‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সমস্যা-সংকট চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

0
112

ডোর টু ডোরকর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ কাজ ফাঁকিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, চসিকের সেবা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শনিবার (১৫ মে) দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (কেটিআইএ) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠন সভাপতি মাহবুবুল আলম।

স্বাগত বক্তব্য দেন কেটিআইএ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ। বক্তব্য দেন আল আরফাহ ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মীর আবদুস সালাম, কাউন্সিলর হাজি নুরুল হক, সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মদ জামাল হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা আহমদ রশিদ আমু, আলমগীর পারভেজ, চাক্তাইয়ের এসএম হারুন রশিদ, এমএ হায়দার চৌধুরী, শান্ত দাশগুপ্ত, সাইফুদ্দিন, ফরিদ উদ্দিন আহমদ, খোরশেদ আলম, জসিম উদ্দিন মিন্টু, আলী আব্বাস তালুকদার, এনকে আলম সাজ্জাদ, ফেরদৌস ওয়াহিদ, আবসার উদ্দিন, আছদগঞ্জের ফরিদুল আলম, শফিকুল মন্নান, এহসান উল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান ফারুক, ফয়েজ উল্লাহ বাহাদুর, সালাহ উদ্দিন প্রমুখ।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিগত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন সময়ে একটানা দৈনিক দুবার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছদগঞ্জ ও বৃহত্তর বাকলিয়া এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় ভিজে নষ্ট হয়েছে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের হাজারো ব্যবসায়ীর মালামাল। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ঠিক সময়ে অপসারিত না হওয়া অবস্থায় জোয়ারের পানির হঠাৎ এই উপদ্রবকে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঠেকানোর সম্ভাব্য উপায় ও করণীয় নির্ধারণ করে শিগগির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থায়ী সমাধান না হলে দেশের অর্থনীতি ও সম্পদ প্রকৃতির খেয়াল খুশির ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। চাক্তাই খালের মোহনা ভরাট ও কর্ণফুলী নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অবর্ণনীয় বিপর্যয় ঘটেছে।

তারা বলেন, আবার ভারী বর্ষণের সময় চাক্তাই খালের মোহনা, রাজাখালসহ শাখা খালগুলো বর্জ্য আবর্জনায় ভরাট হওয়ার কারণে পানি নিস্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে পুরো নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এদিকে নগরীর দেওয়ান বাজার, আন্দরকিল্লা, পাথরঘাটা, বকশিরহাটের ওপর দিয়ে বহমান উত্তর বদর খাল, মধ্যম বদর খাল, দক্ষিণ বদর খাল ও কলাবাগিচা খাল এখন বড় নালায় পরিণত হয়েছে।

উত্তর বদর খাল নন্দনকানন টিএনটি হতে চাক্তাই খালের সংযোগ পর্যন্ত আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, কোরবানিগঞ্জের পুরো অংশে অপদখলে সংকুচিত হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। বদরপাতি টেরিবাজার সেতুর একপাশে বদরখালের ওপর বাণিজ্যিক ভবন চসিকের নজরে না থাকাটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ কোরবানিগঞ্জের চাক্তাই খালের মুখে চসিক নিজেই খালের ওপর স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে চাক্তাই খাল ও রাজাখালের উভয় পাশে কিছু কিছ উচ্ছেদ ও সংস্কার কার্যক্রম সফল ভাবে হলেও পরবর্তী সময়ে তা স্থগিত হয়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে রাজাখালে চসিকের নিজস্ব তত্বাবধানে স্কেভেটর দিয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হলে এলাকাবাসী আশান্বিত হয়। কিন্তু খালে মাটি ও বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম চালু কয়েক দিনের মধ্যে দুই কাউন্সিলরের দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ এক মাসের ও অধিক সময় ধরে স্কেভেটর খালের ভেতর কাদার মধ্যে ডুবে ছিল। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছবিসহ ফলাওভাবে প্রকাশিত হয়। ৮-১০ বছর আগে নৌকা সাম্পানে পণ্য পরিবহন করতো এই খাল দিয়ে।

এখন জোয়ার ভাটার পানি আসা তো দূরের কথা এখন বৃষ্টির পানিও সরে না। দীর্ঘ এক কিলোমিটারের খালটি উভয় পাড়ের বাসিন্দারা বর্জ্য ফেলে ভরাট করছে। পরে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই কাজ করার কথা থাকলে দীর্ঘ চার মাস পরও শুরুই করতে পারেনি চসিক।

যে মুহূর্তে সচেতন নাগরিক সমাজ নগর বাঁচাতে খাল নালা উদ্ধারের দাবিতে সোচ্চার ঠিক সেই সময়ে দখলদারের হাতে প্রতিনিয়ত নাব্যতা ও প্রশস্ততা হারাচ্ছে বৃহত্তর বাকলিয়ার খালগুলো। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকার ব্যবসায়ী সমাজ।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চাক্তাই খালের নাব্যতা সংকটে অনেক নৌঘাট বন্ধ হয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের প্রভাবে পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকা প্লাবিত করে।

এলাকার ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ও গুদামে পানি ঢুকে মজুদ ভোগ্যপণ্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

তারা নৌপথে বাণিজ্য পুনরুদ্ধার ও সম্প্রসারণের জন্য কর্ণফুলী নদীতে কার্যকর ড্রেজিং ও চাক্তাই খালসহ উপ-খালগুলো নৌচলাচল উপযোগী করে তোলা, কর্ণফুলী নদীর তীর দিয়ে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট হয়ে মদুনাঘাট পর্যন্ত সুপ্রশস্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং নৌঘাট সৃষ্টি ও নৌযান চালু করা এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে সরকারি খাসজমিতে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানান।

মেয়র ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। মেয়র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সমস্যা-সংকট চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি টিম গঠনের পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে মেয়রের ডোর-টু-ডোর বর্জ্য সংগ্রহের মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মীর আবদুস সালাম ও কেটিআইএ সভাপতি মাহবুবুল আলম দুই হাজার বিন উপহার দেন।