কিশোরগঞ্জে মাড়াইকল যাচ্ছে সারা দেশে

0
212

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে |চলতি বোরো মওসুমের ধান মাড়াইকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে মাড়াইকল বিক্রির ধুম পড়েছে। এ জন্য কারখানাগুলোয় চলছে দিন-রাতের ব্যস্ততা। দেশের ৪০টির মতো জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে এখানে তৈরি ইঞ্জিনচালিত পাওয়ার থ্রেসার বা ধান মাড়াই কল। এসব জেলার কৃষক ধান মাড়াইয়ে সনাতন পদ্ধতির বদলে ব্যবহার করছেন সহজে ব্যবহারযোগ্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী এসব মাড়াইকল। দিন দিনই এর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইঞ্জিতচালিত এ মাড়াইকল উদ্ভাবনকে সংশ্লিষ্টরা দেখছেন কৃষি প্রযুক্তিতে বিজ্ঞানের অনবদ্য অবদান হিসেবে। এর উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা জমির পাশেই অল্প সময়ে দ্রুত মাড়াই করতে পারছেন পাকা ধান। স্থানীয়ভাবে ‘বোমা মেশিন’ হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনচালিত পাওয়ার থ্রেসার বা মাড়াইকল কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি শুরু হয় ২০০১ সালে। এর ধারাবাহিকতায় এখানে ১৫-২০টি কল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। কিশোরগঞ্জ ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে মাড়াইকল যাচ্ছে সারা দেশেমৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ঢাকা, বগুড়া, বরগুনা, পটুয়াখালী, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ দেশের অন্তত ৪০টি জেলায় রয়েছে এ কলের বিরাট চাহিদা। বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় দেশজুড়ে এ কলের সরবরাহ বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আর তাই শহরের ওয়ার্কশপগুলোতে মাড়াইকল তৈরির ধুম পড়েছে। কৃষকরা জানান, এখানে তৈরি মাড়াইকলে এক লিটার ডিজেল ব্যবহার করে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক একর জমির ধান মাড়াই করা যায়। তা ছাড়া খড়ও থাকে অক্ষত। তাই বোরো ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এসব কল বিক্রিরও ধুম পড়ে যায়। শহরের অন্যতম মাড়াইকল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আওলাদ মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী শেখ আসাদুজ্জামান খোকন জানান, আকার ও হর্স পাওয়ার ক্ষমতাভেদে প্রতিটি কল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। গত মওসুমে তারা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কল বিক্রি করেছিলেন। এ বছরও অনুরূপ বিক্রির আশা করছেন। এ লক্ষ্যে গত আগস্ট মাস থেকে তাদের কারখানায় মাড়াইকল তৈরির কাজ শুরু হয়। চলবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, এখানে মাড়াইকল তৈরির কারখানায় প্রায় এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। আল-আমিন মাড়াইকলের স্বত্বাধিকারী মো. আল-আমিন জানান, প্রতিটি মাড়াইকল তৈরিতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় কয়েক শ’ কারিগর ও শ্রমিক এখন এ কল তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, ধানে চিটা ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মওসুমে এখনও সেভাবে কল বিক্রি শুরু হয়নি। অনেকেই পুরনো কল মেরামত করে কোন রকমে কাজ চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তা ছাড়া ইঞ্জিনচালিত এসব মাড়াইকল তৈরিতে যেসব কাঁচামাল লাগে তার সবই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লোহার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে যে কল ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেতো, তা এখন ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বোরো ধান কাটাকে ঘিরে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের মাড়াইকল শিল্প। দীর্ঘ আট মাস এখানকার কল কারখানাগুলোতে চলে শ্রমিক ও কারিগরদের ব্যস্ততা। এ সময়টাতে মাড়াইকল যায় জেলার হাওরের বিভিন্ন গ্রামে ও দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের দোরগোড়ায়। সরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংকঋণের সুযোগ পেলে কিশোরগঞ্জে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে উদ্যোক্তারা জানান।সূত্র-মানবজবিন