কম বাজেটের কারণে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। তারা ফ্ল্যাগশিপ কিংবা শক্তিশালী প্রসেসরের ফোন কেনার আশা প্রায় ছেড়েই দেন। তাদের আশা পূরণে আবার চমক নিয়ে হাজির হয়েছে শাওমি।
চীনা অ্যাপল খ্যাত ফোন নির্মাতাটির সহযোগী ব্র্যান্ড পোকো সিরিজের প্রথম ফোন এফ১ সে সুযোগ করে দিয়েছে। সম্প্রতি এ উন্মোচন করা হয়েছে, যা শুরুতেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।
এমন কী, বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারেও মাঝারি বাজেটের গ্রাহকদের মধ্যে এ ফোন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
নতুন এ ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেট যুক্ত করার কারণেই এত আলোচনা। কেননা এ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে স্যামসাং, হুয়াওয়ে ও ওয়ানপ্লাসের দামি ও ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোতে।
অফিসিয়ালি ফোনটি এখনও দেশের বাজারে ছাড়েনি শাওমি। তবে ভিন্ন চ্যানেলে পোকো এফ১ এনে বিক্রি শুরু করেছেন অনেক ফোন বিক্রেতা।
সেই সূত্রে হাতে পাওয়া ফোনটি কয়েক দিন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। দেখা যাক, এমন কী আছে ডিভাইসটিতে, যা নিয়ে এত আলােচনা। আর সমালোচনার করার মতো কী রয়েছে এতে।
শুরুতেই ফোনটির ফিচারগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক
- হাইব্রিড সিমকার্ড স্লট
- ৬দশমিক ১৮ ইঞ্চি ডিসপ্লে, রেজুলেশন ১০৮০ x ২২৪৬পিক্সেল
- অক্টাকোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটের প্রসেসর
- ৬/৮ গিগাবাইট র্যাম
- ৬৪/১২৮/২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ
- অ্যান্ড্রেন ৬৩০ জিপিইউ
- অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও
- মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা
- ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট
- ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর, সামনে ইনফ্রারেড থ্রিডি ফেইস আইডি যা অন্ধকারেও কাজ করে
- পেছনে ১২ মেগাপিক্সেল ও ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা
- ২০ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা
- ব্যাটারি ৪০০০ এমএএইচ
ডিজাইন
প্লাস্টিক বডির ফোনটির ডিজাইন বেশ সাদামাটা। আগে থেকে যারা শাওমির ফোন দেখে অভ্যস্ত তাদের কাছে মনে হবে, ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে কোনো ফোকাসই করা হয়নি। ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর থাকলেও দেখতে ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস মনে হবে না।
তবে ডিজাইনের বিষয়টি একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলা যাবে না। মোটামুটি মানের ডিজাইন বলা চলে।
এটির পিছনে রয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ ও ফ্ল্যাশ। ক্যামেরার ঠিক নিচে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।
ডানে রয়েছে ভলিউম আপ ডাউন ও পাওয়ার বাটন। বামে রয়েছে হাইব্রিড সিম কার্ড স্লট। নিচের দিকে রয়েছে স্পিকার ও টাইপ সি পোর্ট। আর উপরে আছে ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক।
নচ ডিসপ্লের ডিভাইসটির চারপাশে বেজেল কম হলেও নিচের দিকে কিছুটা বেশি। এতে ফোনটি দেখতে একটু হলেও দৃষ্টিকটু লাগে। নিচের দিকে বেজেল আরও কমালে তা বাড়তি মাত্রা পেত।
ডিসপ্লে
৬.১৮ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০*২২৪৬ পিক্সেল। এটির স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৮২.২ শতাংশ। মাল্টি টার্চ সুবিধাসহ রয়েছে কর্নিয গরিলা গ্লাস প্রযুক্তি।
ব্রাইটনেসেও পিছিয়ে নেই এটি। সরাসরি রোদেও ব্যবহার করতে কষ্ট হবে না। কালার অ্যাকুরেসিও যথেষ্ট ভালো। অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড মনে হবে না ছবি।
অনেক ব্যবহারকারী নচ পছন্দ করেন না, তাদের জন্য এটি লুকিয়ে রাখার সুবিধা রেখেছে শাওমি।
