কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ-এর ৫০ বছর পূর্তি ১ জানুয়ারি

0
155

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন>>রাশেদ রউফ১ জানুয়ারি ২০১৪ কবি, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ-এর ৫০ বছর পূর্তি। এ উপলক্ষে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সাহিত্যসন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকছে কবিতা আবৃত্তি, সংগীত ও কথামালা। কবি শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ-এর এ পর্যন্ত ৩৩টি বই প্রকাশ পেয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে কিশোর কাব্যগ্রন্থ : আকাশের সীমানায় সূর্যের ঠিকানায় (১৯৯১), আগল ভাঙা পাগল হাওয়া (১৯৯৬), বিকেল মানে ছুটি (১৯৯৬), ধানের গানে প্রাণের বাঁশি (১৯৯৮), যাওয়ার পথে হাওয়ার রেলে (১৯৯৯), স্বাধীনতার প্রিয় কবিতা (২০০০), ছুটির মজা কেমন মজা (২০০০), নির্বাচিত কিশোর কবিতা (২০০৪), ছবির মতো দেশ (২০০৮), আনন্দ সাম্পান (২০০৯), পরীর নূপুর (২০১২)। প্রবন্ধগ্রন্থ : ছন্দ পরিচয় (১৯৯৬), ছড়া জাদুকর সুকুমার বড়–য়া (১৯৯৯), ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন (২০০০), বাংলাদেশের ছড়া : রূপ ও রূপকার (২০০৭), রবীন্দ্রনাথ : ছোটোদের আপন (২০১২)। কাব্যগ্রন্থ : তোমার জন্য সকাল আমার তোমার জন্য রাত (১৯৯৭), এসো পঞ্চাশে এসো মন চাষে (২০১৩); ছড়াগ্রন্থ : সমকালীন ছড়া (১৯৯৭), আয়রে খোকন ঘরে আয় (২০০২), কিশোর গল্পগ্রন্থ : কাকবন্ধু ও ভূতের গল্প (২০০৬), পরীর ভুবন (২০০৯), সম্পাদিত গ্রন্থ : অথৈ (১৯৯৩), দুরন্ত (১৯৯৫), চাঁদের কপালে চাঁদ (১৯৯৫), মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ও কবিতা (১৯৯৭), বাংলাদেশের ছড়া (২০০১), লেখক কোষ : চট্টগ্রাম (২০০২), শিল্পী কোষ : চট্টগ্রাম (২০০৩), এম আর আমিন স্মারক গ্রন্থ (২০০৪), মাহবুবুল হক সম্মাননা স্মারক (২০০৮), ও আমার কিশোরবেলা (২০১৩)।। লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। এর মধ্যে ছোটদের কাগজ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, পালক এ্যাওয়ার্ড, কিডস শিশুসাহিত্য পদক, অর্চি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, বাংলা সাহিত্য পদক, চন্দ্রাবতী একাডেমি পদক, বাপী শাহরিয়ার স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, বাংলার মাটি বাংলা জল পদক, বোধন আবৃত্তি স্কুল সম্মাননা উল্লেখযোগ্য। রাশেদ রউফ দৈনিক আজাদীর একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি। উল্লেখ্য, রাশেদ রউফ ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ চট্টগ্রামের পটিয়ার ছনহরায় জন্মগ্রহণ করেন। rashed roufরাশেদ রউফ-এর কয়েকটি কবিতা বাংলাদেশ তুমি কেমন আছো/ রাশেদ রউফ আমার স্বদেশ তুমি কেমন আছো? আমার মাতৃভূমি কেমন আছো? আকাশের নীল মুখ কালো হয়ে যায় ভালোগুলো ঢেকে যায় বিষাদ ছায়ায়- দেশের মাটিতে জাগে শঙ্কা-প্রলয় টুকরো টুকরো হয় অযুত সময়। নিসর্গ গাছপালা কাঁপে থরথর মাথার ওপর নামে আচমকা ঝড় ছেঁড়া পালকের মত জীবন ওড়ে- পেণ্ডুলামের মত দোলে ও ঘোরে। আমার স্বদেশ তুমি কেমন আছো? হিংস্র নখর আছে, থাবা আছে আর ব্যথার আগুনে পুড়ে হও অঙ্গার। রক্তের ডেলা নিয়ে কারা করে খেলা ছড়ানো ধুলোর মত কাটায় কে বেলা! সব কিছু জানো তুমি- দেখো দশদিক- গভীর সাগরে তুমি একাই নাবিক। হে আমার প্রিয় ভূমি, দাঁড়াও উঠে নদীর স্রোতের মত যাও হে ছুটে কবে তুমি হবে বলো পাল তোলা নাও গাও তুমি জয়গান- অস্ত্র শানাও। দাবার ঘুঁটির মত চাল চালে যারা গতিহারা হবে তারা, হবে প্রাণহারা চিতার ছাইয়ের মত হবে নিঃশেষ দাঁড়াও আমার প্রিয় হে বাংলাদেশ। বাধার পাহাড় ভাঙো শত-অবিরত আমার স্বদেশ তুমি থাকো অক্ষত। আয় রৌদ্র, আয় শান্তি/ রাশেদ রউফ আয়রে রৌদ্র, আয়রে রৌদ্রদিন তোর আদরে এই আকাশে ঘুড়িরা উড্ডীন। তোর জন্য মেঘ উড়ে যায় দূরে তোর জন্য বিশ্বটা রঙিন। নতুন করে উড়ছে এখন বিষ হাওয়ায় হাওয়ায় গিলছি অহর্নিশ। রক্তে-যুদ্ধে মুক্ত হয় এ আকাশ ও মেঘ তুই মনে কি রাখিস? ও রেললাইন, তোরই কিবা দোষ! তোর শরীরে শিং বসালো মোষ। মোষ তাড়াতে কেউ কি এলো দৌড়ে তোর জন্যে সবার কী আফসোস! আয়রে রৌদ্র, আয়রে রৌদ্রতাপ তোর আলোতে যাক মুছে সব পাপ তোর আগুনে দগ্ধ হবে জানি জড়িয়ে থাকা ছড়িয়ে থাকা সাপ। সাপ পালাবে বাপ ডেকে – বাপ ডেকে দেশের সকল খানাখন্দ থেকে সাম্প্রদায়িক মোষ তাড়ানোর জন্য আয়রে রৌদ্র! তুই বসবি জেঁকে। আয়রে রৌদ্র, আয়রে আমার আলো আয়রে শান্তি, আয়রে সকল ভালো। দুচোখে থাকুক রঙিন স্বপ্ন/ রাশেদ রউফ তুমি মেয়ে তাই তোমাকে শাসায় তোমাকে নাচায় ওরা শত কাজ করে নাম নেই ওরে হায়রে কপালপোড়া! খোঁড়া করে দিতে কেউ কেউ চায় কেউ চায় হও কানা- চতুর্দিকেই বাধার পাহাড় চতুর্দিকেই মানা। কেউ বলে তুমি মাথা ঢাকো আর কেউ বলে মুখ ঢাকো- দেখবে না কেউ তোমাকে, তুমিও দুচোখ বন্ধ রাখো। পাহাড়ের মতো চেপে বসে আছে পুরো সভ্যতা আজ এতো ত্যাগ, তবু তোমার জন্য ভাবে না দেশ-সমাজ। তোমাকে ছাড়াতো