ওয়াইফাই প্রযুক্তির আওতায় আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

0
170

শীঘ্রই তারবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ ওয়াইফাই প্রযুক্তির আওতায় আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) অধীনে ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে বাংলাদেশ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ নেটওয়ার্ক সিস্টেম (বিডিরেন)। এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।

শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয় ইউজিসির এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও তারবিহীন ইন্টারনেট ওয়াইফাই প্রযুক্তি সুবিধা প্রদান করবে বিডিরেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে বিডিরেন হাটহাজারী থেকে ১০০ এমবি ব্যান্ডউইথ ক্যাবলের মাধ্যমে ক্যাম্পাস পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করলেও ওয়াইফাই স্টেশনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ইন্টারনেট লাইন সঞ্চালনের অবশিষ্ট কাজ করা হবে ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রজেক্টের অধীনে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিডিরেন একটি ৫০ কেবি জেনারেটর ও দু’টি স্টেশন র‌্যাক প্রদান করার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সঞ্চালনের একটি কেন্দ্রীয় স্টেশন তৈরি করবে। ১০০ এমবি ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট ক্যাবলের মাধ্যমে ওই স্টেশন পর্যন্তই সংযোগ প্রদানের কাজ করবে তারা। অবশিষ্ট কাজ অর্থাৎ ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করবে হেকেপ ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রজেক্টের সাব প্রজেক্ট সিইউসিএন-০২। সিইউসিএন-০২-এর অধীনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, জীব বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনসহ সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী হল ও শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা এর আওতায় থাকলেও থাকবে না ছাত্র হলগুলো। ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সংযোগের চূড়ান্ত নকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবন থাকলেও ছাত্রহলগুলোর কথা উল্লেখ নেই।

এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস ইন্টারনেট ২৪টি পোর্ট সুইচসহ ক্যাবল সংযোগ প্রতিটি বিভাগ পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও অবশিষ্ট অভ্যন্তরীণ কাজ প্রতিটি বিভাগকে নিজেদের অর্থে করতে হবে। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে প্রতিটি বিভাগ পোর্ট সুইচ বাড়াতে পারবে।

অপরদিকে ক্যাবলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল স্থানে শিক্ষার্থীদের জনসমাগম বেশি এমন ৮টি পয়েন্টে থাকবে অয়্যারলেস ইন্টারনেট অর্থাৎ ওয়াইফাই স্টেশন। এসকল স্টেশনের প্রত্যেকটি কেন্দ্র থেকে চতুর্দিকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত অবস্থানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওয়াইফাই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় একটি ওয়াইফাই স্টেশন হওয়ার কথা থাকলেও বাকি ৭টি স্টেশন কোথায় কোথায় হবে এখনও তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এই পয়েন্টগুলো ঠিক করা হবে বলে জানান সিইউসিএন-০২-এর সাব প্রজেক্ট ম্যানেজার বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল মোস্তফা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন বিভাগে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলসহ অনেক স্থানেই এ সুবিধা নেই। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে প্রতিনিয়তই দারস্থ হতে হয় বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের। এতে হরহামেশাই বিড়ম্বনার শিকার হন তারা। অনেক সময় ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের জন্যে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে অনেক সময় কথা কাটাকাটি থেকে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। তবে ওয়াইফাই প্রযুক্তির ফলে এসব দুর্ভোগ থাকবে না ছাত্র, শিক্ষক কিংবা প্রশাসনের কারোরই।

সিইউসিএন-০২-এর সাব প্রজেক্ট ম্যানেজার ও বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। টেন্ডার থেকে শুরু করে এই প্রজেক্টের যাবতীয় পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। এমনকি গত শনিবার থেকে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে।’ প্রজেক্টের মেয়াদ ছয় মাস ধরা হলেও তিন মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।