গণতন্ত্র রক্ষার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রাষ্ট্রপতি

0
74

আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি
সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সুদৃঢ়করণ এবং সামাজিক শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা ও অনুশীলন জাতির বিভিন্নমুখী সমস্যার সামাধান দিতে সক্ষম, এই বিশ্বাস সরকারের সকল কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়েছে।

আজ সোমবার দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম ও এ বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে তিনি ভাষণ শুরু করেন। ৪টা ৪৮ মিনিটে সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতির ভাষণের বাকিটা পঠিত বলে গণ্য হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে মহাজোট সরকার গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। দেশে সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে।

‘বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।’

আবদুল হামিদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলনের নামে কতিপয় রাজনৈতিক দলের জ্বালাও- পোড়াও, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন-জখমসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও এগিয়ে গেছে।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, বিনিয়োগ-শিল্প ও বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি, পরিবেশ ও জলবায়ু, নারী ও শিশু উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব মন্দার প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অব্যাহত প্রবৃদ্ধি, সহনীয় মূল্যস্ফিতির নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থিনৈক স্থিতিশীলতা, বাজেট ঘাটতির সহনীয় মাত্রা, রেকর্ড পরিমাণ বৈদিশিক মুদ্রার স্থিতি এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার মানদণ্ড অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

দেশের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ সরকারের উন্নয়ন দর্শনের অন্যতম কৌশল। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন করা উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসেবে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার রূপরেখা (২০১০-২১) শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করা হয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও জোরদার করার লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকারের সময়ে ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে, যা দেশে স্থাপিত কোনো আঞ্চলিক বা আর্ন্তাজিক সংস্থার প্রথম সচিবালয়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আজ একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ,স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং অন্যান্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

তিনি সরকারি ও বিরোধীদলকে নির্বিশেষে জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।