কাদের সিদ্দিকী, রফিউর রাব্বি, এস এম আকরাম

0
97

ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এস এম আকরাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষে কাদের সিদ্দিকীসহ ৩টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন শেষে আকরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
গুম-খুনের বিরুদ্ধে রায় দেবে নারায়ণগঞ্জবাসী: আকরাম
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আগে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এস এম আকরাম বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের পর নারায়ণগঞ্জের সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। তবে নারায়ণগঞ্জের মানুষের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। অরাজনৈতিক সংগঠন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছি।
আকরাম আরও বলেন, নেতা-কর্মীদের অনুরোধে আমি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং এলাকার জনগণ আমাকে চায়। আমি এমপি থাকাকালে কোন অন্যায় করিনি। সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিইনি। কারও সম্পদ দখল করিনি। তাই ২৬শে জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলের সমর্থকরাও আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন বলে আশা করছি।
নারায়ণগঞ্জে মহাজোটের অস্তিত্ব নেই উল্লেখ করে এস এম আকরাম বলেন, জাতীয় পার্টি এখন বিরোধী দলে। তাই এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভোট তিনিই পাবেন। তারা (আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী) তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে এস এম আকরাম দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে বিএনপির ভোট তো আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিতে যাবে না। তাদের ভোটও আমিই পাবো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এস এম আকরাম বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনসহ গুম ও খুনের ঘটনায় সরকারের এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা। তাই সরকার এ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে আরেকটি মাগুরার নির্বাচন করতে চাইবে না। তাহলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন- আমি, আনোয়ার (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) ও রাব্বি (নিহত ত্বকীর পিতা) আমরা তিনজনই একসঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন করেছি। আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। অপশক্তির হাত থেকে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে আইভীর নির্বাচন করে তাকে বিজয়ী করেছি। তাই আমার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার আগেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। আমি বিশ্বাস করি ২৬শে জুন ব্যালটের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাস, গুম, খুন ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তাদের রায় ুেদবে।
কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকীসহ একই দলের অপর দু’জন। এরা হলেন- দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার।
কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে রোববার বিকালে জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিষয়টি বিকালে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন কাদের সিদ্দিকী। তবে এ তিনজনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে প্রার্থী থাকবেন তা এখনও চূড়ান্ত করেনি দলটি। এ বিষয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর-প্রতীক বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা ও নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
এর আগে শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জে এক কর্মিসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, নারায়ণগঞ্জে একের পর এক খুন গুম এই জেলার মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। অসুস্থ রাজনীতি নারায়ণগঞ্জকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। এ অপরাজনীতি দূর করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে অসুস্থ রাজনীতি দূর করতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৬শে জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে শিগগিরই দলের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিয়ে শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবে। শনিবার নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমানের স্মরণসভায় এলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।