বাড়ি জেলা উপজেলা কক্সবাজার উখিয়া থানার ওসি পদে যোগদান করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে মর্জিনা আক্তার

উখিয়া থানার ওসি পদে যোগদান করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে মর্জিনা আক্তার

0
81
কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের আওতাধীন থানাগুলোর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো একজন নারী অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি পদে যোগদান করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে মর্জিনা আক্তার মর্জু।
এর আগে গত বুধবার কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি পদে মর্জিনা আক্তার মর্জুকে পদায়নের আদেশ হয়। সর্বশেষ কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন এ নারী পুলিশ কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানায় দুই বছর ওসি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া মর্জিনা এখন থেকে উখিয়া থানা পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে।
অবশ্য নেতৃত্বদানের সহজাত গুণ তাঁর মধ্যে ছিল শিক্ষাজীবন থেকেই! ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ছিলেন মর্জিনা। মেধা, দক্ষতা ও সদিচ্ছা থাকলে নারীরাও যে নেতৃত্বদানে সক্ষম তা শিক্ষাজীবনে প্রমাণ দিয়ে এসেছেন পুলিশ কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার।
শিক্ষাজীবনে ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করেন প্রথম শ্রেণীতে। এরপর পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। গার্ল ইন স্কাউটিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের একজন ছিলেন মর্জিনা। ছিলেন লিডার ট্রেনার। অর্জন করেন উডব্যাজ। ১৯৯৫ সালে এইচএসসি’র ফলাফলে পান দ্বিতীয় বিভাগ।
১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১০ম স্থান অর্জন করে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ নাম্বার নিয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম সরকারী বিএড কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর ২০০৩ সালে সারদা পুলিশ একাডেমীতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৪ সালে মর্জিনা আক্তার মর্জু বাংলাদেশ পুলিশে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষানবীশ এসআই হিসেবে কক্সবাজার সদর ও রামু থানা কাজ করেন।
দ্রুত ত্বক সাদা হয়, প্রতিদিন ২ বার ব্যবহার করুন।
চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর মর্জিনাকে পদায়ন করা হয়, কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়। সেখানে দুই বছর কাজ করার সময় পুরো কক্সবাজারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে গৃহপরিচারিকার তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ তৈরী করেন তিনি।
তৎকালীন পুলিশ সুপার বনজ কুমার মজুমদারের দিক-নির্দেশনায় পুরো কক্সবাজারজুড়ে মাদকবিরোধী অসংখ্য অভিযান চালান।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট কক্সবাজারে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় ভয়ংকর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণের জন্য দিনরাত কাজ করেন, জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ২০০৭ সালে মামলাটির তদন্ত শেষে চার্জশিট দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা ডিবি পুলিশের এসআই মর্জিনা আক্তার মর্জু। শুধু তাই নয়, জঙ্গিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আদালতে সাক্ষীও দেন তিনি।
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ডবলমুরিং থানায় পদায়ন করা হয় মর্জিনাকে। এরপর ২০০৮ সালে কমিউনিটি পুলিশিং সম্পর্কে জানতে মর্জিনাসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে নেপাল পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরে নগরীর দামপাড়ায় পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয় তাকে। এরপর ২০০৯ সালে মর্জিনাকে কোতোয়ালী থানায় বদলি করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর জোনের উপকমিশনার বনজ কুমার মজুমদার। কোতোয়ালীতে দুই বছর কাজের পর ২০১১ সালে সেকেন্ড অফিসার হিসেবে পাঁচলাইশে বদলী করা হয় মর্জিনাকে। উত্তর জোনে চাকরির ৩ বছর পূর্ণ পওয়ায় তাকে বদলি করা হয় বন্দর জোনের ডবলমুরিং থানায়। সেখানে কয়েক মাস কাজ শেষে ২০১২ সালে পাড়ি জমান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সুদানে। মিশনে যাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান মর্জিনা। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানের দারফুরে ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেন হিউম্যান রাইটস অফিসার, মুভকন অফিসার ও সর্বশেষ জেন্ডার অফিসার হিসেবে।