উদ্ধার হলো রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হাজার কোটি টাকার জমি

0
100

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। গত ৩৩ দিনে নগরের সিআরবি, পাহাড়তলী ও হালিশহরে প্রায় ৪ হাজার ১০০টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়া জমির পরিমাণ ২৩ একর, যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

দখলে থাকা রেলওয়ের জমি উদ্ধারে সরকারের নির্দেশনা আসার পর গত ৩ অক্টোবর থেকে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ওইদিন সদরঘাট থানার কদমতলী ফ্রান্সিস রোডের উভয় পাশে ২৫৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ২ দশমিক ৫৮ একর জমি উদ্ধার করা হয়।

তারপর ৯ অক্টোবর পাহাড়তলীর সেগুনবাগান রোডের উভয়পাশে ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দশমিক ৩০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এক সপ্তাহ পর ১৬ অক্টোবর কদমতলীর জামতলা বস্তিতে ৬৬৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের ২ দশমিক ২৭ একর জমি উদ্ধার করে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।

১৭ অক্টোবর সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিআরবির বয়লিউ অ্যাভেনিউ’র পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ এক হাজার ২২টি টিনশেড, সেমিপাকা ও আধা সেমিপাকা ঘর উচ্ছেদ করা হয়। উদ্ধার হয় রেলের ২ দশমিক ৭৮ একর জমি।
২৮ অক্টোবর রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে সবচেয়ে বড় অভিযান চালানো হয়। শত কোটি টাকা মূল্যের জায়গার ওপর যুবলীগ নেতা বাবরের গড়ে তোলা বিশাল সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দেয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। বন্দর এলাকায় রেলওয়ের এই প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রায় ৪৫ একর জায়গা দখল করে একাধিক রিসোর্ট ও কৃষি খামার গড়ে তুলেছিলেন বাবর। সেই সাম্রাজ্যে অভিযানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় ৩ দশমিক ৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাবরের দখলে থাকা বাকি ৪২ একর জমি উদ্ধারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

৩০ অক্টোবর সিআরবিতে ২য়বারের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ২০০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়। পরের দিন ৩১ অক্টোবর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের পাশেও ২০০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উদ্ধার করা হয় প্রায় ২ একর জায়গা।

চলতি মাসের ৪ নভেম্বর নগরের পাহাড়তলীর সেগুনবাগান এলাকায় অবৈধ ৬০০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩ দশমিক ৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর (বুধবার) পাহাড়তলীর আমবাগান রেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৩৩ দিনে প্রায় ২৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়। এক একর জমির বাজার মূল্য গড়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রেলের জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানে ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা, বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল করিম, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল করিম বলেন, ৩ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৩ দিনে রেলওয়ের প্রায় ২৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়। এসময় উচ্ছেদ করা হয় প্রায় ৪ হাজার ১০০টি অবৈধ স্থাপনা।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কারও বাধার মুখে পড়িনি। এছাড়া অভিযান পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সহায়তা করায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

দেশে না থাকলেও বাবর আতঙ্কে রেলওয়ে

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নিয়মিত অভিযানে গ্রেফতার এড়াতে দুবাই চলে যান চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। অভিযোগ রয়েছে, হালিশহরে রেলওয়ে প্রশিক্ষণ একাডেমির আশেপাশে প্রায় ৪৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন তিনি।
দখলে থাকা জমির ওপর একাধিক রিসোর্ট ও কৃষি খামার গড়ে তুলেছিলেন বাবর। সুরম্য রিসোর্ট থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি এবং কবুতরের খামারও আছে তার। ২৮ অক্টোবর রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ বাবরের সাম্রাজ্যে অভিযান চালায়। এসময় কয়েকটি রিসোর্ট গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩ দশমিক ৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়।

কিন্তু এখনও ৪২ একর জায়গা বাবর ও তার অনুসারীরা দখল করে রেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উচ্ছেদের ৭ দিন পার হলেও এখনও মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নাম করে ওই এলাকায় অবস্থান করছে বাবরের অনুসারীরা। এতে আতঙ্কে আছেন রেলওয়ে প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা বলেন, কার দখলে রেলওয়ের জায়গা সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। যেখানে অবৈধ দখল থাকবে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দখলে থাকা সবকটি জমি উদ্ধার করার পর অভিযান শেষ হবে।