চট্টগ্রামে দেশের প্রথম বেসরকারি গাড়ি কারখানা

0
355

নিউজচিটাগাং স্পেশাল:: চট্টগ্রামে দেশের প্রথম বেসরকারি গাড়ি কারখানা স্থাপন করছে ‘প্রোটন পিএইচপি’।

প্রোটন পিএইচপি

বেসরকারি উদ্যোগে দেশে তৈরি প্রথম সেডান ‘কার’ চলবে বাংলাদেশের রাজপথে। ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম এ কার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করছে দেশের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলি।

বছরে এক হাজার ২০০ গাড়ি উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথম গাড়ি সংযোজন কারখানা স্থাপন করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি পরিবার। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেই এই কারখানায় উৎপাদিত সেডান কার বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। কারখানা স্থাপনে পিএইচপিকে কারিগরি সহায়তা দেবে বিশ্ববিখ্যাত মালয়েশিয়ান ‘প্রোটন অটোমোবাইল’। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বরুমছড়া এলাকায় ৩০ একর জমির ওপর স্থাপিত কারখানায় ৫০ জন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবেন।

গাড়ির দাম প্রসঙ্গে মহসিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘দেশে বিক্রীত ১৫০০ সিসির টয়োটা করোলা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দামেই প্রোটন গাড়ি পাওয়া যাবে। জ্বালানি খরচও পড়বে তুলনামূলক কম। ২৫ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গাড়িতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই কার আমরা মেরামতের ব্যবস্থা করে দেব বিনা খরচে। দেশের ছয়টি জেলায় ছয়টি শোরুমের পাশাপাশি থাকবে সার্ভিস সেন্টারও। ফলে যন্ত্রাংশেরও কোনো জটিলতা দেখা দেবে না।’

মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বর্তমান চুক্তি পাঁচ বছরের। এরপরই আমরা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির দিকে মনোযোগ দেব। একসময় হয়তো শতভাগ বাংলাদেশে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ দিয়েই গাড়ি তৈরি করতে পারব।’

পিএইচপি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে নির্মিত প্রোটন সেডান কারের নামকরণ হবে ‘প্রোটন পিএইচপি’। বিশ্ববিখ্যাত মালয়েশিয়ান ‘প্রোটন’ ব্র্যান্ডের সম্পূর্ণ নতুন এই গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ১২ মার্চ মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরে প্রোটন সেন্টার অব এক্সেলেন্স কমপ্লেক্সে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রোটনের সিইও দাতো আবদুল হারিথ আবদুল্লাহ ও পিএইচপি বোর্ড অব প্রোটন পিএইচপি৩ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রোটনের চেয়ারম্যান ডা. মাহাথির মোহাম্মদ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তার পারভেজ চৌধুরী হিরু, পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু।

প্রোটন পিএইচপি২১৯৮৫ সালে প্রোটন সাগা দিয়ে সেডান কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল মালয়েশিয়ায়। সেই বছর চার কোটি মানুষের দেশ মালয়েশিয়ায় এ ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ১৩ হাজার। পরের বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ হাজার। বর্তমানে চীন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও জার্মানিতে প্রোটন গাড়ি রপ্তানি হচ্ছে।

বেসরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথম গাড়ি সংযোজন কারখানা স্থাপন করছে পিএইচপি পরিবার জানা গেছে, তিন বছর ধরেই জাপানের বিশ্বখ্যাত মিৎসুবিশি করপোরেশনের সহযোগিতায় দেশে প্রথম সেডান কার সংযোজনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল সরকারি গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ। এ জন্য মিৎসুবিশির কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখেনি। দেশে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি হয় পাজেরোসহ বিভিন্ন ধরনের জিপ, বাস, ট্রাক। বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে এসব গাড়ি বানানো হতো চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ডে অবস্থিত কারখানায়। বেসরকারি উদ্যোগে আফতাব অটোমোবাইলসে যাত্রীবাহী বাস ও জিপ সংযোজন করে থাকে। এছাড়া নিটল টাটা কিছু ছোট ট্রাক-হিউম্যান হলার দেশে সংযোজন করলেও এবারি প্রথম সেডান কার সংযোজনের কাজ হাতে নিল পিএইচপি পরিবার।

১৬০০ সিসির প্রোটন প্রিভে মডেলের গাড়ি সংযোজনের ব্যাপারে পিএইচপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। শুরুর দিকে প্রতি বছর এ কারখানায় তৈরি হবে ১২শটি সেডান কার। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৩০ একর জমির ওপর স্থাপিত এ কারখানায় ৫০ জন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবে।

পিএইচপি ফ্যামিলি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইলস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তার পারভেজ হিরু বলেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত টার্বো ইঞ্জিন ব্যবহৃত হবে প্রোটন প্রিভে সিরিজের এসব কারে। এতে ভ্রমণ হবে আরামদায়ক। গাড়ি চালানো যাবে অটো এবং ম্যানুয়াল দু’ভাবেই। দেশের যেকোনো জায়গায় যেকোনো গ্যারেজে টয়োটার মতো প্রোটনও মেরামত করা যাবে।’
Proton pribhe1বহুজাতিক শিপিং কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে প্রতি বছর জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি দেশে আসে। এর মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই হলো রিকন্ডিশন্ড সেডান কার।
১৯৮৫ সালে প্রোটন সাগা দিয়ে সেডান কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল মালয়েশিয়ায়। সেই বছর ৪ কোটি মানুষের দেশ মালয়েশিয়ায় এ ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ১৩ হাজার। পরের বছর এ কারের জনপ্রিয়তা এতোটাই বেড়েছে যে বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৬ গুণেরও বেশি ৮৩ হাজার। বর্তমানে যুক্তরাজ্য থেকে মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্রাহকদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি নির্মাণ করে থাকে প্রোটন।

‘প্রোটন প্রিভে’ এই সিরিজের প্রিমিয়ার, এক্সিকিউটিভ ও স্ট্যান্ডার্ড এই ৩ ধরনের মডেলের প্রোটন কার বাজারজাত করা হবে। ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করা হবে বিশ্ববিখ্যাত টার্বো ইঞ্জিন। দেশে চালু বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির নতুন ও রিকন্ডিশন্ড সেডান কারের অধিকাংশই হলো ১৫০০ সিসি’র। আর সেডান বাংলাদেশে বাজারজাত করবে ১৬০০ সিসি’র যা দূরপাল্লার যাত্রায় বেশ আরামদায়ক ও জ্বালানিসাশ্রয়ী হবে।