জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা ২

0
760

 

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:: সর্বত্রই উৎসবমুখর পরিবেশ, দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী। তাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মার্কেটগুলো ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে রাত, রাত পেরিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ঈদের কেনাকাটা। দোকানগুলোতে টাঙানো হয়েছে নানা রঙের পোশাক। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউসে রয়েছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। শিশু থেকে বুড়ো সবাই ছুটছেন শপিংমলে। আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২য় পর্বে আজ চলুন আরো কিছু শপিংমলের চিত্র দেখে নেই-

চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, উপচেপড়া ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেউ ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাকটি খুঁজে-ফিরছেন। কেউ পছন্দ শেষে বিক্রেতার সঙ্গে দর-দাম করছেন। কেউবা পছন্দের পোশাকটি নিয়ে শপিং ব্যাগসহ হাসিমুখে মার্কেট ছেড়ে যাচ্ছেন।
বিশেষ করে শাড়ি, বুটিক শপ, জুতা, শার্ট, কসমেটিকস, পাঞ্জাবি, গার্মেন্ট পণ্য, টেইলার্স, ক্রোকারিজসহ প্রতিটি আইটেমের দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।
হাটহাজারী থেকে আসা ক্রেনা কাইসার আহমেদ জানান, উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্তসহ সকল শ্রেণীর ক্রেতারই সমাগম হয় চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স। সকল শ্রেণীর নারী শিশুর পণ্য রয়েছে এ মার্কেটে। যে কোন দামের পোশাকসহ পণ্যাদি রয়েছে এ মার্কেটে।
চিটাগাং বুটিক্স এর মালিক মুহম্মদ জহির জানান আমরা প্রচুর দেশী বিদেশী কাপড়ের পসরা সাজিয়েছি। অন্যরাও এনছে নানা ধরনের পোষাক। সমিতির পক্ষ থেকে এবার ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য বাড়ানো হয়েছে মার্কেটের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য।
আলম নামের এক বিক্রেতা জানান, ঈদের পর দীর্ঘদিন শপিংমলগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া এ সময়ের পরও কিছুদিন শপিংমলে আসবেন না ক্রেতারা। তাই পোশাকের যেটুকু স্টক আছে তা কম লাভে বিক্রয় করে পুঁজি তোলাই এখন লক্ষ্য। ঈদের আগের দিন সারারাত খোলা থাকবে মার্কেটগুলো।

