গর্জে উঠবেন মাশরাফি–সাকিবরা—এটাই চাওয়া সমর্থকদের

0
113

গর্জে বাংলাদেশ দলবিমানবন্দরের বাইরে লোকে লোকারণ্য। সাংবাদিক, বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিমানবন্দরের লোকজন—সব মিলিয়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই ভিআইপি লাউঞ্জের আশপাশেও। একটু পরই সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসবে বাংলাদেশ দল। আসবে স্বপ্নপূরণের নায়কেরা। সেই মাশরাফি বিন মুর্তজা, সেই সাকিব আল হাসানরাই তো! তার পরও আজ যেন তাদের চেহারাটা একটু অন্য রকম দেখাবে। ওই তো মাশরাফির কপালে রাজ–তিলক। সাকিবের মাথায় ক্রিকেট-সম্রাটের মুকুট। আরে, ওটা তামিম ইকবাল না, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান!
স্বপ্নটা আপাতত এ পর্যন্তই থাকুক। এমনকি আর এটুকুও ভাবার দরকার নেই যে, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দল কী সাফল্য নিয়ে ফিরলে স্বপ্নের ভেলায় ভাসাটা ও রকম হবে। এই এক টুকরো ছবি আসলে বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগীরই আশার প্রতিচ্ছবি।
না, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে মাশরাফি-সাকিবরা বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ফিরবে, এমন আশা কেউ করছে না। কেউ বলছে না, বিশ্বকাপে মাশরাফির দল একটা তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে দিক, যাতে বাকি জীবন ক্রিকেটের বড় দলগুলোর দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে বাংলাদেশ। চাওয়া শুধু এটুকুই—তারা ভালো খেলুক। সেই ভালোর নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই, সংজ্ঞা নেই। হতে পারে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যাবে, কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু। আবার এমনও হতে পারে, গ্রুপ পর্বেই শেষ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। সেটা যা–ই হোক, যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু যেন ঢেলে দিয়ে আসা যায় বিশ্বকাপের মাঠে। গ্রুপ পর্বে দুর্বল প্রতিপক্ষদের হারাক, শক্ত প্রতিপক্ষদের ভিত কাঁপিয়ে দিক। তাতে গন্তব্যটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমরা জানি না। আমরা শুধু চাই, বিশ্বকাপের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ নিজেদের লড়াই করার মতো প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাক। প্রমাণ করুক, চার বছর আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ এক নয়।
হ্যাঁ, এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে আশার জাল বুনতে গেলে চার বছর আগের একটু ফ্ল্যাশব্যাক লাগবেই। ২০১১ সাল, বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশও। দেশের মাটির বিশ্বকাপে ক্রিকেট অনুরাগীদের প্রত্যাশার মিনার আকাশ ভেদ করল। সাকিব-মুশফিক-তামিমদের কাছে যেন আশার শেষ নেই! মানুষ জানে না, কী তারা দিতে পারবে, কিন্তু বড় একটা কিছু চাই। এমন কিছু যা কেউ কল্পনাও করতে পারছে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেই প্রত্যাশার চাপেই নুয়ে পড়ল ক্রিকেটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক শর নিচে অলআউট হওয়ার লজ্জায় হেঁট হলো মাথা। ইংল্যান্ডকে হারানোর পরও বিদায় গ্রুপ পর্ব থেকেই।
বাংলাদেশ দল এরপর গত চার বছরে কী করল, অত ফিরিস্তির দরকার নেই। শুধু জানুন, আরেকটি বিশ্বকাপ আসার ঠিক আগের বছরে তারা খেলল চরম হতাশাজনক ক্রিকেট। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে জিম্বাবুয়েকে হারানো ছাড়া ২০১৪ সালজুড়ে কেবলই ব্যর্থতা। ভালো যায়নি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাও। আপনি বাস্তুববাদী হলে এমন একটা বছরের পরপরই হতে যাওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা কীভাবে করেন, তার ওপর এবারের বিশ্বকাপটা যখন হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো বিরুদ্ধ কন্ডিশনে? আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড না হয় কাগজ-কলমের শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে, গ্রুপের বাকি চার দলই তো বাংলাদেশের জন্য প্রবল প্রতিপক্ষ! তাদের দু-একটাকে হারিয়ে বাংলাদেশ শেষ আটে যেতে পারলে খুবই ভালো, কিন্তু সেটা তারা যাবেই, আগে থেকে এমন কল্পনা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তা ছাড়া ওই দলগুলোও তো সেখানে বিশ্বকাপই খেলবে, প্রীতিম্যাচ নয়।
কিন্তু যুক্তি দিয়ে আবেগকে আটকানোর সাধ্য কার? বেশির ভাগ সময়ই তারা বাঘ হয়ে উঠতে পারে না। অথচ ক্রিকেট এলেই আমাদের মনে পড়ে, মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকেরা তো আসলে বাঘের দেশেরই ছেলে! ৫২, ৭১-এর প্রজন্ম তারা নয়, তবে বীর-বীরাঙ্গনাদের উত্তরাধিকার তো! আমাদের আবেগ বলে—রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুতেই যেখানে বাংলাদেশ বিরুদ্ধ স্রোতকে জয় করে এগিয়ে যায়, ক্রিকেটে কেন নয়? বাংলাদেশ যত দিন বিশ্বকাপে টিকে থাকবে, টিভি পর্দা থেকে তাই আমাদের চোখ সরবে না। বিশ্বকাপ দেখতে এবার রাত জাগতে না হলেও অফিস-আদালতের অনেক কর্মঘণ্টাই যে ক্রিকেটে ব্যয় হবে, তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যাচ্ছে।
ক্রিকেট আসলেই বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় আবেগের জায়গা। আর মঞ্চ যত বড় হবে, আবেগের বাড়াবাড়িও তত বেশি থাকবে। বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দল সাফল্যের মালা গলায় ফিরবে, সে স্বপ্ন আমরা দেখবই। তবে স্বপ্নটা যেন দেখা হয় বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে।