চলনবিলে মাছের উৎপাদন ৩০ বছরে ৬৩ শতাংশ হরাস ২৫ প্রজাতি বিলুপ্ত

0
148

অপরিকল্পিতভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, কীটনাশকের ব্যবহার, নানা অবৈধ চলনবিলে মাছের উৎপাদনউপায়ে মত্স্য আহরণ, নদী-খাল-বিলে পানির গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে চলনবিল অঞ্চলে গত ৩০ বছরে মাছের উত্পাদন ৬৩ শতাংশ হরাস পেয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে ২৫ প্রজাতির মাছ। জেলা মত্স্য বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

চলনবিল বাংলাদেশের বৃহওম বিল। নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার অংশ বিশেষ, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলার অংশবিশেষ, নওগাঁর আত্রাই, রানীনগর, রাজশাহীর বাগমারা ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত এ বিলটির আয়তন ছিল প্রায় ৭৩ হাজার পাঁচ শ’ হেক্টর। কিন্তু বর্তমানে নানা প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে সংকুচিত এ বিলের আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার হেক্টরে। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ছোট বড় ৩১টি নদ-নদী। খালের সংখ্যা ৩৭টি। বিল রয়েছে ১৭টি।

চলনবিল এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন, বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এর ফলে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত হয়। মাছের চলাচল, প্রজনন, ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হয়। উচ্চ ফলনশীল ফসল উত্পাদনের জন্য আশির দশকে চলনবিল এলাকায় প্রায় সাত হাজার যন্ত্রচালিত নলকূপ বসানো হয়। এর ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদী-খাল-বিলে পানির স্থায়ীত্বকাল কমে আসে। ফসলের জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও বৃদ্ধি সরাসরি বাধাগ্রস্ত হয়। কারেন্ট, বাঁধাই, সোঁতি প্রভৃতি অবৈধ জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরা, মাছের প্রজননকালীন সময়ে গরিব মত্স্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রভাব, জেলেদের অজ্ঞতা, জলাশয় ভরাট করে নানা ভবন-স্থাপনা নির্মাণ প্রভৃতি কারণে চলনবিল অঞ্চলে মাছের উত্পাদন কমে গেছে। বিলুপ্তির পথে নান্দিনা, ভাঙ্গন, ঘোড়া, মহাশোল, তিলাশোল, ভ্যাদা, গজার, রেণুয়া, সরপুটি, রিঠা, বাছা, দেশি পাঙ্গাস, আইড় প্রভৃতি মাছ। তবে মত্স্য বিভাগ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নাটোরে আবার মাছের উত্পাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ১৮ হাজার মত্স্যচাষির অধিকাংশই আধুকি পদ্ধতিতে মাছের চাষ করছেন। গত বছর জেলায় মাছের চাহিদা ছিল ২৭ হাজার ১৫০ টন। উত্পাদন হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৮৬ টন।

নানা সমস্যার কারণে মাছের উত্পাদন আশানুরূপ হচ্ছে না। মত্স্য অধিদপ্তরে দক্ষ জনবলের অভাব, মাছের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণে গবেষণার অভাব, অপ্রতুল বাজেট ছাড়াও মত্স্যচাষি ও মত্স্যজীবীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয় না। বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুত্ বিল আদায় করা হয়। কৃষি জমির খাজনা প্রতি শতাংশ দুই টাকা, অথচ পুকুরের খাজনা ১৫ টাকা।

জেলা মত্স্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, নদী-খাল-বিল-জলাশয়ের ব্যবস্থাপনা ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে মত্স্য মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর, উন্মুক্ত জলাশয়ে মত্স্য সংরক্ষণ ও আহরণে স্থানীয় মত্স্যজীবী ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, খননকৃত সরকারি জলাশয়ের দশ শতাংশ অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করলে মাছের উত্পাদন কয়েকগুণ বাড়বে।