চট্টগ্রামকে কীভাবে যে অবহেলা করা হচ্ছে

0
78

শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হালদা নদী রক্ষা কমিটির আয়োজনে ‘হালদা নদীর বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং করণীয়’ শিরোনামের একটি আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এই বাহাসে জড়ান।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সভাপতি ছিলেন ইস্ট ডেল্টার উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
চট্টগ্রামকে কীভাবে যে অবহেলা করা হচ্ছে
সিকান্দার খান ‘ইউনূস সুহৃদ’ চট্টগ্রামেরও সভাপতি। তিনি এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়িয়েছেন, যেখানে শিক্ষক ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূসও।

সভায় বক্তব্যে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রাম হচ্ছে গেটওয়ে অব বাংলাদেশ। রাজস্বের এক চতুর্থাংশ যাচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। এই চট্টগ্রামকে কীভাবে যে অবহেলা করা হচ্ছে!

“আমরা তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী আছি, কথিত বুদ্ধিজীবী। নিজেকেও আমি বলছি সেটা। আমরা কথা বলি, কিন্তু কোনো কাজ আমাদের নেই।”

এ প্রসঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “ড. ইউনূসকে নিয়ে আমরা অনেকে অনেক কিছু বলি। ড. ইউনূস চট্টগ্রামে একটা সামাজিক ব্যবসা দিয়ে যদি শুরু করেন, হালদা নদী তো… কোনো প্রবলেমই না উনার জন্য এটা।”

মুহাম্মদ ইউনূসের বাড়ি চট্টগ্রামের হালদা নদীর তীরবর্তী হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে।
ইফতেখার উদ্দিন বলেন, “কই, উনি তো হালদা নদী নিয়ে কখনো কথা বলেন নাই? আজকে আমার স্যার আছেন, সিকান্দার স্যার। স্যারকে বলছি। আমরা ড. ইউনূসকে যে পেতে চাই।

“একজন ব্যক্তি শান্তি পুরস্কার পেয়ে এসেছেন। উনি হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ ডলারের ব্যবসা করছেন। কই চট্টগ্রাম নিয়ে কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা নাই কেন? হালদা নদী তো কোনো বিষয়ই না উনার জন্য।”

এরপর সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ইফতেখারের বক্তব্যের জবাব দেন উপাচার্য সিকান্দার খান: “আমাদের সৌভাগ্য যে ইউনূসের মতো একজন মানুষ চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিল, যার জন্য গোটা বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটা বিশেষ সম্মানের অধিকারী। কিন্তু সেই ইউনূস চট্টগ্রামের জন্য কিছু অবদান রাখা, এটার সুযোগ তার হয়নি।

“একটি কথা বলা হলো যে, ইউনূস লক্ষ লক্ষ ডলার বিদেশে ব্যবসা করে বা এটা ওটা। অন্যান্য জাতিকে সাহায্য করে বা এটা ওটা, এসব কথা ঠিক নয়। ইউনূস কখনও ডলার দিয়ে কোনো দেশকে সহায়তা করার মতো কোনো কাজ কখনও করেন নাই এবং সেই দিকে তার মনোযোগও নাই।”

‘ইউনূস সুহৃদ’র সভাপতি বলেন, “তিনি যেটা করেছেন সেটা হচ্ছে-নিজে পরীক্ষিত তার যে পন্থা আছে, সেই পন্থাগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে বলেছে যে, তোমরা এই পথে চেষ্টা করে দেখ। আমরা বাংলাদেশে করেছি এটা হয়েছে।

“সে নোবেল প্রাইজ পেল, সেটার একমাত্র অবদান হচ্ছে-তিনি বলেছেন যে, গরিব মানুষকে বিশ্বাস করা যায়, টাকা দেয়া যায়- এই জিনিসটা আগে মানুষ বিশ্বাস করত না।

“যার কিছু নাই তাকে কী করে বিশ্বাস করব? এটা তিনি (ইউনূস) প্রমাণ করেছেন, যার কিচ্ছু নাই তাকে তুমি টাকা দিয়ে বিশ্বাস করতে পার। তার উন্নয়ন সে করবে। তোমাকে বুঝাইয়ে দিতে হবে না, সে উন্নয়ন কীভাবে করবে। সেটা গ্রামীণ আমেরিকা-ই বলি আর গ্রামীণ যে কোনো জায়গাই বলি। এই একটা মতবাদই দিয়েছেন।”

“আর এখন যেটা সোশ্যাল বিজনেসের কথা বলা হচ্ছে, সোশ্যাল বিজনেস আমাদেরই করতে হবে। কারণ সোশ্যাল বিজনেস যেদিন করে দেখানো যাবে- এটা দিয়ে হয়, তখন পৃথিবী গ্রহণ করবে। সেটার জন্য এখন পরীক্ষার সময় চলছে।”

সিকান্দার খান বলেন, “আমাদের এখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, হালদা কেন সোশ্যাল বিজনেসে যাবে না? অবশ্যই যাবে-হালদা। কিন্তু সেটার জন্য আগে আপনার ছোট পরীক্ষাগুলোয় পাশ করে আসতে হবে।

“তখন দেখা যাবে যে, হালদা পাড়ের মানুষকে বিশ্বাস করা যায়। হালদা পাড়ের মানুষকে গোটা হালদা দিয়ে দেওয়া যায়। এই হালদা আপনারা করেন। সোশ্যাল বিজনেসের কথাটাই হচ্ছে এটা- যে আপনাকে মালটা দিয়ে দেব। পুরো মালটা আপনার কাছে বিশ্বাসের জন্য অর্পণ করব। সে বিশ্বাস আপনি রক্ষা করবেন।”

সোশ্যাল বিজনেসের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নেই মন্তব্য করে সিকান্দার খান বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।”

সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন এবং হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে সংবর্ধিত করা হয়।

হালদা রক্ষা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল হক হায়দরী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী ও অধ্যাপক আবু নোমান বক্তব্য রাখেন।