চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সাম্পান খেলা

0
119

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সাম্পান খেলা।
সাম্পান খেলাদুপুর তিনটার আগে ভরে গেছে উত্তর পাড়ের অভয়মিত্র ঘাট থেকে দক্ষিণ পাড়ের চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠ। নদীর বুকেও যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। দুই লক্ষাধিক মানুষের মূর্হুমূহু ধ্বনি আর করতালির তালে তালে বয়ে চলেছে সাম্পান।
সাগরে চলছে তিন নম্বর সর্তক সংকেত। পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া সকল নৌযানকে নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থান করতে নির্দেশ রয়েছে। আবহাওয়ার এই অবস্থায় সাগর মোহনায় কর্ণফুলী নদীও যেন নতুন জোয়ারের উন্মাদনায় মত্ত। ঢেউ আর বাতাসের নাচানাচিতে একাকার নদীর পানি। কিন্তু নদীর ঢেউকে উপেক্ষা করে শনিবার কর্ণফুলী নদীর বক্ষে অনুষ্ঠিত হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সাম্পান খেলা।

সাম্পান মাঝির বৈঠার কে-কোরত, কে-কোরত শব্দে এগিয়ে চলেছে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণকারীদের সাম্পান। কে আগে যাবে তার চেষ্টার অন্ত নেই। এ যেন কর্ণফুলী ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সাম্পান আর চাঁটগাইয়া মানুষের মিলনমেলা।

বিকেল সাড়ে চারটায় নদীর পূর্ণ জোয়ারের সময় সাম্পান খেলা (বাইচ) প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছয়দল সাম্পান মাঝি তাদের সাম্পান নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।

সাম্পান খেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে চরপাথরঘাটার জাহাঙ্গীর আলম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন শাহ আমানত বড় ঘাট শিকলবাহা মাষ্টারঘাটের কাশিম আলী মাঝি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন চরলক্ষ্যা বোর্ড বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি নুর মোহাম্মদ মেম্বার।

অংশগ্রহণকারী মাঝিরা হচ্ছেন- ইছানগর কর্ণফুলী ঘাটের আবদুল মালেক মাঝি, চরপাথরঘাটার আবু সিদ্দিক মাঝি ও খোয়াজ নগরের হাসমত আলী মাঝি। সাম্পান খেলা ১৪২১ এর উদ্বোধন করেন চরলক্ষ্যার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী।

পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী শুধু চট্টগ্রামের নয় বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করতে আমার পক্ষ থেকে সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কর্ণফুলী দখল দুষণের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আজিম আলী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে নগর পরিকল্পনাবিদ চুয়েট সিন্ডিকেট সদস্য আলী আশরাফ, পরিবেশকর্মী ছিদ্দিক আহমদ, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, কিংবদন্তীর চট্টগ্রাম, সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মীর্জা, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক হায়দার আলী রনি।

পুরস্কার বিতরণ শেষে শুরু হয় চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার। এতে নৃত্য পরিবেশন করেন, খাগড়াছড়ি থেকে আগত ত্রিপুরা শিল্পীরা। বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী সংগী আচার্য্য, কল্যাণী ঘোষ, গীতা এবং বিশিষ্ট নৃত্যু শিল্পী হানিফ খন্দকারের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন মায়াবী ডান্স গ্রুপ।