে মামলার বাদী আসকর আলীর মামা রমজান সওদাগরের সাথে দীর্ঘদিন ধরে তাদের জমির বিরোধ রয়েছে। আজিজুল হককে আসামী করা হয়েছে গত ২ মাস পূর্বে নির্মাণাধীন জালালাবাদ পাবলিক স্কুল থেকে রড চুরি করে মৃত শামসুল আলম ও জাফর আলম নামে ২ ব্যক্তি। তারা রডগুলো পাশর্^বর্তী ইউনিয়নে বিক্রিকালে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয়রা। পরে পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আজিজুল হক ও ঐ রডগুলো উদ্ধার করতে গিয়েছিল। এসময় শামসুল আলমকে গালিগালাজ ও করছিল বলে তাকে উক্ত মামলায় আসামী করা হয়েছে।
অনুরোপ ঐ জায়গাগুলো কেনার কারণে মাষ্টার দিল মোহাম্মদের পুত্র বায়েজিদকেও আসামী করা হয়েছে। জাবের নামের যাকে আসামী করা হয়েছে তার সাথে মৃত শামসুল আলমের ভাইয়ের সাথে মারামারির ঘটনায় আরো একটি মামলার বাদী হওয়ায় বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে অনেক্ইে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নুরুল আজিম, আবদুর রশিদ নামের আরো কয়েক জানান, ঘটনার দিন আজিজুল হক নামের যুবকটি এলাকার ৩৫/৪০ জন লোক নিয়ে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছিল্ তারপরও প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে তাকে আসামী করা হয়েছে। অপরদিকে পরিশ্রমের মূল্য চাইতে গিয়ে নির্মমভাবে খুন হওয়া শামসুল আলমের খুনী আবছারের ফাঁসি দাবীসহ ঘটনায় জড়িত সকলের শাস্তি দাবী করেন এলাকাবাসী।
তাদের মতে, সারা বছর কষ্ট করে তার জমিগুলো রক্ষা করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিল নিহত শামসুল আলম। এভাবেই পরিশ্রমের মূল্য চাইতে গিয়ে খুন হওয়া বড় বেদনাদায়ক। এ বিষয়ে মামলার বাদী আসকর আলীর সাথে কথা হলে কাউকে হয়রানীমূলক আসামী করা হয়নি বলে জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক প্রকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান।