গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়া নীলগাই

0
267

গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়া যে বিরল প্রজাতির নীলগাইটি নিয়ে ঠাকুরগাঁওসহ দেশজুড়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে সেটি গাভীন অর্থাৎএর পেটে বাচ্চা রয়েছে। ধরা পড়ার সময় মানুষের হামলার শিকার হওয়ায় নীলগাইটি মুখে আঘাত পেয়েছে। বতর্মানে প্রাণীটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে এনে রাখা হয়েছে। সেখানেই নীলগাইটিকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

নীলগাইটির পেটে বাচ্চা থাকার কথা দিনাজপুরের পশুসম্পদ বিভাগের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বন বিভাগের দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও রেঞ্জের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ।  তিনি আরও জানান , নীলগাইটি সম্ভাব্য বহুপথ পাড়ি দিয়ে এসে ধরা পড়ার সময় মানুষের ধস্তাধস্তিতে কিছুটা আহত হলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে  এনে রাখা হয়েছে। মুখে আঘাত পাওয়ায় সে ঠিকমতো খাচ্ছে না। দিনাজপুর পশুসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রাণীটির শরীরে স্যালাইন পুশসহ চিকিৎসা চলছে।  প্রাণিটির সঠিক যত্ন, সংরক্ষণ ও চিকিৎসার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান জানান।

দুর্লভ এই প্রাণীটির পুরো দেহ দেখতে গরুর মতো হলেও ঘাড় থেকে মাথা ও মুখ পর্যন্ত হরিণ সদৃশ। এর মুখ হরিণের মতো সূচালো, তবে মাথায় শিং নেই। এই নীল গাইটি মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে। পশুসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই নীল গাইটি স্ত্রী প্রজাতির। এর গায়ের রঙ লালচে বাদামি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নীল গাইয়ের গায়ের রঙ হয় নীলচে ধূসর। মূলত পুরুষ প্রাণীটির গায়ের রঙ থেকেই প্রাণীটির নামকরণ করা হয়েছে।

বন বিভাগের দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও রেঞ্জের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, ৪০/৫০ বছর আগেও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর এলাকার বন ও মাঠ-প্রান্তরে নীলগাইয়ের দেখা মিলতো। জ্যোৎস্না রাতে দলবেঁধে প্রাণীটি তৃণ খেতে মাঠে চরে বেড়াতো। তবে এখন প্রাণীটি দুর্লভ। বাংলাদেশের কোনও বনে এখন নীলগাই আছে এমনটা শোনা যায় না। তবে ঠাকুরগাঁও থেকে দিনাজপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর সংলগ্ন বনাঞ্চলে এখনও নীলগাইয়ের দেখা মেলে।

.

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার পর, ধরা পড়ার পর ধস্তাধস্তিতে মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়ায় খেতে না পারা, সর্বোপরি পেটে বাচ্চা থাকায় প্রাণীটির জীবনাশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর পশুসম্পদ বিভাগ আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাকে বাঁচাতে।

রাণীশংকৈল প্রেসক্লাব সভাপতি মোবারক আলী জানান, মঙ্গলবার বিকেলে নেকমরদ ইউনিয়নের যদুয়ার গ্রামে গ্রামবাসীর হাতে এটি ধরা পড়ে ।

এলাকাবাসীর বরাতে স্থানীয় সাংবাদিক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, বিকালে যদুয়ার গ্রামের ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রেখা বরাবর কুলিক নদীতে মাছ ধরার সময় স্থানীয় আবু জাহিদ নামে এক ব্যক্তি প্রাণীটিকে দেখেন। কিছুটা অবাক ও ভয় পেয়ে তিনি প্রাণীটির কাছে না গিয়ে আশেপাশে থাকা লোকজনকে ডেকে আনেন।

জিয়া আরও বলেন, এরপর গ্রামবাসী ঘিরে ধরে পশুটিকে ধরে ফেলেন এবং সেখানে বেঁধে রাখেন। অপর গ্রামবাসী সারোয়ার জিয়াকে জানান, পশুটিকে তখন ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কারণ তার ধারণা এটি অনেক দূর পাড়ি দেওয়ায় ক্লান্ত ছিল। তবে ধরার সময় পশুটি কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে পরে জানা যায়। সবাই ধরাধরি করে পশুটিকে আবু জাহিদের বাড়িতে আনেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে পশুটিকে দেখতে গ্রামবাসী আবু জাহিদের বাড়িতে ভিড় জমায়। পরে জানা যায় এটি বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই।

খবর পেয়ে প্রথম থেকেই ব্যাপারটি মনিটরিং করেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথমে এটিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব দেন রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি আফরিদাকে।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, জেলা প্রশাসক খবরটি জানানোর পর রানীশংকৈল উপজেলার সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান আলীকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শাহজাহান আলী ও নেকমরদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটি যদুয়ার গ্রামের আবু জাহিদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। পরে নীলগাইটিকে রানীশংকৈল উপজেলার রামরাই দিঘিতে রাখা হয়। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নীলগাইটিকে সরকারি উদ্যোগে পাহাড়ায় রেখে বুধবার দিনাজপুর জাতীয় উদ্যানে পাঠানো হয়।

এখন প্রাণীটি সেখানেই অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. আখতারুজ্জামান জানান এখনও কিছু জানা যায়নি নীলগাইটি ঠিক কোথা থেকে এসেছে , হতে পারে ভারত থেকে , হতে পারে সীমান্তের কোনও বনাঞ্চলে এটি লুকিয়ে ছিল। তবে যাই হোক রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে এটিকে সংরক্ষণ করা হবে।