ওসমানী বিমানবন্দরে ১৯ ঘণ্টা আটকা ৩৫০ যাত্রী, বিক্ষোভ

0
95
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দ

১৯ ঘণ্টা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে থাকলেন লন্ডনগামী ৩৫০ যাত্রী। বার বার সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে গতকাল ভোরে বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা। এ নিয়ে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে বিমানবন্দরের ভেতরে। এদিকে, বিমানের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে বৃদ্ধ ও শিশুরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজারও যাত্রী চলাচল করেন। সিলেট থেকে লন্ডন বিমানের সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও লন্ডন থেকে সিলেটে সরাসরি ফ্লাইট চালু রয়েছে। এ কারণে সংসদ নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সিলেটে আসতে শুরু করেছেন লন্ডন প্রবাসীরা। কিন্তু বিমানের নানা আচরণ ও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে তারা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সমপ্রতি দেশে আসা কয়েকজন লন্ডন প্রবাসী জানিয়েছেন, যেখানে তাদের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগার কথা সেখানে তারা কখনও কখনও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লাগে। এ রকম ঘটনা গতকাল ঘটেছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। লন্ডনগামী যাত্রীরা জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টায় বিমানের ফ্লাইটের সিলেট থেকে ২৫০ যুক্তরাজ্যগামী যাত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা। সে অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের ২৫০ সহ প্রায় ৩৫০ যাত্রী বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে যান। কিন্তু বিকাল সোয়া ৪টায়ও রানওয়েতে বিমান এসে না পৌঁছায় বিমান কর্তৃপক্ষ বার বার জানায় বিমান আসছে। আসার পর ফিরে যাবে। এভাবে কয়েক ঘণ্টা টালবাহানার পর রাতে জানিয়ে দেয়া হয় রাত সোয়া ২টায় বিমানের ফ্লাইট ছাড়বে। এতে করে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ যাত্রীরা বিমানের জন্য বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত ২টার দিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে বিমান অবতরণ করে। তখন যাত্রীরা অনেকটা আশায় বুক বাঁধেন এবং যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেন। রাত আড়াইটার দিকে ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যাত্রীরা বিমানে ওঠে চড়েন। বিমানে প্রায় ৩৫০ যাত্রী ওঠার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জানিয়ে দেয়া হয় বিমানটি বিকল হয়ে গেছে। সেটি ছাড়া সম্ভব নয়। এরপর বিমান থেকে সকল যাত্রীকে নামিয়ে আবার যাত্রী লাউঞ্জে নিয়ে আসা হয়। এদিকে, ভোর হতে যাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যাত্রীরা জানান, শুক্রবার বিকাল থেকে তারা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রয়েছেন। শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ অনেকেই অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের কখন বিমান ছাড়বে সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি। পাশাপাশি যাত্রীদের প্রয়োজনীয় খাবারও সরবরাহ করেনি। এ সময় কয়েকজন যাত্রী বিমানবন্দরের কাউন্টারে সামনে এসে হুই হুল্লোড় করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এভাবে যাত্রীরা বিমানের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। লন্ডনগামী যাত্রী মোহাম্মদ সাদি মানবজমিনকে জানান, বিকাল ৪টা থেকে তারা যাত্রী লাউঞ্জে বসে আছেন। বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের বার বার আশ্বাস প্রদান করলেও কোনও ফল হয়নি। এছাড়া অনেক যাত্রীরই সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা থেকে হিথ্রোর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সিলেটেই প্রায় সাড়ে ৩০০ যাত্রী সকাল ১১টা পর্যন্ত আটকে থাকেন। লন্ডন যাত্রী বৃদ্ধ নুরুন্নাহার চৌধুরী জানান, বিমানের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন। তাদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থাও করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। এ কারণে যাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানের ওই ফ্লাইটটি ৩৫০ যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। এরপর লন্ডনগামী ২৫০ যাত্রীসহ ৩৫০ যাত্রীকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে হিথ্রো উদ্দেশে পাঠানো হয়। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাড়ে ১১টা বিজি-০৬ যে ফ্লাইটটি ছেড়ে গেছে সেই ফ্লাইটেই সবাইকে নিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে লন্ডনের ২৫০ ও অন্যান্য দেশের ১০০ যাত্রী ছিল বলে জানান তারা। বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ১৯ ঘণ্টা বিলম্বে সিলেটের ফ্লাইটটি ছেড়ে গেছে বলেও দাবি করেন তারা।