চট্টগ্রাম এগিয়ে না গেলে বাংলাদেশ এগুবেনা

0
103

চট্টগ্রাম এগিয়ে না গেলে বাংলাদেশ এগুবেনামন্ত্রী-মেয়র, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ সবাই একই শ্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়েছেন, ‘এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম। ’ এ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে বন্দরনগরীর পাঠকপ্রিয় দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র নয় মাসব্যাপী বিশেষ আয়োজনের যাত্রা শুরু হয়েছে।  এক যুগে পদার্পণের শুভলগ্নে দাঁড়িয়ে সুপ্রভাত বাংলাদেশের শ্লোগান আর বন্দরনগরীর বিশিষ্টজনদের কণ্ঠস্বর মিলে গেছে একই মোহনায়।

সোমবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লুতে বসে বিশিষ্টজনদের মিলনমেলা।  সেখানে ‘এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম’ লোগো উন্মোচন করা হয়।  একইসঙ্গে নয় মাসব্যাপী সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র বিশেষ অনুষ্ঠানমালার ঘোষণা দেয়া হয়।  স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল মোমেন।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ড.অনুপম সেন, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেস্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এম এ সালাম, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুপ্রভাত যে বলছে এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম, এটা যথার্থ।  কারণ চট্টগ্রাম যদি এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ এগুবে।  চট্টগ্রাম এগিয়ে না গেলে বাংলাদেশ এগুবেনা।  বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন।  এজন্য চট্টগ্রামভিত্তিক অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলীতে টানেলের কাজ এ বছর উদ্বোধন হবে।  কর্ণফুলীর পাড়ে আরও দু’টি শহর হবে।  মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার হচ্ছে সেটাকে আমরা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাব।  মিরসরাইয়ে ১৫ হাজার একর এবং আনোয়ারায় ৩০০ একর জমির উপর দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে।

তিনি বলেন, এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যেসব ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন তারা আবারও চট্টগ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন।

ড.অনপুম সেন বলেন, পশ্চিমের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আগে থেকেই আছে।  এখন পূবের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।  আমাদের পূবে যেতে হবে।  এবং যেতে হবে চট্টগ্রাম দিয়েই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।  চীন যেমন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে বিশ্বে এক নম্বর স্থান দখল করেছে তেমনি আমরাও পোশাক শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছি।  আমাদের পোশাক শিল্প জেগে উঠেছে।

‘আমাদের এগিয়ে যাওয়া সার্থক হবেনা, যদি চট্টগ্রাম গড়ে না উঠে।  কারণ চট্টগ্রামই আমদানি-রপ্তানির প্রধান যোগসূত্র। ’ বলেন অনুপম।

চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম এগিয়ে চলো-যে কাজটি আমাদের রাজনীতিকদের করার কথা, সেই কাজটি করছে সুপ্রভাত বাংলাদেশ।  চট্টগ্রামের সম্ভাবনা প্রচুর।  কিন্তু সেই সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।  এখানেই আমাদের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা।  সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।  বেরিয়ে আসার জন্যই সুপ্রভাতের যে শ্লোগান-এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম, সেটা আমাদের ধারণ করতে হবে।  স্ব স্ব অবস্থান থেকে চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেবার জন্য কাজ করতে হবে।

চবি উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯৫ সালে যে মাষ্টারপ্ল্যান হয়েছে সেটাকে ভিত্তি করেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে হবে।  পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে আমাদের যেতে হবে।  অন্যথায় চট্টগ্রাম শহর একটা বস্তিতে পরিণত হবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন ‍মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন।  শুধু একটি সংবাদপত্র এগিয়ে আসলে হবেনা, সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।  তবেই চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে।  সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র যে স্বপ্ন সেটা সফল হবে।

খলিলুর রহমান বলেন, সবার কথা একটাই-এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম।  শুধু কথার কথা নয়, কাজেও এটা করে দেখাতে হবে।  কাজেও চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে।

সুপ্রভাত পরিবারের অভিভাবক সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়।  বাঙালিরা মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন করেছে।  রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।  স্বাধীনতার পর যে বাংলাদেশকে বলা হত তলাবিহীন ঝুড়ি, সেই দেশের রিজার্ভ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে আর বেশিদিন নেই।  সব সামাজিক সূচকে আমরা এগিয়ে গেছি।  মানুষের মাঝে দেশপ্রেম, মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং স্বাধীনতার চেতনাকে অর্থবহ করতে সুপ্রভাত বাংলাদেশ কাজ করে যাবে-এই প্রত্যাশা করছি।

এম এম সালাম বলেন, সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র যে শ্লোগান-এগিয়ে চলো চট্টগ্রাম, সরকারেরও মনে হয় একই শ্লোগান।  চট্টগ্রামে এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।  এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চট্টগ্রামবাসীকে জেগে উঠতে হবে।  তবেই আমরা এগিয়ে যাব, চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল।  কিন্তু এখন আর অবহেলিত নয়।  আগামী ১০ বছরের মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে।
আবুল মোমেন
স্বাগত বক্তব্যে সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল মোমেন বলেন, সবকিছু ওয়ান সিটিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।  এজন্য চট্টগ্রামে যারা বংশপরম্পরায় ব্যবসায়ী তাদের অনেকেই ঢাকায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।  আর যারা চট্টগ্রামে থাকছেন তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম করতে করতে একধরনের টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে।

‘তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের দিকে নজর দিয়েছে।  সরকার চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে।  এজন্য চট্টগ্রামকে ঘিরে যেন এক নবজাগরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ’ বলেন মোমেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে, ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতে একটি পত্রিকার ভূমিকা দরকার।  নয় মাসের অনুষ্ঠানে সুপ্রভাত বাংলাদেশ সেই ভূমিকাই পালন করে যাবে।

বিশিষ্টজনদের বক্তব্যের পর আবুল মোমেন সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র সম্পাদক রুশো মাহমুদ, নির্বাহী সম্পাদক রফিকুল বাহার, হেড অব নিউজ রইসুল হক বাহার এবং সহযোগী সম্পাদক কামরুল হাসান বাদল ও হোসাইন তৌফিক ইফতেখারকে মঞ্চে ডেকে নেন।

অনুষ্ঠানে সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খানম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারি হাইকমিশনার সোমনাথ হালদার, সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল, সানশাইন গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।