কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং তহশীল অফিস বেদখল

0
73

ভূমি কর অফিস ও কাচারি পুকুর ময়লার ডিপু

লিটন কুতুবী,কুতুবদিয়া-কক্সবাজার:
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং তহশীল অফিসের ভূমি কর অফিস ও কাচারি পুকুর ময়লার ডিপু হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ধুরুং বাজারের ব্যবসায়ীরা। কুতুবদিয়ার উত্তর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত ধুরুং বাজার। এই বাজারে চারতলা ভবন থেকে শুরু করে টিন,খড় ও বাঁশের তৈরি হাজারের অধিক দোকান রয়েছে এ বাজারে। এখানে রয়েছে দক্ষিণ ধুরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুরুং পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস। বাজারের সাথে লাগোয়া উত্তর ধুরুং তহশীল অফিস ও খাস পুকুর রয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ধুরুং তহশীল অফিসটি ধুরুং বাজারে ৫০ শতক ভূমির উপর স্থাপিত। তার পাশে রয়েছে কাচারি পুকুর (খাস পুকুর) যার আয়তন ৮৭ শতক। বর্তমানে অবস্থিত উত্তর ধুরুং তহশীল অফিসটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ। কাচারি পুকুরটি বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে ব্যবহার করে থাকে। তহশীল অফিস ভাঙা থাকায় কর্মরত তহশীলদার গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে বড়ঘোপ তহশীল অফিসে কাজ করছে।
ধুরুং বাজার এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম জানান, বিগত দুই বছর ধরে বাজারের ব্যবসায়ীরা তহশীল অফিসের ভূমি এবং খাস মহালের পুকুরে ময়লা আবর্জনা ফেলে মারাতœক পরিবেশ দূষণ করেছে। পুকুরটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে বেশ কিছু চা এবং মুদির দোকান। ঐসব দোকানের ময়লা আবর্জনা খাস পুকুরে ফেলে। এছাড়াও মুসল্লিরা অযু করা থেকে শুরু করে বাজারে স্থাপিত বিভিন্ন হোটেল ও চায়ের দোকানে চা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় এ পুকুরের পানি। এমনকি পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। বাজারে অনাকাংকিত অগ্নিকান্ডের মত দূর্ঘটনায় বাজারের এই খাস পুকুরের গুরুত্ব থাকলেও পুকুরটির সঠিকভাবে ব্যবহারসহ রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোন ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় পুকুরটি বর্তমানে পচাঁ দিঘীতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পুকুরের পূর্ব-পশ্চিম পার্শ্বে গড়ে উঠা হোটেল,চায়ের দোকানসহ বাজারের অন্যান্য দোকানের ময়লা আবর্জনা প্রতিনিয়ত এই পুকুরে ফেলার কারনে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুকুরটির পানি ব্যবহার করে অনেকেই বিভিন্ন পানিবাহীত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর পরও অনুন্যপায় হয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এই পুকুরের পানি। স্থানীয় একদল প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুকুরটি দীর্ঘ মেয়াদী লীজের কথা বলে বেদখল করে রাখায় পুকুরটির এই দূর্দশা হয়েছে।
ধুুরুং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশেদুল আলম জানান, বিদ্যালয়ের নতুন অবস্থানে যাওয়ার পূর্বে পুকুরের পঁচা পানির দূর্গন্ধে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান কার যেত না,দম বন্ধ হয়ে আসত। অব্যবস্থাপনার কারণে পুকুরটি পঁচা দিঘীতে পরিণত হওয়ায় এই পুকুরের দুর্গন্ধে বর্তমানে পুকুরের দক্ষিণ পার্শ্বের ছাত্রাবাসে অবস্থান করে লেখাপড়া করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে পরীক্ষার্থীদের। পুকুরের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দিতে কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।
বাজারের ব্যবসায়ী মনজুর আলম বলেন, খাস পুকুরটি দীর্ঘ মেয়াদী লীজ না দিয়ে পুণঃসংষ্কার করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রাখা হলে সর্বসাধারণ অনেক উপকৃত হবে। তারা ধুরুং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনেরও দাবী জানান।
এব্যপারে উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) পদ্মাসন সিংহ বলেন, ধুরুং বাজারের খাস পুকুরটি ওই বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুকুর। পুকুরটি সংস্কারের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চৌধুরী বলেন, পুকুরটি জনস্বার্থে ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পুকুরটির গাইড ওয়াল ও পশ্চিম পাড়ে সাধারণ জনগনের ব্যবহারের জন্য একটি সিড়ি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।