ঈদের পর মাঠে নামতে নারাজ জামায়াত

0
72

:: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ::
>খালেদা জিয়ার ডাকে ঈদের পর সরকার পতন আন্দোলনে মাঠে নামতে নারাজ জামায়াত। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে দলটির।

জামায়াতের ঘাড়ে ভর করে আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার আর কোন সুযোগ বিএনপিকে দিতে রাজি নন তারা, জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেল।

জামায়াত সূত্র বলছে, দলের জন্য আপাতত স্বস্তিকর এই পরিবেশে অহেতুক আন্দোলন করে কেন অস্বস্তিকর করবো। এছাড়া বিএনপি যেখানে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি সেখানে এই মুহূর্তে বির্তকিত হলেও নির্বাচিত সরকারকে কীভাবে ফেলবে তারা ?

দলটি নেতারা আরও বলছেন, ঈদের পর সরকার পতন আন্দোলনের নামে আইওয়াশ করছে বিএনপি। সরকার পতন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও যোগ্যতা কোনটিই নেই দলটির।

তারা বলছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন আন্দোলনে সব সহিংসতার দায় এককভাবে জামায়াতের ওপর্ এসে পড়ে। সব সহিংসতার জন্য জামায়াত দায়ী এমন ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপিকে সুষ্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিএনপি ওই সময় জামায়াতের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো সরকারের সাথে সূর মিলিয়ে সহিংসতার দায় জামায়াতের দিকে ঠেলে দেয়। বিএনপি এমন আচরণে তখন ক্ষুব্ধ হয়েছিলো জামায়াতের শীর্ষ মহল।

এর পর থেকেই বিএনপি সাথে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে জোটের অন্যতম এই দলটির। যা আজ অবধি কাটেনি।

জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতারা জানান, আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকেও আমাদের ‘জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী’ দল হিসেবে দেশে-বিদেশে সরকারের সাথে প্রচার করলো বিএনপি। এই বিষয়টি আগামীতে আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া হবে।

হোটেল সোনারগাঁয়ে দলটির ইফতার মাহফিলে নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্যের সাথে সম-সাময়িক রাজনীতি নিয়ে কথা হয়।

তিনি বলেন,পশ্চিমাদের কথা শুনে বিএনপি এতোদিন আমাদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলো। এখন আন্দোলনের সময় আসছে আর আমাদের কাছে টানা শুরু হয়ে গেছে। জামায়াত আর দাবার গুটি হবে না বলেও জানান তিনি।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বাচনোত্তর প্রথম গণসমাবেশটি ছিল ১৮-দলীয় জোটের। কিন্তু সেখানে জামায়াতকে আসতে বারণ করা হয়।

‘নির্বাচন ঠেকাতে আমরা কি মাঠে ছিলাম না’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাহলে সেদিন কেন আমাদের সমাবেশে আসতে দেওয়া হলো না?’

এমনকি শেষ পর্যন্ত মাঠে নামলেও পুরনো হিসাব নিকাশ মিলিয়ে জামায়াতকে আগের চেহারা দেখা যাবে না এমন আভাস দিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।
শিবিরের কার্যনির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য বলেন, আন্দোলনে জামায়াত থাকবে কি থাকবে না সেটা নীতি-নির্ধারক মহল বলতে পারবে। তবে আমার ধারণা বিএনপিকে আরো গুছিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।

‘জামায়াত কেন গায়ে পড়ে আন্দোলন করবে’ প্রশ্ন রেখে বলেন, জামায়াত নেতাদের বিচারের সময় একটি বিবৃতিও বিএনপি দেয়নি। এছাড়া ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর দ্বারপ্রান্তে এসেও নিজেদের ব্যর্থতায় হোঁচট খেয়ে এখন কীভাবে সরকারকে ফেলে দিবে।

জামায়াতের এই মুহূর্তে আন্দোলন করার কোন প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন না শিবিরের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

জামায়াতের সূত্রমতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত গত সাড়ে ৩ বছরের অধিক সময় ধরে বিএনপির সব ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচির অগ্রভাগে থাকলেও এবার আর পুরনো সেই রূপ দেখাতে রাজি নয় দলটি।

দলটি মনে করছে, এর আগে জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিএনপির পুরো আন্দোলন ছিল জামায়াতনির্ভর। ফলে সরকার বিএনপি জোটের আন্দোলন-কর্মসূচিকে প্রতিহত করার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ভার সামলাতে হয়েছে জামায়াতকে। এতে দলটির শত শত নেতাকর্মীকে হতাহত ও গ্রেফতারের শিকার হতে হয়েছে। তাই আগামীর যে কোনো কর্মসূচিতে এ বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে মাঠে নামবে জামায়াত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি জোটের ঘোষিত প্রতিটি আন্দোলন-কর্মসূচিতে জামায়াতের যে ভূমিকা ছিল, তার সামান্যতম ভূমিকা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল না। দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন অনুপস্থিত। কিন্তু জামায়াত নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আন্দোলন করেছেন।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে আন্দোলনের বিএনপি নেতাকর্মীরা যদি জামায়াতের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করতেন, তাহলে জোটের আন্দোলনে আরো বেশি সফলতা আসতে পারত। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি ঈদের পর আন্দোলন নিয়ে দুই দলের মধ্যে কোনো সমন্বয়ও নেই। সরকার পতন আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে তা নির্ধারণ করতে একটি বৈঠক পর্যন্ত হয়নি জোটের অন্যতম এই দু’টি দলের মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জামায়াতের নীতি নির্ধারণী মহল নির্বাহী পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সাথে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন জানান, নারায়ণগঞ্জ নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের জন্য বিএনপিকে তাগিদ দেওয়া হলেও তাতে সায় দেয়নি বিএনপি।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনে পর জাতীয় কয়েকটি ইস্যুতেও কর্মসূচির কথা বললে তাতেও সায় মেলেনি বিএনপির কাছ থেকে। বিএনপির এই অগোছালো অবস্থায় কোন আশায় আমরা তাদের সাথে রাজপথে নামবো।

এই নেতার দাবি, আন্দোলনের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজেহাল অবস্থা। আর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তো সবারই জানা। এই অবস্থা কোন ভরসায় আন্দোলনে নামবে বিএনপি?

নির্বাহী পরিষদের একজন নেতা প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন অনুপস্থিত। কিন্তু জামায়াত নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আন্দোলন করেছে। এখন এই বিষয়গুলো বিএনপিকে শোধরাতে হবে।

তারা বলছেন, আগে বিএনপিকেই আন্দোলনে মাঠে নেমে পথ দেখাতে হবে। যদি তারা আন্তরিকতা দেখাতে পারে তবেই মাঠে নামবে জামায়াত।