চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধের জেরে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শুরু

0
103

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা সামলাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। এ যুদ্ধের জের ধরে হুয়াওয়ে ফোন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাকে আটকের ঘটনা কি বিশ্বকে আবারো স্নায়ুযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ দুটি তাদের গত কয়েক মাসের বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে এর উদ্দেশ্য হলো কে কাকে টপকে বিশ্বের প্রযুক্তি নেতায় পরিণত হবে? অর্থাৎ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কে নেতৃত্ব দিবে- যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীন?

কয়েক সপ্তাহ আগে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে নানা দেশে পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি (ফাইভ জি) নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করছিলো।

কিন্তু হঠাৎ করেই তাতে বেশ ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কাজ থমকে গেছে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার পর।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিমা নানা সংস্থার মধ্যে হ্যাকিংয়ে জড়িত। আর এসব ঘটনায় প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রধান খেলোয়াড় হতে চাওয়া চীনকে গভীর সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। যদিও বেইজিং শক্তভাবেই পশ্চিমা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

ক্ষুব্ধ চীনারা আমেরিকান পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছে যার সূচনা হচ্ছে অ্যাপল ফোন ও ট্যাবলেটের মাধ্যমে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করে যখন হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মেং ওয়াংজু কানাডায় আটক হন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতার কন্যা।

যুক্তরাষ্ট্র তাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানায় এবং তার বিরুদ্ধ অভিযোগ তুলে যে তার প্রতিষ্ঠান চীনা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ ও ইরানের কাছে তারা টেলিকম প্রযুক্তি বিক্রি করছে। আর এতে দোষী প্রমাণিত হলে তার ত্রিশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে পরিচালক গ্রাহাম আলিসন বলেন, মেং কে আটকের পরিণতি যাই হোক না কেন। এটি এই বার্তা দিচ্ছে চীনারা বুঝতে পারছে যে তাদের বিরুদ্ধে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছে।

তার মতে চীনা কর্মকর্তারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে সংঘাতে জড়াতে চাইছে।

এশিয়া ইউরোপ ও আমেরিকার প্রযুক্তি বিশ্লেষকরাও এটিকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ বলছেন। যদিও মেং সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রযুক্তি স্নায়ুযুদ্ধ এখনো কমে আসার কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। গত ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বড় ধরনের সাইবার হামলার জন্য চীনকে দায়ী করেছে।

বিশেষ করে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা কোম্পানি ছাড়াও সরকারী নানা সংস্থায় হ্যাকিংয়ের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি দুজন চীনা নাগরিককে ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে হ্যাকিংয়ের জন্য দায়ী করছে। চীন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওদিকে মেং কে আটকের পাল্টা জবাবে চীন দুজন কানাডিয় নাগরিককে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টার অভিযোগ এনেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হুয়াওয়েকে নিয়ে যা হচ্ছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র করছে চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য। কারণ হুয়াওয়ে চীনকে শক্তভাবেই বিশ্বে উপস্থাপন করছিল।

জাপানও বলছে, তারা হুয়াওয়ের সাথে তাদের চুক্তি পর্যালোচনা করবে।

সব মিলিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অভিযোগ হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয় তাহলে বড় ধরনের সংকটেই পড়বে চীনের অন্যতম প্রধান এই কোম্পানিটি। যা চীনের প্রযুক্তি বিশ্বের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কাই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।