চট্টগ্রামে উৎপাদিত আলুর স্বাদ আলাদা, কদরও বেশি

0
71

চট্টগ্রামে উৎপাদিত আলুর স্বাদ আলাদা। ক্রেতাদের কাছে এই আলুর কদর বেশি। আলুর ভালো ফলন হয়েছে চট্টগ্রামে এবার । দামও ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এখন খুশি। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর মৌসুমের শেষের দিকে দাম অতিরিক্ত কমে যায়। এবারও সেই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে চার হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ফসল উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৬৬ মে. টন। এরমধ্যে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, রাঙ্গুনীয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি উপজেলায় বেশি উৎপাদন হয়। এছাড়াও হাটহাজারী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা উপজেলায়ও আলুর ভালো চাষাবাদ হয়। অন্যান্য উপজেলা ও নগরীতে সীমিত আকারে আলুর চাষাবাদ হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে রেকর্ড পরিমাণ আলুর উৎপাদনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তর। দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৩২ হেক্টর। ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ১৫৪ মে. টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে ৩৮শ হেক্টর জমিতে। আলু উৎপাদন হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৬০ মে. টন। ২০১৪-১৫ সালে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫৩৭ হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে ৪৪৩৭ হেক্টর জমিতে। ফসল উৎপাদন হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৬৬ মে. টন। ২০১৫-১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪৮০ হেক্টর জমিতে। ফসল উৎপাদন ৮৮ হাজার ৩২ মে. টন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমে হয়েছে ৭২ হাজার

২৪০ মে. টন। প্রতি হেক্টরে আলু ফলন

লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৬৫৯ মে. টন। বর্তমানে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ মে টন। এবার রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদনের আশা করছেন কৃষকেরা।
বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের আবুল হোসেন (৫৫), আবু সৈয়দ (২৮) জানান, শস্য মৌসুমে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা করা হয় না। বেশিরভাগ কৃষক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও শেষের দিকে দাম কমে যায়। এসময় আবার লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হয়। স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে কৃষক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবে।
বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকার কৃষক আনোয়ার মিয়া জানান, চার গ-া জমিতে চাষ করতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছি। আরও ২০ হাজার টাকার আলু বিক্রির আশা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এই চার গ-া জমিতে আলু ছাড়া সাথী ফসল হিসেবে চিচিঙ্গা, টমেটো রোপণ করা হয়েছে।
একই এলাকার চাষী মোজাম্মেল হক জানান, আলু ক্ষেতে এখন বহুমুখী ফসল উৎপাদনের সুবিধা রয়েছে। একই জমিতে শিম, খিড়া, শসার চাষাবাদ করা হচ্ছে। তাই কৃষকদের মধ্যে এখন আলু চাষে উৎসাহ বাড়ছে।
বাঁশখালীর শিলকুপ ইউনিয়নের চাষী নুুরুল হক জানান, ৫ গ-া জমিতে ৫-৬ মণ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিকেজি আলু ২৫/২৬ টাকা দরে প্রায় ২ মণের মত আলু বাজারে বিক্রি করা হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা খাগরিয়া এলাকার কৃষক রহমত আলী জানান, ১০ গ-া জমিতে আলু চাষে ৮ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। উৎপাদিত আলু ৪০-৫০ হাজার আলু বিক্রির আশা করছেন তিনি।
ষোলশহর কর্ণফুলী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে উৎপাদিত আলু খুচরা বাজারে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অন্যান্য জেলার আলু থেকে চট্টগ্রামের উৎপাদিত আলুর স্বাদ আলাদা। ক্রেতাদের কাছে এই আলুর কদর বেশি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলা ও চকরিয়ায় গোল আলু চাষাবাদ ভালো হচ্ছে। এখানকার আলু স্বাদে ভালো। কদরও বেশি। এবার দামও ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আলু চাষে মিশ্র ফসলের চাষাবাদ করা হয়। সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা, টমেটো, শিম বীজ লাগানো হয়। কৃষকেরা এই কৌশল দিন দিন বাড়ছে। এতে কৃষকও লাভবান হচ্ছে।