কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমছে চট্টগ্রাম বন্দরে

0
72

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস এবং টাইম অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে গৃহীত নানা উদ্যোগের সুফলও মিলছে। কমছে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য খরচ পড়ে ৪৩ ডলার। ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের জন্য ৬৫ ডলার। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা হয়।

৪দিন ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর। এর মধ্যে কার্গো ডেলিভারি না নিলে তার খরচ নির্ভর করে আমদানিকারকের সিদ্ধান্তের ওপর। ফ্রি টাইমের পর চার্জ যুক্ত হতে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিং খরচ ২৯৮ ডলার। এর সঙ্গে ট্রান্সপোর্ট কস্ট, আমদানিকারকের সরবরাহ নিতে বিলম্ব, বিস্ফোরক অধিদফতর, কৃষি বিভাগ, কাস্টমসহ বিভিন্ন দফতরের অনুমোদন আনার সময় জড়িত। ১৯৮-২০০ ডলারে নামিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা ভারতের সমপরিমাণ।

রফতানির জন্য ৩৬ ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সময় লাগে ১ ঘণ্টা কয়েক মিনিট। বাকি সময়টা অফডক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের গেট পর্যন্ত। আমদানির ক্ষেত্রে ১৬৮ ঘণ্টা বা ৭ দিন।

তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শূন্য দিনে জেটিতে ভিড়েছিল ৫টি জাহাজ। ২০১৯ সালের মার্চে ভিড়েছে ৩২টি। জুলাইয়ে ১ দিনে বন্দর জেটিতে ভিড়েছিল ৬টি, মার্চে ৫৯টি। ২ দিনে আগে ছিল ৩টি, মার্চে ১৯টি। ৩ দিনে ছিল ৮টি, মার্চে ১টি। ৪ দিনে ছিল ৫টি।২০১৮ সালের জুলাই মাসে ১৪ দিনে জাহাজ ছিল ১টি। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, দক্ষতা ও নজরদারির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, একটি জাহাজ কত কনটেইনার নিয়ে আসছে তা নজরদারি করছি। আগে ২ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ৬০০-৭০০ কনটেইনার নিয়ে আসতো। অথচ এ রকম তিনটি জাহাজের ধারণক্ষমতা একটিতেই রয়েছে। অহেতুক বেশি জাহাজ আসা বন্ধ হলে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজের জট থাকবে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৬০ শতাংশের কম কনটেইনার নিয়ে আসতে পারবে না জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম বলেন, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস এবং কস্ট অব ডুয়িং টাইম কমাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যেসব কনটেইনার জাহাজ শূন্য দিনে কিংবা একদিনে জেটিতে ভিড়েছে সেগুলো যদি বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ থাকতো তাহলে দৈনিক ১০ হাজার ডলার চার্জ আসতো। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ায় এটি সাশ্রয় হচ্ছে। যা কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর উদ্যোগেরই অংশ।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদেরও খরচ সাশ্রয়ে উদ্যোগী হতে হবে। বন্দরের যে কর্মযজ্ঞ তাতে অনেক অংশীজন রয়েছে। সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। বর্তমানে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা পরিবহন ব্যয়। এটিও বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ও কস্ট অব ডুয়িং টাইম কমেছে। এটা নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বিভিন্ন ইকোনমিক জোন, মেগা প্রকল্প, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বে-টার্মিনালসহ অন্যান্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।