পৃথিবী চলে না চালানো যায় না দিন তবু তুমি আজ শেকলে বন্দী তুমি স্বাধীনতাহীন। পুরো পৃথিবীর অর্ধেক তুমি স্রষ্টার বড় দান- তোমার কণ্ঠে কবিতা থাকুক বাজুক মায়াবী গান। দুচোখে থাকুক রঙিন স্বপ্ন কাঁটাহীন হোক পথ- তোমার কর্মে তোমার ধর্মে ভরুক মহাজগত। তোমার জন্য সোনার বাংলা / রাশেদ রউফ তুমিÑ বাজাও যখন খঞ্জনি Ñ ঝুমঝুমি, তোমার সঙ্গে খেলা করে কল্পনা আর গানÑ হাওয়ায় ভাসে রঙিন ঘুড়ি, নদীতে সাম্পান। তোমার ছাদে সাঁতার কাটে চাঁদ Ñ নিখাদ আলোয় তারার মেলা, আনন্দ আহ্লাদ! চাঁদের আলো বাঁধনহারা, বিছিয়ে রাখে জালÑ রূপকথারই স্বপ্নরঙে রাত্রি টালমাটাল। তুমি তখন ভাঙতে থাকো রূপ-অরূপের সিঁড়ি সুরের মায়ায় দূরের হাওয়া বইছে ঝিরিঝিরি। সিঁড়ির পরে সিঁড়ি ভেঙে মেঘ ছুঁতে চাও? যাওÑ গামছাতে মেঘ ছেঁকে নিয়ে বৃষ্টিকে পাকড়াও। টাপুর টুপুর বৃষ্টিজলে চতুর্দিকে কৌতূহলে রূপকথারা জেগে ওঠে, চুপ থাকে না কেউÑ ফুলের গন্ধে আকুল এ মন, ছন্দে আনে ঢেউ। তুমিÑ বাজাও যখন খঞ্জনি Ñ ঝুমঝুমি Ñ উকুস টুকুস জোছনা জলে ছাপিয়ে দুষ্টুমি মেতে ওঠে সবুজ-শ্যামল প্রিয় মাতৃভূমি। তোমার জন্যে বিশাল আকাশ, তোমার জন্যে ছায়া, তোমার জন্যে ভালোবাসা, তোমার জন্যে মায়া। তোমার জন্যে মন আনচান, সুখ-অফুরান হাসি, তোমার জন্যে সোনার বাংলা, স্বপ্ন রাশি রাশি। অমলকান্তি ও আমি / রাশেদ রউফ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অমলকান্তিকে মনে আছে? হাতে ছিলো না শেকল কোনো, পায়ে ছিলো না বেড়ি পাঠশালাতে আসতে তার তবুও হতো দেরি। পারতো না সে ক্লাসের পড়া, মাঠের দিকে চোখ তার জন্য কষ্ট ভারি, তার জন্য শোক। চায় নি হতে ডাক্তার বা উকিল-মাস্টার সূর্য রাঙা ইচ্ছে নিয়ে দিন কাটলো তার পাঠ এড়িয়ে মাঠ পেরিয়ে দূর অচিনপুর চেয়েছিলো সে হতে পাতার ‘লাজুক রোদ্দুর’। বন্ধু যারা তাদের সব ইচ্ছে জেগে থাকে শুধু অমলকান্তি বুকে কষ্ট পুষে রাখে। শেষ পর্যন্ত অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি। কিন্তু আমি কী হতে চাই জানো? : জ্ঞানী মানুষ, ধ্যানী মানুষ; কণ্ঠে নেবো গান-ও। কখনো ভাসি সাগরে তাই, কখনো হাসি পথে উঠতে থাকি দীপ্ত পায়ে কখনো পর্বতে। ছুটতে থাকি/ স্রোতের মতো/মেঘের মতো/ ঘুড়ির মতো দূরে সুরের মাঝে বাঁচি আবার, আছি জগৎজুড়ে। ক্লাসের পড়া, পাসের পড়া, অন্য যত পড়া শেষ করতে চাই, ঘোচাতে মনের ব্যাধি-খরা। আমার শুধু ইচ্ছে করে জ্ঞানের নদী হই দুচোখ দিয়ে কেবল দেখি বইয়ের পরে বই। তবু জানি নাÑ কখন আমি ভরাবো অন্তর কখন হবো বাংলাদেশে বিদ্যার সাগর!