চলতি ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর

0
86
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২০ বছর পর ভাড়া বেড়েছিল ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। তবে এবার আড়াই বছরের মাথায় আবারো বাড়া বাড়ানো হচ্ছে। চলতি মাসের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী সেবার মান ঠিক রাখতে এখন থেকে প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানো হবে। বর্ধিত ভাড়া রেল যাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ ব্যায় অনুপাতে পণ্যবাহী ট্রেনে ভাড়া বাড়ানো হলেও যাত্রীদের ক্ষেত্রে তা অনেক কম।

এদিকে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর কথা বলে ভাড়া বাড়ানো হলেও বিগত সময়ে সেবার মান বাড়াতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে সেবান মান আরো কমেছে। এমন অভিযোগ রেল যাত্রীদের।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর যাত্রী, পার্সেল, মালামাল ও কন্টেইনারের ভাড়া গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ছে। গত ১২ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে রেলপথ মন্ত্রনালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রেলভবনের মার্কেটিং শাখার উপ-পরিচালক (মার্কেটিং) হোসনে আরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ২৬৫ থেকে বেড়ে ২৮৫ টাকা হবে। শোভন চেয়ারে ভাড়া ৩২০ টাকার স্থলে ৩৪৫, এসি চেয়ার ৬১০ টাকার স্থলে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩১ টাকার স্থলে ৭৮৮ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৩ টাকার স্থলে ১ হাজার ১৮৯ টাকা।

ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ৩৯০ থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা।শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৭৩১ টাকা হবে।

ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিটে ৭৩৬ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লেখিত শ্রেণির ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। এছাড়া রেলওয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে নূন্যতম ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে। পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ভাড়া বাড়ছে ৭ থেকে ৯ শতাংশ।

রেলপথ মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের পর রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করে সাধারণ শ্রেণিতে বাড়া খুব বেশি বাড়ানো হয়নি।

ভাড়া বাড়ানোর কারণে যাত্রীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাহ্উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, খুব সামান্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যা এখনো বাসের ভাড়ার চেয়ে অর্ধেক।

তিনি বলেন, সেবা বাড়াতে হলে রেলের আয় বাড়ানো প্রয়োজন।পাশাপাশি আমরা রেলের সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। রেলের ইঞ্জিন ও বগি আসছে। এগুলো যুক্ত হলে সেবা বাড়ানো সম্ভব হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা পেয়েছি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে।

এদিকে রেলে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবের পর থেকেই সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানোর বিরোধিতা করে আসছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব), যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়। রেলকে লাভজনক করতে হলে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ভাড়া বাড়িয়ে নয়।