কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ট গ্রাহকরা

0
100

লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবির) আওতায় পরিচালিত কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অতিষ্ট গ্রাহকরা। সন্ধ্যার পর দৈনিক পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের মধ্যে সপ্তাহে ৪দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। কুতুবদিয়া দ্বীপের প্রায় ৬শত গ্রাহক বিগত দুই মাস ধরে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বিভ্রান্তিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। পিডিবি কর্তৃপক্ষ ভলবো ৫শ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর মেশিন দিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা সদরের বড়ঘোপ বাজার,উপজেলা গেইট, হাসপাতাল গেইট, মগডেইল, লামার বাজার, বিদ্যুৎ মাকের্ট, ষ্টীমার ঘাট, খাদ্যগুদাম এলাকাসহ প্রায় ৬শত বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এ গ্রাহকরা দীর্ঘ দেড় মাস ধরে নিয়মিত বিদ্যুৎ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ মাসের আম কাঠাল পাঁকার তাপমাত্রায় খরা রোদে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত গ্রাহকরা। রমজান ও ঈদের সময় কুতুবদিয়ার গ্রাহকরা বিদ্যুৎ না পেয়ে অনেকে ব্যাক্তিগতভাবে ৬/৭ কিলোওয়ার্ড জেনারেটর মেশিন ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি এবং মসজিদে বাতি জালাচ্ছে। বর্তমানে ভলবো জেনারেটর মেশিন দ্বারা কেবল মাত্র সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। জাতীয় গ্রীট লাইনের বিদ্যুতে যে হিসেবে লোড়শেটিং চলে তা কুতুবদিয়ায় স্থাপিত পিড়িবির জেনারেটর মেশিন দ্বারা সরবরাহকৃত বিদ্যুতের লোড়শেটিং নয় যান্ত্রিকক্রুটি দেখিয়ে একেবারেই সপ্তাহে ৩/৪দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ । গত মে মাস ও চলতি জুন মাসে এ রির্পোট লিখা ১৫দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উৎপাদন সরবরাহ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ কোন ঘোষনা ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

বড়ঘোপ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, কুতুবদিয়ায় পিডিবির কর্তৃপক্ষ আশি দশকের থেকে জেনারেটর মেশিন দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন। গত দুই মাস ধরে পিডিবির কর্তৃপক্ষ কোন ঘোষনা ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভ্রান্তি করে যাচ্ছে। তবে ঠিকই পিডিবি কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ না করে যথারীতি গড় বিল করে বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে গ্রাহকদের থেকে। একই অভিযোগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণের। কুতুবদিয়া উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা অসোক কুমার রায় বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপে কেবলই সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। তখনই অফিস বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ ও ব্যবহার হয় না। এরপরও গত কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে পিডিবি কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকার মায়ের দোয়া রেষ্টুরেন্টের মালিক দিদারুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকাটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র এলাকায় হওয়ায় বিদ্যুৎ অফিসের নাম করণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ মার্কেট। তারপরও বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিনিয়তই বন্ধ রাখে। ষ্টীমার ঘাট এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক আমান জানান, কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ জেনারেটর মেশিনের যান্ত্রিক ক্রুটি দেখিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এ ফাঁকে কর্তৃপক্ষ কুতুবদিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত ডিজেল কি পরিমাণ খবচ হচ্ছে তার হিসাব দেখার কেউ নেই।
কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী আবুল হাসনাতের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ স্টেশনে ভলবো ৫শ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জেনারেটর মেশিন রয়েছে, প্রায় ৬শ গ্রাহকের জন্য ৩৩০ কিলোওয়ার্ড বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। বর্তমান মেশিনটি বিগত দুই বছর পূর্বে কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ স্টেশনে স্থাপন করে। যান্ত্রিকক্রটির কারণে মেশিনটি সকল গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। এ অবস্থায়ও দৈনিক ৪শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী ব্যাপারে গ্রাহকরা বলেন, ভলবো ৫শত কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর মেশিনটি যান্ত্রিকক্রুটির কারণে গত ১৪মে অঘোষিতভাবে বন্ধ রেখেছে। তাই দুই দিন পর পর বড়ঘোপ বাজার, বিদ্যুৎ মার্কেট, ষ্টীমার ঘাট, মগডেইল, উপজেলা গেইট, হাসপাতাল গেইট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে। এ ব্যাপারে পিডিবির কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুতুবদিয়া দ্বীপ এখনো গ্রীড লাইনের আওতায় আনা হয়নি। বর্তমানে জেনারেটর মেশিনের মাধ্যমে গ্রাহকদের দৈনিক ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে পিডিবি কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে গ্রীড লাইনের আওতায় নেয়ার জন্য জরীপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।