কক্সবাজারে বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু : ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী

0
116

কক্সবাজারে বন্যাচলতি সপ্তাহের একটানা ভারি বর্ষণে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে জেলার জনপদ। পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলের ক্ষেত ও চিংড়িঘেরসহ সব অবকাঠামোর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামীণ পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। জেলার বিভিন্নস্থানে পানিবন্দী প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

এ দুর্ভোগের সুযোগে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি দেখছেন না সাধারণ মানুষ। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ চলছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

দুর্গত এলাকার রোজদাররা পবিত্র রমজান মাসে শুধুমাত্র পানি পান করে রোজা রাখছেন। অনেকে ভাগ্যে ইফতারও জুটছে না। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ রির্পোট লেখাপর্যন্ত জেলার রামু ও টেকনাফ উপজেলায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে টানা বর্ষণের মাত্রা না কমায় ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোন পরিসংখ্যান নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার সদরে ১ জনের মৃত্যু ও আহত ৪ : কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ায় শুক্রবার পৌনে ৩টার দিকে পাহাড় ধ্বসে প্রবাসী মো: নুর বক্স এর ছেলে মো: আবছার (৬) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। এঘটনায় আহত হয়েছে একই পরিবারের আরও ৪ জন। তারা হলো ফাতেমা বেগম (১২), আব্দুল মান্নান (৯), জমিলা বেগম (৮) ও তাদের মাতা আলতাজ বেগম (৪০)।

এলাকাবাসি জানায়, একদিকে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে চলছে পাহাড় কাটা। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও থেমে নেই পাহাড় খেকোদের দৌরাত্ম।

রামুতে গর্ভবতী নারীসহ ৫ জনের মৃত্যু: রামুতে বন্যার পানি থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে নৌকা ডুবিতে ৪ জন ও পানির তোড়ে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরা হলো রামু উপজেলার ক্যাজর বিলের কাদের মোহাম্মদের কন্যা কামরুন্নাহার (২০), এরশাদ উল্লাহর কন্যা হুমাইরা (৩), আমতলীয়া পাড়ার গর্ভবতী নারী হালিমা বেগম (২৮), পথেখারটোলের শিশু রিদওয়ান (১০) ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লজ উখিয়াঘোনা গ্রামের আমির হোসেন (৪২)।

সেন্টমার্টিনে মা-শিশু নিহত: কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে টর্ণেডোর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিনদ্বীপে টর্ণেডো আঘাত হানে। এতে নারিকেল গাছ ভেঙ্গে পড়ে কোনারপাড়া নুর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও তাদের শিশু পুত্র মোঃ জিশান (৪) ঘটনাস্থনেই প্রাণ হারিয়েছে। গাছ চাপায়, ঘর উপড়ে ও বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন অনেকেই। টর্ণেডোর আঘাতে দ্বীপের সর্বত্র কম-বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হলেও সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬ ও ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। টর্ণেডোর আঘাতে শত শত বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে মসজিদ-মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এখনও শত শত বাড়ি পানির নীচে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে গত ১ সপ্তাহ ধরে অবিরাম ভারি বর্ষণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে সেন্টমার্টিনদ্বীপের বাসিন্দাগণ।

অপরদিকে অবিরাম বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে শুক্রবার দুপুরে কাউন্সিলরদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল।

তিনি বলেছেন, পেশকার পাড়াস্থ সুইচ গেইট অকেজো হয়ে যাওয়ার ফলে শহরে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। উক্ত সুইচ গেইট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকায় পৌরসভা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

সার্বিক বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার আবাহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে নিম্ন চাপের প্রভাবে আরও কয়েকদিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।