ঈদের ছুটিতে বন্দরে কনটেইনার জট

0
151

ঈদের ছুটি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ জমে গেছে। ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস ধারণক্ষমতার ইয়ার্ডে বৃহস্পতিবার কনটেইনার ছিল ৩৩ হাজার ৯৪৯ টিইইউএস। আর মাত্র ৩ হাজার কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত হয়ে যাবে। বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, কনটেইনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। দ্রুত এসব কনটেইনার ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরগামী ও বন্দর ত্যাগ করা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা দরকার ছিল। কিন্তু তা না করায় বন্দরে বেড়ে গেছে কনটেইনার জট। সাময়িক নিষেধাজ্ঞার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে আমদানি ও রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানকে। বন্দরে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে।

কনটেইনার জটঈদে ঘরমুখো যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রোববার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। শনিবার নাগাদ যানবাহন চলাচল শুরু হতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। এসব পণ্যবাহী যানবাহনের দুই-তৃতীয়াংশই চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান। অন্তত প্রতিদিন ৫০০ রডবাহী ট্রাকও চলাচল করে এ মহাসড়কে। দেশের বড় বড় রি-রোলিং ও অটো স্টিল মিলগুলোর বেশিরভাগের অবস্থান চট্টগ্রামে। তাই মিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে রড পরিবহন করা হয় ট্রাকে করে। কিন্তু চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার বোঝাই কোনো ট্রাক-কাভার্ডভ্যান বের হচ্ছে না। আবার রফতানি পণ্য নিয়ে কোনো ট্রাক-কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করছে না। পাশাপাশি রডবাহী ট্রাক চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি। আগে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ টিইইউএস থেকে ৩ হাজার ৫০০ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া হতো। এখন ডেলিভারি নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে শুধু খালি কনটেইনার ছিল ৫ হাজার ৮৫৬ টিইইউএস। ফলমূলবাহী রিফার কনটেইনার ছিল ১ হাজার ৫৬৮ টিইইউএস। বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) সব জেটিতেই ছিল জাহাজ। বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয় ৪ হাজার টিইইউএসের কিছু বেশি। আর জেটিতে থাকা জাহাজে কনটেইনার বোঝাই করা হয় প্রায় ২ হাজার টিইইউএস। কিন্তু কনটেইনারগুলো নামানোর পর কোনো গতি হচ্ছে না। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ভর্তি করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি কর্মচারী সঙ্কটের কথা বলে চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশের কোনো প্রাইভেট আইসিডিতে কনটেইনার গ্রহণ করা হচ্ছে না। সব মিলে বন্দর ইয়ার্ডে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সারোয়ার জানান, কনটেইনার ডেলিভারি কমে গেলেই বন্দরে জট বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। আমদানিকারকরা আগেভাগে কনটেইনার নিয়ে গেলে এ অবস্থা হতো না। তিনি জানান, জট এড়াতে দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি শুরু করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফের ব্যাপক হারে পণ্য ডেলিভারি নেয়া শুরু হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাইভেট আইসিডিতে কনটেইনার গ্রহণ কমে যাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন এক আইসিডি মালিক। তিনি জানান, প্রাইভেট আইসিডিগুলোতেও কনটেইনার রাখার জায়গা নেই। আবার বন্দর থেকে কনটেইনার গ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। এ অবস্থায় বন্দর ইয়ার্ডে জট লাগলেও তাদের করার কিছুই নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদের একদিন আগে ও ঈদের পরের দিন ইয়ার্ডে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে। শুধু ঈদের দিন কাজ বন্ধ ছিল। অর্থাৎ কনটেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। বহির্নোঙরেও বড় জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারেজ হয়েছে। কিন্তু ডেলিভারি বন্ধ থাকায় বন্দর ইয়ার্ডে জট পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।