উনত্রিশ এপ্রিল স্বজন হারানোর বেদনায় পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া

0
72

শফিউল আলম
১৯৯১ সালের প্রলংকারী ঘুর্নিঝড়ের দিন রাতে যখন ঘূর্নিঝড়ে বাড়ীঘর, স্কুল, মাদ্রার্সা একের পর এক বিধস্থ হয়ে পড়ছে তখনই বুঝতে পারেনি আমার আদরের সন্তান মহিউদ্দিন আমাকে ও আমার পরিবারকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে যাবে না ফেরার দেশে । ঘুর্নিঝড় চলাকালে আমি আমার বাড়ী রাউজানের মোহম্মদ পুর হারী চান্দ বাড়ীতে ছিলাম । ঘুর্নিঝড়ে এলাকার মানুষের ঘর বাড়ী, মোহাম্মদ পুর মহিউল উলুম মার্দ্রসা, রাউজান আর্যমৈত্রেয় ই্নষ্টিটিউশন, রামজান আলী হাট বাজারের মার্কেট দোকান ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে । এলাকার মানুষের বসতভিটা পুকুর পাড়ের গাছ ভেঙ্গে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে । এই সময়ে ঘরের মধ্যে রাখা পানি দিয়ে অজু করে আজান দিতে লাগলাম । ঘুর্নিঝড়ের ভয়াবহতা কিছুইতেই কমছেনা । ঘুর্নিঝড় চলাকালে ঘর থেকে আমি ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ীর সবাই কি অবস্থায় আছেন দেখতে প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে শুরু করি । আমার ঘরে আমার বড় ছেলে সাহাবুউদ্দিন ২য় ছেলে সাত বৎসর বয়সের মহিউদ্দিন সহ তার মাতাকে রেখে যায় । রাত কিনটার সময় আমি এলাকার মানুষের সহায়তা করার সময়ে আমার মাতা দেলোয়ারা খাতুন প্রচন্ড ঘুর্নিঝড়ের মধ্যে আমার দিকে আসতে দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তার কাছে উপস্থিত হতেই মাতা দেলোযারা খাতুন কেদেঁ বলে উঠলেন তুমি মানুষের ঘর বাড়ী নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছ, তোমার ঘরের খবর কি সেইটা জান বলে আমার মাতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা । মাকে কোলে নিয়ে আমি প্রচন্ড ঘুর্নিঝড়ের মধ্যে আমার ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখতে পাই আমার ঘরের একটি চালা বিধস্থ হয়ে পড়ে আছে ।তখনই বুঝতে পারেনি আমার আদরের সন্তান মারা গেছে । আমার মাতা আবারো কেদেঁ বললো আমার নাতি মহিউদ্দিনকে ছাড়া বাবা তুমি বাচঁকে কি করে। মায়ের এই কথা শুনে আদরের সন্তান মহিউদ্দিনকে ঘরের ভেতরে দেখতে গিয়ে ঘরের পাটিতে শুয়ে আছেন আমার আদরের সন্তান মহিউদ্দিন তাকে নিয়ে বিছনার চারিদিকে বসে বসে কাদঁছে আমার পরিবারের অনান্য সদস্যরা । আদরের সন্তানের হঠাৎ আমাকে ছেড়ে এই ভাবে চলে যাবে কল্পনা করতেই পারেনি । রাত শেষে সকালে আমার ছেলের লাশঁ দাফন করার জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশীরা বাড়ীতে আসতে পারেছেনা রাস্তায় বিধস্থ হওয়া গাছ বিধস্থ বাড়ীঘরের চালা টিন পড়ে থাকায় । বাজারের মধ্যে গিয়ে লাশঁ দাফনের জন্য কাফনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছেনা দোকান বন্দ্ব থাকায় পরে আমাদের বাড়ীর প্রতিবেশী আবদুস সবুর সওদাগরকে ডেকে নিয়ে তার দোকান থেকে কাফনের কাপড় ক্রয় করে এনে ঐ দিন দুপুর দুইটার সময় আমার আদরের সন্তানের জানাজার নামাজ পড়ে কবরস্থানে দাফন করি। আমার আদরের সন্তানের লাশঁ ঘর থেকে বের হবার পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমি আমার সেই ঘরে প্রবেশ করেনি । ঐ ঘর আমার ভাইয়েরা থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে । আমি আমার আদরের সন্তান মহিউদ্দিনকে হারানোর পর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে রাউজানের দক্ষিন হিংগলা শান্তি নগর এলাকায় বাড়ীঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছি ্ ।৯১ সালের এই হৃদয়বিদায়ক ঘটনার ২৩টি বৎসর পেরিয়ে গেলেও আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা স্বজন হারানোর বেদনায় বিভোর হয়ে উঠি । তেইশ বৎসর পুর্বের এই হৃদয় বিদায়ক ঘটনার পর আমার জীবনে আমি অনেক কিছু পেয়েছি তবু ও আমার হারানো সন্তানের কথা আমি আমার পরিবার ভুলতে পারেনি ।