কচুয়ায় ৬২ হাজার গাছের চারা রোপণ

0
119

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কচুয়ায় ৬২ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উপজেলার ৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ১০টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়কে এসব চারা রোপণ করা হয়।

কচুয়ায় ৬২ হাজার গাছের চারা রোপণবৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে চারা বিতরণ ও রোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

এ সময় তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানোর মাধ্যমে প্রমাণ করেছি, আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সব প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে প্রতিহত করার জন্য এ প্রকৃতিকে ধারক ও বাহক হিসেবে এগিয়ে যাবো। কল্যাণ, মঙ্গল ও নিরাপত্তার পথে এগিয়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব কোনদিনও মেনে নেয়নি, যারা দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মানুষের জীবনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা যে কলঙ্ক করেছে, সে কলঙ্ক আমাদের মোচন করতে হবে।’

যারা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মানুষের উপর অত্যাচার করে, মানুষ খুন করতে যারা ইতস্তত করে না তাদের সবসময় দমন করতে হবে। বাংলাদেশের সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া এমপি, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশ্রাফ হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

এদিকে, কচুয়ায় একযোগ ৬২ হাজার চারা বিতরণ ও রোপণের উদ্যোগ নেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। উপজেলা পরিষদ ও তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে এ মহতী উদ্যোগে অসুস্থতাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার উপস্থিত থাকতে পারেননি। ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় তাকে বুধবার ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা বৃহস্পতিবার শুরু হলেও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ আগস্ট থেকে চারা বিতরণ শুরু হয়। শুধুমাত্র উপজেলা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃহস্পতিবার চারা বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার’ই একসঙ্গে সব চারা রোপণ করা হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

এর আগে ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির পরিবেশ রক্ষায় তার এ ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের কথা জানান।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচিতে যেভাবে গাছ নিধন করা হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উপজেলা পরিষদের তহবিল ও ব্যক্তিগত তহবিলের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮৮ সালে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আইপিসিসি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিনিয়ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃস্মরণ হ্রাস করা সম্ভব না হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। আর এভাবেই বন্যার প্রকোপ, অতি বৃষ্টি, খরা, সাইক্লোনের প্রভাব বাড়ছে ও কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। আর পৃথিবীর ওপর তার প্রভাব বাড়ছে।’

এ কারণেই জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে দুর্যোগ, অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা, হৃদরোগসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়েই চলছে। এতে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া এর প্রভাব পড়ছে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, জীব বৈচিত্র্য, উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও অবকাঠামোগত ক্ষতিসাধন অব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষ বছরে পয়েন্ট জিরো ২ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবেশে নিঃস্মরণ করে। এতে পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিপরীতে পরিমাণমতো গাছ না থাকায় আমরা অক্সিজেন পাচ্ছি না। তাই এর প্রভাব জলবায়ুর উপর পড়ছে। এ কারণেই আগামি কয়েক দশকে আমাদের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বা ঝুঁকিতে রয়েছে।’

এছাড়া রোপণকৃত গাছের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাকি ৭০ শতাংশ উপকারভোগী প্রতিটি নাগরিকের বাসা-বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশের রাস্তা-ঘাটে রোপণ করা হবে। এর মধ্যে যদি ১০ শতাংশ গাছ আগামি ১০ বছর পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয় তাহলে গড়ে ১০ কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব সৌন্দর্য্য রক্ষাসহ অক্সিজেন ভোগ করতে পারবো আমরা।