এমন কর্মী হতে হবে যাদের বিদায়ে মৃত্যুতে এ সমাজ কাঁদবে

0
81

চট্টগ্রাম উত্তর জেলার মানবাধিকার কমিশন সম্মেলনে

এমন কর্মী হতে হবে যাদের বিদায়ে মৃত্যুতে এ সমাজ কাঁদবেমানুষ জন্ম হবার পর থেকে তার অধিকারের শুরু হয়, এসব অধিকারের সমষ্টিকে মানবাধিকার বলে। এ অধিকার সব মানুষের জন্য সমান। আমরা যারা মানবাধিকার কর্মী, তাদের সবাইকে আমাদের চারপাশের মানুষের অধিকারের কথা মনে রাখতে হবে। নিজেকে সংযত হতে হবে, অপরের দুঃখে দুঃখী হতে হবে।’
শনিবার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর এলজিইডি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন কমিশনের মহাসচিব ড.সাইফুল ইসলাম দিলদার।
তিনি বলেন, ‘এ পৃথিবীতে যে সব মহামানবরা এসেছেন, তারা সবাই মানুষের সেবার জন্য এসেছেন। যিনি যে ধর্মের কথাই বলেন না কেন, সবাই মানুষের ভালো চেয়েছেন। তাই মানবাধিকার কর্মীদেরও সব দিক থেকে সবার ভালো চাইতে হবে। এমন কর্মী হতে হবে যাদের বিদায়ে (মৃত্যুতে) এ সমাজ কাঁদবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সমাজে সবসময় মন্দের একটি ধারা ছিলো। আমাদের কর্মীরা তাদের প্রতিহত করবে। যারা মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়ে অসৎ কাজ করবে, আমাদের কর্মীরা প্রয়োজনে তাদের থানায় দেবে। ইতোমধ্যে এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির কিছু অসৎ ব্যক্তিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্য বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, ‘মানবাধিকার কথাটি অনেক বড়, আমরা ছোট ছোট মানুষদের সেই বড় কাজটি করে যেতে হবে। আজ সমাজের সব স্থরে মানবাধিকার হরণ হচ্ছে। আমরা সব সময় শিশু, নারীদের অধিকারের কথা বলি, তবে আমাদের সমাজে পুরুষরাও কম নির্যাতিত নয়। বিভিন্ন সময় আইনের মারপ্যাঁচে পরে অনেক পুরুষ নির্যাতিত হচ্ছেন। আমাদের তাদের পাশেও দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উপজেলার কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে, বাকি গুলোতে আমাদের অগ্রজরা ভালো কাজ করছেন, তাই তাঁরাই থাকবেন। তবে এর পরেও আরো কিছু কমিটি রি-সাফল করা হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরাও প্রতিনিয়ত মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় কোনো কমিটির সদস্য হতে হবে তা নয়, যে কেউ অন্তরে বিষয়টি ধারন করলেই মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে পারে। মানবাধিকার কর্মীদের উচিত সবসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখা। এতে করে তাদের কাজ আরো সহজ হবে’।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, ‘অনেকে মানবাধিকার সংগঠনের নাম দিয়ে অমানবিক কাজ করছে। কার্ড ব্যবসা করছে, থানায় গিয়ে টাকা নিচ্ছে। তাই এসব অসৎ মানুষরা যাতে মানবাধিকার সংগঠনে থাকতে না পারে সে দিকে সচেতন হতে হবে। না হয় সব মানবাধিকার কর্মীদের উপর অপবাদ আসবে।’
সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারি লায়ন সেতারা গাফ্ফার বলেন, ‘আমি একজন গৃহিনী থেকে এই পথে এসেছি। আমি যেহেতু পেরেছি আপনারাও পারবেন। মনে সৎ সাহস থাকলে মানুষের উপকার করা যায়।’
নগর মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও এই সংগঠনের সাথে ছিলাম না কিন্তু একসময় ভাবলাম, ভালো মানুষরা যদি এসব সংগঠনে না আসে তাহলে খারাপরা ওই জায়গা গুলো দখল করে ফেলবে। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলে জানাই। তবে এ সংগঠনে কোন ভাবেই রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।’
সম্মেলনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য সংগঠনের ১০ কর্মীকে ক্রেষ্ট তুলে দেয়া হয়। এছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলাকে শ্রেষ্ঠ শাখা ঘোষণা করা হয়। এসময় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার জন্য ১০ সদস্য’র একটি লিগ্যাল এইড প্যানেল ঘোষণা করা হয়, যারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেবেন।

সংগঠনের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আবুল বশরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি লায়ন সোহেল আহমদ মৃধা, বিশেষ সমন্বয়কারি আবুল হাসনাত চৌধুরী, কমিশনের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম কমু, দক্ষিন জেলার সভাপতি লায়ন অজিত কুমার দাশ, দক্ষিন জেলার সাধারন সম্পাদক ও সাতকানিয়া পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র মো. জোবায়ের, এর আগে শনিবার সকাল ১১টায় বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব ড.সাইফুল ইসলাম দিলদার। সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তর জেলা সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা প্রায় হাজার খানেক কর্মী যোগ দেন।