চীনে মুসলিম বন্দিশিবির, প্রশংসায় সৌদি–রাশিয়াসহ ৩৭ দেশ

0
184

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা উইঘুর মুসলমানদের বিষয়ে দেশটি যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার সমর্থন জানিয়েছে সৌদি আরব, রাশিয়াসহ বিশ্বের ৩৭টি দেশ। এই বিষয়ে জাতিসংঘকে চিঠিও পাঠিয়েছে দেশগুলো। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো চীনের ওই নীতির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

সৌদি আরব ছাড়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, বেলারুশ, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিরিয়া, পাকিস্তান, ওমান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরাও এটিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন। চীনের পক্ষ থেকে এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।সামাজিক শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখ মুসলমানকে আটকে রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। চীনের ‘আটকে রেখে শিক্ষাদানের নীতির’ সমালোচনা করে চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘে নিযুক্ত ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি চিঠি লেখেন। এরই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৩৭টি দেশ জাতিসংঘে এই চিঠি পাঠাল। সেখানে চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে প্রশংসা করা হয়।

জাতিসংঘে পাঠানো ওই চিঠির কপি গত শুক্রবার হাতে পেয়েছে রয়টার্স। চিঠিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মারাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সন্ত্রাসবিরোধী এবং মৌলবাদী ধারণা পরিবর্তন করতে চীন জিনজিয়াংয়ে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলার মতো একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সেখানে সব গোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। সেখানকার জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশি সুখী, নিরাপদ ও পরিপূর্ণ।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করে আসছে, সামাজিক শিক্ষা প্রদানের কথা বলে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের হাজার হাজার সংখ্যালঘু মুসলমানকে আটক করে রাখা হয়েছে। ওই অঞ্চল এখন একটি বড় ধরনের কারাগারে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেখানে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে মুসলমান শিশুদের কৌশলে নিজেদের পরিবার, ধর্মবিশ্বাস ও ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে। শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করতে তাদের জন্য বড় বড় আবাসিক বিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে পুরোদমে। নিজেদের শিকড় এবং অতীত থেকে শিশুদের একেবারে বিচ্ছিন্ন করতেই এই কর্মসূচি নিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ।তবে জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত জুন চেন বলেন, জিনজিয়াংয়ে চীনের নীতিকে যেসব দেশ সমর্থন করেছে, তা খুবই প্রশংসনীয়।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নিপীড়নের নিন্দা জানায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানসহ ২২টি দেশ। এসব দেশের রাষ্ট্রদূতেরা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো লিখিত বার্তায় চীনের উইঘুর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তবে চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানানো দেশগুলোর চিঠিতে জিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘চীনের অসামান্য অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের একটি হচ্ছে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন (উইঘুর বন্দিশিবিরকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে দাবি করে চীন)।

চিঠিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে কোনো সন্ত্রাসী হামলা ঘটেনি। ফলে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরকালে দেশটিতে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের পক্ষে আওয়াজ তোলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২২ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফরকালে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চীনের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য, উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে বেইজিং। তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও মিডল ইস্ট মনিটর।