‘জঙ্গি’ আস্তানা থেকে আটক ফয়জুল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

0
92

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া::
ফয়জুলমো. ফজলুল হক (৩০) ও রহিমা বেগম (২২)। তারা দুজনেই আপন ভাই-বোন। তাদের পিতার নাম মৌলানা আবুল কালাম। বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মুহুরী পাড়া গ্রামে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলুল হক সবার বড়। পরিবারের সচ্ছলতা আনতে বিগত ২০০০ সালে পাড়ি জমান মধ্যে প্রাচ্যের সৌদি আরবে। সেখানে কয়েক বছর থাকার পালিয়ে অবৈধভাবে আফগানিস্থানের কান্দাহার শহরে যান। আর সেখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরেন ২০১২ সালের শেষের দিকে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব চাঞ্চল্যেকর তথ্য।

স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, ফজলুল হকের পরিবারের সকলেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার ছোট ভাই আজিজ চট্টগ্রামে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে। আজিজকে কিছু দিন পূর্বে নাশকতার অভিযোগে চট্টগ্রামে পুলিশ আটক করে। ফজলুল হক জামায়াতের কর্মী ও তার বোন রহিমা জামায়াতের মহিলা শাখা নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। গত ২/৩ বছর পূর্বে ফজলুল হক তার পুরো পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া এলাকায় এসে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর গত কয়েক মাস পূর্বে মাসিক ১০ হাজার টাকায় হালিশহরের গোল্ডেন কমপ্লেক্স আবাসিক এলাকার বি এ ম্যানশন (বাড়ি নম্বর-১/১৯) নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। আর সেখানেই শুরু করেন জঙ্গি তৎপরতা। তার বাসায় চট্টগ্রামের সিনিয়র কয়েকজন জামায়াত-শিবিরের নেতাদের যাতায়াত ও ছিল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও ফজলুল হকের সাথে রোহিঙ্গা সলিডারিটি সংস্থা (আরএসও‘র) সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন।

ফজলুল হকের কয়েকজন প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছরের শেষের দিকে ফজলুল হক মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, দুবাই ও আফগানিস্থানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে দেশে ফিরেন। আর এসব অর্থ দিয়ে অস্ত্রসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায় গভীর পাহাড়ে জনৈক মাওলানা মোবারকের মাধ্যমে প্রায় ৫০ একরের বেশি জায়গা কিনেন।

প্রসঙ্গত: গত কয়েক দিন পূর্বে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর এলাকার গহীণ পাহাড়ের লটমনি এলাকায় ওই মাওলানা মোবারকের গরু-ছাগলের খামার থেকে র‌্যাব ৫জঙ্গিসহ বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করেছিল। সেখান থেকে আটক জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান চালায় ফজলুল হকের চট্টগ্রামের ভাড়া বাসায়। আর সেখানেই মিলল বিপুল পরিমান অস্ত্র।

আর ফজলুল হকের সেই ভাড়া বাসা থেকে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে র‌্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১২ বোরের শটগানের ২৪ রাউন্ড গুলি, ২২ পিস বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক তার, এক হাজার ২৩৫ পিস বিভিন্ন ধরনের বোমা বানানোর স্টিলের বোতল, ২৪ পিস খালি পাইপ, ৫০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম, ৯’শ গ্রাম সোডিয়াম, ৩ কেজি ৮’শ গ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, আড়াই’শ গ্রাম সালফার, ৬ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সাড়ে ৬ কেজি নাইট্রেট, ৫’শ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম পাউডার, ১০ কেজি সালফার, ৫’শ গ্রাম গান পাউডার, ১০ পিস সোডিয়াম আরও প্রায় ২৮ ধরনের ১৫০ কেজি রাসায়নিক সরঞ্জাম, ২ পিস রকেট ফ্লেয়ার, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, সিরিঞ্জ, ১৮৩ জোড়া প্রশিক্ষণ জুতা। এসময় আটক করা হয় ফয়জুল হক (৩০) ও তার বোন রহিমা (২২) সহ বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ উপজেলার কচুবুনিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল হাই (৩৬) এবং জাহেদ (৩০) নামের এক যুবককে।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের পরিচালক লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাহেদের বিষয়ে আমাদের আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। বাকি তিনজন জঙ্গি বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। র‌্যাবের দাবি, বাসায় যে পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে তাতে দুই হাজার বোমা তৈরি সম্ভব।