ফোনটিতে ওয়াইড ভাইন এল১ ডিআরএম সুবিধা না থাকায় নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন বা গুগল প্লে থেকে এইচডি ভিডিও স্ট্রিম করা যায় না। তবে এইচডি রেজুলেশনে ভিডিও না দেখা গেলেও ৫৪০ পিক্সেলে ভিডিও দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না। সব মিলিয়ে বলা যায়, ডিসপ্লে সন্তুষ্ট করার মতো।
পারফরমেন্স
পোকো এফ১ আলোচনার জন্ম দিয়েছে পারফরমেন্সের কারণে। এতে রয়েছে অক্টাকোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটের প্রসেসর। এর মধ্যে ২.৫ গিগাহার্টজের ৪টি কোর ও ১.৮ গিগাহার্টজের ৪টি কোর রয়েছে। গেইমিং সুবিধা দিতে রয়েছে অ্যাড্রেন ৬৩০ জিপিইউ।
৬ ও ৮ গিগাবাইট র্যাম সংস্করণে যথাক্রমে ৬৪/১২৮ ও ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরির সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া রয়েছে ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা।
গিকবেঞ্চ অনুযায়ী, ডিভাইসটি সিঙ্গেলকোরে ২৪৬৭ পয়েন্ট এবং মাল্টিকোরে ৯০৮১ পয়েন্ট পেয়েছে।
গেইমিংয়ে চমৎকার পারফরমেন্স দেবে ডিভাইসটি। পাবজি কিংবা অ্যাসফল্ট ৮-এর মতো উচ্চ গ্রাফিক্সের গেইমগুলো কোনো ল্যাগ ছাড়াই অনায়াসে খেলা গেছে। গ্রাফিক্স সুবিধা দিতে পোকো এফ১ ফোনে রয়েছে অ্যান্ড্রেন ৬৩০ জিপিইউ।
এ ছাড়া একত্রে একাধিক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করেও ল্যাগ দেখা পাওয়া যায়নি। লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি থাকায় অধিক সময় গেইম খেলার পরেও তুলনামূলকভাবে কম গরম হয়।
সব মিলিয়ে মাঝারি বাজেটের ফোন হিসেবে পারফরমেন্স বেশ ভালো। এটি ডিভাইসটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
ক্যামেরা
ডিভাইসটির পিছনে রয়েছে ১২ ও ৫ মেগাপিক্সেলের ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ ও ফ্ল্যাশ। ক্যামেরা দুটির অ্যাপার্চার যথাক্রমে এফ/১.৯ ও এফ/২.০।
এই বাজেটের ফোন হিসেবে ক্যামেরার মান বেশ ভালো। দিনের আলোয় ছবির মান খুবই ভালো, বিশেষ করে আলো-ছায়ায় ভরা দৃশ্যের ছবিও এটি সহজেই এইচডিআর ব্যবহার করে মানসম্মতভাবে তুলতে পারে।
কালার ও ডাইনামিক রেঞ্জও ভালো। এটির এআই বিউটি মোড ছবিকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
এ ছাড়া ক্যামেরার ইআইএস সুবিধার ফলে ভিডিও করার সময় স্ট্যাবিলাইজেশনে মোটামুটি ভালো ফল পাওয়া যাবে। রাতে স্বল্প আলোতেও ভালো ছবি তোলা যায়।
সেলফি তোলার জন্য রয়েছে এফ/২.০ অ্যাপার্চারের ২০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এ ক্যামেরা দিয়ে এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। ক্যামেরাটি বেশ ভালো। যারা ভিডিও ব্লগিং করতে চান তাদের পছন্দের তালিকায় রাখা যাবে ফোনটি।
তবে বলে রাখা ভালো, আমাদের হাতে থাকা রিভিউ ইউনিটটি দিয়ে ছবি তুলতে শুরুতে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে ক্যামেরা মুড পরিবর্তন করতে গিয়ে। কিছু সময় ক্যামেরা চালুর পর মুড পরিবর্তন করলে ক্যামেরা অ্যাপটি ল্যাগ করত।
এটি মূলত একটি সফটওয়্যার বাগ। কয়েকদিন পরে নতুন আপডেট দিয়ে বাগটি ফিক্সড করেছে শাওমি। তাই ফোনটি কেনার পর ক্যামেরায় ঝামেলা করলে সেটিংস থেকে ডিভাইসটি আপডেট দিলে সমস্যাটি থেকে মুক্তি মিলবে।
ব্যাটারি
ডিভাইসটিতে রয়েছে ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি। এটি অনেক উচ্চ শক্তির ব্যাটারি বলা যায়। একবার চার্জে স্বাভাবিক ব্যবহারের টানা একদিন অনায়াসে চলবে। এতে কুইক চার্জ ৩ প্রযুক্তি থাকায় দ্রুত চার্জ হবে। সম্পূর্ণ ডিভাইস চার্জ হতে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো লাগতে পারে।
মূল্য
দেশের বাজারে শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে ফোনটি আনবে শাওমি। যারা আরও দ্রুত ফোনটি হাতে পেতে চান তারা রেঞ্জ টেকসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্মার্টফোনের দোকানে ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকায় এটি পাবেন।
এক নজরে ভালো
- পারফরমেন্স
- ব্যাটারি লাইফ
- ক্যামেরা
- সেলফি
এক নজরে খারাপ
- ডিজাইন তেমন আকর্ষণীয় নয়
- নেটফ্লেক্সে এইচডি ভিডিও চলে না
- ওয়্যারলেস চার্জার নেই