গ্রাফিনের জগতে আপনাকে স্বাগতম…

0
130

প্রান্ত স্বপ্নিল:

গ্রাফিনজীবজগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভরা জোয়ারে মানব মস্তিষ্কের কিছু শক্তিমত্তার পাশাপাশি এর সীমাবদ্ধতা ও বেশ পরিলক্ষনীয়। এখনো এমন কিছু বিষয় অজানা থেকে গেছে যা বিজ্ঞান অনুরাগীদের অনেকটা বিরক্তি উৎপাদনের কারণ। হয়তোবা অজানাকে জানার দীর্ঘপ্রয়াসই মানুষকে এমন দুঃসাধ্য সাধনে সহায়তা করেছে। প্রজাতি হিসেবে, আমাদের প্রধান অক্ষমতা ছিল উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে না পারা যার ফলে আমরা বিভিন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী ও বাদুরের সৃষ্ট শব্দ শুনতে পারতাম না। এমন যদি হতো, বাদুর কিংবা তিমির শব্দ শুনতে পেতাম!!!! হ্যাঁ, সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের এই আকাংখাকে বাস্তবে পরিণত করেছেন বারক্লির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।খুব সাম্প্রতিক সময়ে তারা কাজ করে চলেছেন গ্রাফিন নির্মিত একটি পাতলা ডিভাইস যা মাইক্রোফোনে ব্যবহার করা হলে আমরা শব্দত্তর(২০ কিলোহার্টজ এর উপরে) কিংবা শব্দেতর(২০হার্টজ এর নিচে) দু ধরনের শব্দই শুনতে পাবো। উল্লেখ্য, বাদুড়ের শ্রুত শব্দের কম্পাঙ্ক ৯ কিলোহার্টজ হতে ২০০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত। আর এই ডিভাইস ৫০০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত শব্দ গ্রহণ করতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে, তার ক্ষমতা কেমন।।
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কি এই গ্রাফিন?? কেমনই বা দেখতে?? আর কর্মপদ্ধতিটাই বা কেমন?? এই জানার আগ্রহটুকু মেটানোর জন্য উইকিপিডিয়াতে ঢু মারতেই অবাক হতে হল। মজার ব্যপার হল, কার্বনের অনেকগুলো পরিচিত রুপের মধ্যে কেন জানি কেউ এর কথা বলে না। এবার অবাক হওয়ার পালা শুরু্‌………
গ্রাফিন এক ধরণের কার্বন, যা একটি সরু চাকতিরূপে বিরাজ করে, চাকতিটির ক্ষেত্রফল যত বড়ই হোক না কেন পুরুত্ব হয় মাত্র একটি পরমাণুর আকারের সমান। এক্ষেত্রে পরমাণুগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত হয় যে, একটি দ্বিমাত্রিক মৌচাকের মত আকৃতি গঠিত হয়। এটি কাঁচের মত স্বচ্ছ। ইস্পাতের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব মৌল ও যৌগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। প্লাস্টিকের মধ্যে শতকরা মাত্র ১ ভাগ গ্রাফিন মেশালে তা তড়িৎ সুপরিবাহীতে পরিণত হতে পারে। অনেকগুলো ন্যানোটিউবকে না মুড়িয়ে একের উপর আরেকটি রেখে দিলে যে কাঠামোটি গঠিত হয় স্থূলভাবে তার সাথে গ্রাফিনের তুলনা করা যেতে পারে
২০০৪ সালে অক্টোবরে গ্রাফিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এটি আবিষ্কারের জন্য আন্দ্রেঁ গেইম এবং কনস্টানটিন নভোসেলভ ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

গবেষকদলের প্রধান পদার্থবিদ অ্যালেক্স জেটেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “ সমুদ্রের স্তন্যপায়ী কিংবা স্থলে থাকা
বাদুড়ের তৈরি শব্দ শোনার ক্ষেত্রে এতদিন মানুষ কোন উন্নততর গবেষণার কথা চিন্তা করতে পারে নি, কারণ হয়তো প্রযুক্তিগত সেই সুবিধাটুকু মানুষ তখনও অর্জন করে নি। তিনি আরও যোগ করেন, এতদিন মানুষের শ্রাব্যতারসীমার উপরের কিংবা নিচের কম্পাঙ্কের শব্দগুলো গ্রহণ করার মতো কোন উপযুক্ত শব্দগ্রাহক ছিল না যার ফলশ্রুতিতে মানুষের শ্রাব্যতারসীমা ব্যতীত অন্য কোন শব্দ কর্ণগোচর হতে পারে না।
Proceedings of the National Academy of Sciences শীর্ষক একটি গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয় যে, মাইক্রোফোন তৈরির ক্ষেত্রে পর্দায় ব্যবহৃত কাগজ কিংবা প্লাস্টিক এর স্থলে যদি গ্রাফিন ব্যবহৃত হয়, তবে উচ্চকম্পাংকের আলট্রাসনিক রেডিও তৈরি হয় যার মাধ্যমে তারবিহীন যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সমুদ্রের গভীর তলদেশে অবস্থানকারী জলজ প্রানিদের নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তা যে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে, তা সহজেই ভাবনীয়। এছাড়া সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়ে প্রতিধ্বনির পরিবর্তে এই প্রযুক্তি বেশ ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে।গ্রাফিন ভিত্তিক এই মাইক্রোফোনের কার্যকারিতা প্রমাণে জেটেল এবং তার সহকারীরা বাদুড়ের সৃষ্ট শ্রবণোত্তর শব্দ রেকর্ড করতে সফল হন। পাশাপাশি বিরতিহীন কম্পাঙ্কের শব্দ শোনার ক্ষেত্রে এটি নিয়ে আসবে আমূল পরিবর্তন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, এই বিরতিহীন শব্দ শ্রবণক্ষমতা বাড়াতে ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। মজার ব্যপার হল যে, গ্রাফিন দিয়ে এই মাইক্রোফোন প্রস্তুতি অত্যন্ত সহজ। গবেষক জেটেল বলেন, “যদিও বা ইলেক্ট্রনিক্স ও ন্যানোপ্রযুক্তিতে গ্রাফিন ব্যবহার এখনও গবেষণাধীন কিন্তু সে ব্যপারে অগ্রগতিটা খুব একটা লক্ষণীয় নয়, তবে সবচেয়ে সহজেই ব্যবহৃত হচ্ছে মাইক্রোফোন ও লাউডস্পিকারে যেখানে উন্নতিটাও চোখে পড়ার মতো”।
সত্যি বিজ্ঞান পারেও বটে!!!!শেষ পর্যন্ত অধরা স্বপ্নকে ধরা দিতেই হল!!! জয় বিজ্ঞানের জয়!!!!!!!