জমজমাট হয়ে উঠেছে বিপণি বিতানের ঈদ বিকিকিনি

0
153

জমজমাট হয়ে উঠেছে বিপণি বিতানের ঈদ বিকিকিনি। শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতারা এক মার্কেট থেকে ঢু মারছেন আরেক মার্কেটে।

চট্টগ্রামের ঈদ বিকিকিনির কথা বললে অবধারিতভাবে চলে আসে ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করা নগরীর এই ঐতিহ্যবাহী  ‘নিউ মার্কেট’ খ্যাত বিপণি বিতানের নাম। ঈদের পোশাক ক্রয়, ঈদের কেনাকাটার জন্য অনেকে ঢু মারেন এখানে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জমজমাট হয়ে উঠেছে নিউমার্কেটের বিকিকিনি।

নিউ মার্কেট এ মূলত রোজার আগ থেকেই ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়ে। বিক্রেতারাও অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন ডিজাইন ও বাহারি রঙের শাড়ি, থ্রি পিস, জুতা, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, টুপি, ঘর সাজানোর নানা অনুষঙ্গ কি নেই এই মার্কেটে। এক ছাদের নিচে সবকিছু পাওয়া যায় বলে আশপাশের উপজেলাগুলো থেকেও মানুষ আসছে ঈদ কেনাকাটা করতে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে স্ব-পরিবার,  কেউবা বন্ধু-বান্ধব আবার কেউ একা ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। সবার উদ্দেশ্য একটাই, আত্মীয়-স্বজন বা নিজের জন্য ঈদের সেরা পোশাক, জুতা ও অন্যান্য অনুষঙ্গ কেনা।

হাটহাজারী থেকে ইন্জনিয়র মানুনকে প্রশ্ন করা হলো এতে দূর থেকে এখানে এসেছেন কেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক আগ থেকে এখানে আসি এখানে সব নামীদামী ব্র্যান্ডের শোরুমও আছে। পোশাকের কালেকশন ভালো। চারপাশ খোলা হওয়ায় স্বচ্ছন্দে কেনাকাটা করা যায়। তাছাড়া হাঁটা-চলারও পর্যাপ্ত জায়গা আছে। তাই প্রতিবছরই ঈদের কেনাকাটা করতে একবারের জন্য হলেও এখানে আসা হয়।

বিপণি বিতানে মোট ৫০৭টি দোকান রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট যেমন রয়েছে তেমনি পাইকারি দোকানও রয়েছে।

বিপণি বিতানের নিচতলার কেটস আই, খাকি, রেভলন, ক্রাফট ক্যাসল, রিচম্যান, হান্ডি বাজার, মুনওয়াকার, জ্যান্টল পার্ক, জ্যান্টল প্লাস, প্লাস পয়েন্ট, শৈল্পিক, মেনজ ক্লাব ইত্যাদি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ছেলেদের বিভিন্ন পোশাকের ভালো সংগ্রহ দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায় পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা ৪ হাজার টাকার মধ্যে। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে এবারও গতবারের মত লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবিই বেশি চলছে বলে জানান ক্রেতা বিক্রেতারা। মানভেদে টি-শাটের্র দাম রাখা হয়েছে ৬০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, ক্যাজুয়াল ও ফরমাল শার্ট ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, জিন্স প্যান্ট ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, গ্যাবার্ডিন দেড় হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, নানা ডিজাইনের টুপি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরণের জুতা পাওয়া যাবে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ভেতর।

নিচতলার শাড়ির দোকানগুলোতে গৃহবধু ও তরুণীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। ঈদের শাড়িটি হতে হবে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। তাই বিভিন্ন দোকানে যাচাই-বাছাই করে শাড়ি কিনছেন তরুণীরা। শাড়িকা, সিলকি ফ্যাশন, তারা শাড়িজ, শাড়ি কালেকশন, ওয়াদুদ ব্রাদার্স, পাবনা শাড়িজ, চারুলতা টাঙ্গাইল শাড়িজ, প্রাইড টেক্সটাইল, পারফেক্ট টেক্সটাইল ইত্যাদি দোকানগুলো সেজেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শাড়ির সমাহার নিয়ে। শাড়িকার বিক্রয়কর্মী নিউটন মজুমদার জানান, এবার তারা ভারতীয় কাতান, বেনারসি, কাঞ্চিভরন, মিনাকুমারী, মৌ মাস্তান, কাশ্মিরী সিল্ক ইত্যাদি শাড়ি দোকানে তুলেছেন। এগুলোর মধ্যে ভারতীয় কাতান ও বেনারস কাতান বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, কাঞ্চিভরন ও মিনাকুমারী ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, মৌ মাস্তান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ও কাশ্মিরী সিল্ক পাওয়া যাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া দেশি শাড়ির মধ্যে এখানে মিরপুরী কাতান পাওয়া যাবে ২ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
তবে ভারতীয় শাড়ির ভিড়েও দেশি ব্র্যান্ডের শাড়িগুলো বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। শাড়ি কালেকশনের বিক্রয়কর্মী মো. ফরিদ জানান, মিরপুর ও টাঙ্গাইলে তৈরি কাতান, জামদানি এসব শাড়িও বেশ চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের কাতান বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং জামদানি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৩০ টাকার ভেতর।
যারা পোশাকের উপর বোরকা পড়েন তাদের জন্য বিপণি বিতানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নানা ডিজাইনের বোরকা।
তিনতলায় রয়েছে জুতা ও মেয়েদের পোশাকের বিভিন্ন দোকান। ওমেন’স ওয়ার্ল্ড, ঝিনুক, আর কে ফ্যাশন, ফ্যাশন মেকার বুটিকস, রূপাঙ্গন ফ্যাশন, খাজা ফ্যাশন ইত্যাদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ, টপস, স্কার্ট, ফতুয়া, লেহেঙ্গাসহ বিভিন্ন পশ্চিমা ধাচের পোশাক। ওমেন’স ওয়ার্ল্ডয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার জানান, এবারের ঈদে লম্বা ঝুলের জামা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জামার সাথে পালাজ্জোও বিক্রি হচ্ছে বেশ। বিভিন্ন ডিজাইনের জামার দাম রাখা হয়েছে ২ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পালাজ্জো কিনতে পাওয়া যাবে ৩শ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে।

ঈদে নতুন জুতার চাহিদাও কম নয়। তাই জুতার দোকানগুলোতেও বেচাবিক্রি চলছে পুরোদমে। মার্কেটের তিন তলার বাটা, ডাটা বাজার, এপেক্স, বে ইম্পোরিয়াম, ক্যাঙ্গারু, লুক লাইক, চলন্তিকা ইত্যাদি দোকানগুলোতে বিভিন্ন নকশা ও রঙের জুতা এসেছে। ঈদে শিশুদের আনন্দের কোন সীমা থাকে না। নতুন পোশাক সে আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তাই শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতেও ভিড় ছিল লক্ষণীয়। নিচ তলার এহসান নামক দোকানে গিয়ে দেখা যায় শিশুদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। জুতা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।

বিপণি বিতান মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটির নেতারা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। ১০ রোজার পর থেকে মার্কেট জমজমাট হয়ে উঠেছে।ঈদ উপলক্ষে অনেক মৌসুমি হকার মার্কেটের মূল ফটকের সামনে তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া তিন নম্বর রুটের বাসগুলোও মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে মার্কেটের সামনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক ক্রেতা আমাদের মার্কেটের পার্কিং স্পেসে গাড়ি রেখে অন্য মার্কেটে চলে যান কেনাকাটা করতে। এতে অনেক ক্রেতা গাড়ি রাখতে পারেন না। ফলে তারাও রাস্তার উপর গাড়ি রাখেন। এগুলো প্রতিরোধ করতে আমরা ট্রাফিক বিভাগের সাথে কথা বলেছি।  এছাড়া ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে পুরো মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বিপণি বিতানে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সারা বছর মিলে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হয়, ঈদের আগের ১৫ দিনে বিক্রি হয় তার চেয়ে বেশি।