ঘুরে দাঁড়িয়েছে সঞ্চয়পত্র খাত

0
44

সমাপ্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত শুধু ঘুরে দাঁড়ায়নি, লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের পাশাপাশি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গেল অর্থবছরে এ খাতে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি। বলা চলে, গত বছর সরকারকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে সহায়তা করেছে সঞ্চয়পত্র খাত। ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কম ছিল। এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিল সরকার। যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার কমে আসায় মানুষ সঞ্চয়পত্র খাতে বেশি ঝুঁকেছেন। আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশও মানুষকে সঞ্চয়পত্র খাতে ঝুঁকতে সহায়তা করেছে। এতে নগদায়ন কম হওয়ায় নিট বিক্রি তথা প্রকৃত আয় বেড়েছে। তবে এ আয় উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না হলে তা ভবিষ্যতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়লে সরকারের জন্য তা ইতিবাচক। কারণ এ খাতে প্রকৃত আয় দিয়ে সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যয় করতে পারে। এতে কিছুটা হলেও সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা কমে। তবে এর ঝুঁকির দিকটিও রয়েছে। সরকার যদি এ খাতের পুরোটাই খরচ করে ফেলে তবে তা ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বিনিয়োগ উৎপাদনশীল খাতে গেলে অর্থনীতি গতিশীল হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার তুলনামূলক বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীদের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ঋণের বোঝা বাড়বে। তবে সঞ্চয়পত্রের আয় উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হলে অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বিক্রি বেশি হওয়ায় সংশোধিত বাজেট বাড়িয়ে ৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। প্রাথমিক বাজেট লক্ষ্যমাত্রা ধরলে সমাপ্ত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার হিসাবে বেড়েছে ৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এদিকে নতুন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। বিক্রি হয়েছে ২৪ হাজার ৩০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পরিশোধ করা হয়েছে ১২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। আর সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে আগের বিক্রীত সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের পরিমাণ বাদ দিয়ে নিট বিক্রি বা প্রকৃত আয় হিসাব করা হয়। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, জুন মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার। মূল পরিশোধ হয়েছে ৯৬৪ কোটি টাকার। এতে নিট বিনিয়োগ এসেছে ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। যা আগের মাস মে’তে এসেছিল ১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৭৩ কোটি টাকা। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পাওয়ায় সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ছিল মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
– See more at: http://www.alokitobangladesh.com/last-page/2014/08/10/89751#sthash.pEE8zIUk.dpuf