কাজে নামতে পারেনি ৪ টাওয়ার কোম্পানি

0
615

কাজে নামতে পারেনি ৪ টাওয়ার কোম্পানি। ফলে বন্ধ রয়েছে টাওয়ার সেবার প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম।

এ অবস্থায় চরম ভোগান্তির শিকার দেশের সাড়ে ১৫ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক। টাওয়ার নেটওয়ার্ক সমস্যায় প্রতিদিনই বাড়ছে কল ড্রপসহ নানা বিভ্রাট।
নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ ৬ মাস ধরে থমকে গেলেও ভ্রূক্ষেপ নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির। অভিযোগ উঠেছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের অনীহার কারণে কালক্ষেপণ চলছে। আগামী ৬ মাসেও কাজ শুরুর সম্ভাবনা নেই।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের অবস্থা খুবই খারাপ। অন্য অপারেটরদের কলেও হচ্ছে নানা ভোগান্তি।

গত ৬ থেকে ৮ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার ১৫টি এলাকায় বিটিআরসি কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) পরীক্ষা চালায়। এতে যান্ত্রিকভাবে ৯০ সেকেন্ডের ৩ হাজার ৩০০টি কল করা হয়।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রামীণফোনের কল ড্রপ হার ৩.৩৮ শতাংশ, রবির কল ড্রপ ১.৩৫ শতাংশ, বাংলালিংকের ০.৫৮ শতাংশ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের ১.৫৮ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, গ্রামীণফোনে সংযোগের জন্য গড় ১০.১৪ সেকেন্ড সময় লেগেছে। পাশাপাশি রবিতে ৬.১৫ সেকেন্ড, বাংলালিংকে ৭.৬৯ সেকেন্ড ও টেলিটকে ৭.১১ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয়েছে।
ডায়াল করা নম্বরে সংযোগ পাওয়ার জন্য বিটিআরসির আদর্শ অপেক্ষার সময় ৭ সেকেন্ড। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চারটি টাওয়ার কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

লাইসেন্স প্রদান প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশে মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশে আরও একটি নতুন মাইলফলক।

তিনি বলেন, সরকার লাইসেন্স দিয়েছে কাজেই যে যত টালবাহানা করুক এর বাস্তবায়ন হবে। এ নিয়ে কেউ কোনো অনিয়ম করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গ্রামীণফোনের পরিচালক এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপারেটরদের কাছে যেসব টাওয়ার আছে সেগুলোর মালিক হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অপারেটর।

নতুন লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিগুলো যদি এসব টাওয়ার নিতে চায় তাহলে নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, যদি এই মূল্য নির্ধারণে অপারেটর ও টাওয়ার কোম্পানিগুলো ব্যর্থ হয় তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থ সংকটে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে পারেনি। এ অবস্থায় টাওয়ার বিক্রি থেকে যে অর্থ পাবে তা যদি নতুন টেকনোলজি ও নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করে তবে গ্রাহকরা উপকৃত হতে পারেন।

গত বছর নভেম্বর মাসে চারটি কোম্পানিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দেয় সরকার।

ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিডেট, সামিট পাওয়ার লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডকে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দেয়া হয়।

আইন অনুযায়ী লাইসেন্স দেয়ার পরদিন থেকেই মোবাইল ফোন অপারেটররা আর টাওয়ার ব্যবসা করতে পারবেন না। তাদের নিজস্ব টাওয়ারগুলোও লাইসেন্স পাওয়া ৪ টাওয়ার কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে হবে।
এরপর তাদের কাছ থেকে ভাড়া বা বৈধ পন্থায় টাওয়ার সেবা নিতে হবে। কিন্তু বিক্রি দূরের কথা এখন পর্যন্ত টাওয়ারের মূল্য পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিতে পারেনি বিটিআরসি। এ সুযোগে বিদেশি একটি কোম্পানির দখলে চলে গেছে টাওয়ার ব্যবসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১ বছরের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এতে গ্রাহক সেবায় ব্যাঘাতসহ সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমও ভেস্তে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ এর আগেও অপারেটরদের কারসাজিতে নম্বর পরিবর্তন না করে অপারেটর পরিবর্তন অর্থাৎ এমএনপি সেবা চালু করতেও দীর্ঘদিন সময় লেগেছে।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হস্তক্ষেপে চালু করা সম্ভব হয় ওই সেবা। এবার লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো টাওয়ার কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাইসেন্স পাওয়া এক অপারেটর বলেন, ইতিমধ্যে গড়ে প্রতিটি কোম্পানি ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। ইডটকোর এই বিনিয়োগ আরও অনেক বেশি।

পুঁজি নিয়ে কাজের জন্য অপেক্ষা করছে ৩ কোম্পানি। কিন্তু সরকার ও অপারেটরদের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন না।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে তাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। অপারেটররা কালক্ষেপণের জন্য বিদ্যমান টাওয়ারের আকাশ কুসুম দাম হাঁকাচ্ছে। নানা টালবাহানা করছে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে এ লাইসেন্স দেয়া হয়।

এর ফলে মোবাইল টাওয়ার লাইসেন্স রোল আউটের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো কোনো নতুন টাওয়ার স্থাপন করতে পারবে না।
এছাড়া এক অপারেটর আরেক অপারেটরের কাছে আর টাওয়ার ভাড়া দিতে পারবে না। তবে লাইসেন্স পাওয়া টাওয়ার কোম্পানির কাছে তাদের টাওয়ার বিক্রি করতে পারবে।

লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর জেলা শহর, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ উপজেলা, চতুর্থ বছর ৬০ শতাংশ উপজেলা ও পঞ্চম বছর দেশের সব উপজেলায় টাওয়ার সেবা দিতে হবে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্সের জন্য লাইসেন্স ফি ২৫ কোটি টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ৫ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় বছর থেকে বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা দিতে হবে ১ শতাংশ হারে। লাইসেন্সের মেয়াদকাল ১৫ বছর।

বিটিআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার পর ইতিমধ্যে অনেকদিন পার হয়ে গেছে। লাইসেন্স পাওয়া এক অপারেটর ইতিমধ্যে নতুন টাওয়ার নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। এ কারণে তারা চাচ্ছেন বাকি ৩ অপারেটরও যেন দ্রুত কাজ শুরু করতে পারেন। এ লক্ষ্যে শিগগিরই তারা নতুন ৪ টাওয়ার অপারেটর ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে যৌথ মিটিং করবেন।