কাপ্তাই সড়কে হাটু সমান মাটি 

0
235
এক যুগেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে
নজরুল ইসলাম লাভলু,কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের শীলছড়িস্থ সীতার ঘাট এলাকাধীন কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড় ধ্বসে হাটু পরিমাণ মাটি জমে দূর্ভোগে পড়ে হাজারও মানুষ।  বেকায়দায় পড়তে হয় শিক্ষার্থী, রোগী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ হাজার  শ্রেণী পেশার মানুষকে।  কিন্তু দূর্ভোগ লাঘবে গত এক যুগ ধরে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কার্যকারী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সড়কের পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও ড্রেনের উপর ভরাট হওয়া মাটি পরিস্কার না করায় ড্রেনগুলি মাটি ভরে সমান হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে কাদা পানি ভরে একাকার হয়ে পড়ে।ড্রেন ভরাট থাকার কারণে পাহাড় ধ্বসে সরাসরি মাটি নেমে আসে সড়কে।
     সরেজমিন দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিতেই কাপ্তাইয়ের শীলছড়িস্থ সীতার ঘাট এলাকার কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় ধ্বসে হাটু পরিমাণ মাটি জমে যায়। এতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধশতাধিক যানবাহন আটকে দূর্ভোগে পড়তে দেখা যায় দুরপাল্লার যাত্রী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কাপ্তাই ঘুরতে আসা পর্যটকবাহী কয়েকটি বাসসহ কয়েকশ’ নারী পুরুষকে।
     এদিকে, ওইদিন কয়েক ঘন্টা সড়কে যানজট লেগে থাকলেও কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের মাটি অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কেউ এগিয়ে না আসায় চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাইয়ে বনভোজনে আসা একটি বাসের শতাধিক যুবক বাধ্য হয়ে নিজেররাই মাটি অপসারণ করে তাদের পরিবহনকে নিরাপদে আনতে সক্ষম হয়।
       এই বিষয়ে ঘটনাস্থল হতে মুঠো ফোনে সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম এস.ডি.ই শম্ভু সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে জানান। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় শুক্রবার সকালে সড়ক থেকে মাটি অপসারণ করার কথা জানান তিনি।      কিন্তু  মাটি অপসারণ করা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের দু’পাশে যে কয়েকশ’ গাড়ি আটকে দূর্ভোগে পড়েছে , তাদের কি হবে, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওনাদের একটু ধৈর্য্য ধরে থাকতে মাটি না সরানো পর্যন্ত।
      এদিকে,ওইদিন ঘটনার প্রায় দুই ঘন্টা পর সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাপ্তাই প্রতিনিধি মোঃ কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে এলে তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাদের পর্যাপ্ত লোকবলের সংকটের কথা। তবে শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধানে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
   পরে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল ওয়াগ্গা ইউপি সদস্য মাহাবুব আলমের মাধ্যমে আপাদত স্থানীয় কিছু শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখা হবে বলে ইউএনও আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান।উল্লেখ্য, এসড়কেটি এখনো যান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক হয়নি।
       ওয়াগ্গা ইউপি সদস্য মোঃ মাহাবুব আলম জানান, দীর্ঘ এক যুগ ধরেই এই সমস্যা চলমান রয়েছে। কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও  সড়ক বিভাগ কর্তৃক ড্রেনগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কার্যক্রমে কোন উদ্যোগ নেই। ফলে প্রতি বর্ষায় এভাবেই সড়কে মাটি জমে অসহনীয় দূর্ভোগে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু এর স্থায়ী একটা সমাধান করা অতিব জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
      দূর্ভোগে পড়া স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোঃ সৈকত, চট্টগ্রাম মূখী যাত্রী তৌফিকুল আলম নূর ভুট্টো, বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকেয়া জাহানসহ আরও অনেকেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা যদি সড়ককে জনগণনের চলাচলের উপযোগী করে তোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের এত হাজার হাজার টাকা বেতন ভাতা দিয়ে পুষে রাখা অর্থহীন।  আমরা এর সঠিক জবাব চাই।  প্রতিবছর এভাবে আর কাদামাখা শরীর নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইনা।
       সড়ক বিভাগের অনুপস্থিতিতে দূর্ভোগে পড়ে সড়কে জমে থাকা মাটি অপসারণ করা অনেকের মধ্যে মোঃ আনিছুল হক নামক এক যুবকের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরকার যেখানে উন্নয়নের জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, সেখানে আমরা এখানে ঘুরতে এসে এত কষ্টে পড়ে গেলাম কেন।  এসব মাটি অপসারণ করা কি সড়ক বিভাগের কাজ নয়? যদি তাদের কাজই হবে তাহলে আটকে পড়ার কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেও তারা কোথায়? কেন আমাদের সকলকে নিজের হাতে মাটি সরিয়ে গাড়ি নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হলো?