পছন্দের শাড়ি, পোশাক ও গহনার টানেই অভিজাত শ্রেণির ক্রেতাদের পছন্দ মিমি সুপার মার্কেট। একেকটা দোকানে ক্রেতাদের ভিড় এরইমধ্যে শুরু হয়েগেছে। সন্ধ্যার পর সেই ভিড় দিনের অন্যসময়ের চেয়ে যেন বেশী। ফলে কম কথায় বেশি বিক্রির প্রবণতাই দেখা গেল তাদের চোখেমুখে। আর তাই রুচিশীল ক্রেতার মন কাড়তে ব্যস্ত বিক্রেতারা।
এই মার্কেটে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য থাকলেও দেশীয় পোশাকও রয়েছে। দেশীয় শাড়ি সুতি, সিল্ক, টাঙ্গাইল শাড়ি শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। তবে জামদানির পাশাপাশি ভারতীয় গাদোয়ান, টিস্যু এবং নেট কাপড়ের ওপর পাথরের কাজ করা শাড়ি নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
এমনিতে শাড়ির জন্য মিমি সুপার মার্কেট সবার কাছে বেশ পরিচিত। অন্যদের চেয়ে আলাদা ও হালফ্যাশনের পোশাক চান যাঁরা, তাঁদের পছন্দের কেনাকাটার জায়গা এই মার্কেটটি। এখনো ঈদসহ যেকোনো উৎসবে নারীর শাড়ি পড়ার প্রচলন রয়েছে প্রত্যেক ঘরে ঘরে। আর তাই বাঙালি ললনারা ছুটেন বিভিন্ন দোকানে বাহারি ডিজাইনের শাড়ির খোঁজে। বাজার ঘুরে ঘুরে যাচাই বাছাই করে তারা কিনে আনেন মানানসই আর সবচেয়ে ভিন্ন শাড়িটি। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে এবারের ঈদে মিমি সুপার মার্কেট সংগ্রহে রেখেছে দেশী বিদেশী নান্দনিক ডিজাইনের শাড়ি ।
মিমির নিচতলায় শাওন ভাদো, কাঁকন, সুন্দরী, বধূয়া, পিন্ধন, নিউ রূপসী, ওম্যানস ওয়ার্ল্ড, লগন, আঁচল, মানসী ও জ্যোতিতে মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস কেনাকাটা করতে দেখা যায়। এসব দোকানে কাঞ্চিরাম, অপেরা কাতান, হাইলাইটস, জর্জেট, জুট কাতান, বেঙ্গালুরু কাতানসহ নানা ধরনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ শাড়িতে দামি পাথর, পুঁথি, চুমকি দিয়ে ভারী কাজের প্রাধান্য দেখা গেছে। দেশি শাড়ির মধ্যে মিরপুরের কাতান, জামদানি ও তাঁতের শাড়িও পাওয়া যাচ্ছে।
আঁচল শাড়ির দোকানে সাউথ ইন্ডিয়ান ক্লথ ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা, কানজিবরণ দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, কটন শাড়ি ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ক্রেপ শাড়ি ২ থেকে ১২ হাজার টাকা, শিপন শাড়ি ৬ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও জর্জেট শাড়ি ২ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাওন ভাদো নামের শাড়ির দোকানে কথা হলো চিকিস আমির অনিসার সাথে। তিনি বলেন, অনেক বছর ধরে ঈদের শাড়ি এ মার্কেট থেকেই কিনি। হাল ফ্যাশনের পোশাক পাওয়া যায় বলে এখানে আসা। পাশে থাকা মেয়ে অহনাও বলে উঠল তাই ‘আমারও পছন্দের জায়গা এটা’।
শাড়ির দোকান আঁচল’র মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, গরমের কথা ভেবে কটন ও সাউথ ইন্ডিয়ান ক্লথের উপর নারীদের পছন্দ বেশি। এ ছাড়া জামদানি শাড়িও বেশ পছন্দ করছে। তবে পাশাপাশি ইতালিয়ান শাড়িও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
এখানে সেলাইবিহীন ও তৈরি সালোয়ার-কামিজের বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। উইমেন্স ওয়ার্ল্ড, আকর্ষণ, চন্দ্রবিন্দু, লগন, জারা প্রভৃতি বুটিকের দোকানে লং গাউন, আনারকলি, জিপসি পোশাকের জয়জয়কার। পাথর ও পুঁথির ভারী কাজের এসব পোশাকের দাম শুরু হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে।
মার্কেটের দোতলায় রয়েছে জুয়েলারি ও শিশুদের পোশাকের দোকান। জুয়েলারি দোকানগুলোও সেজেছে অন্যরকম সাজে। ক্রেতা আকর্ষণের বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। কাপড়ের দোকানের চেয়ে এই দোকানগুলো যেন একটু বাড়তি আলোক সজ্জা করে রেখেছে তাই দেখা গেল ।
জুয়েলারি দোকানের বিক্রেতারাও জানান, ৫শ টাকা থেকে শুরু করে ২০-২৫ হাজার টাকা দামে মিউটেশনের গয়না রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী জুয়েলারি সামগ্রী রাখা হয়েছে। এখনো জুয়েলারী কেনা শুরু হয়নি। পছন্দের পোশাকটা কেনার পর আগামী দু একদিন পর থেকে জুয়েলারি পণ্য কিনতে শুরু করবে নারীরা ।
মিমি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, মিমি সুপার মার্কেটে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের পছন্দনীয় পোশাকের জন্য মিমির আলাদা খ্যাতি রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। ফলে আগত ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবে এই কথা নি:সন্দেহে বলতে পারি।

প্রতি বছরের মতো এবারো সামর্থ্যরে সঙ্গে পছন্দের সেই সামঞ্জস্যটা করে দিতেই বাহারি পোশাকের সম্ভার নিয়ে সজ্জিত হয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের মধ্যে ‘দেশী দশ’ অন্যতম। নগরীর আফমি প্লাজায় একই ছাদের নিচে ১০টি ফ্যাশন হাউস নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশী দশ। এগুলো হচ্ছে নিপুণ, রঙ, কে-ক্র্যাফট, সাদাকালো, অঞ্জনস্, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা এবং বাংলার মেলা।
ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে শপিং মলে যেন একটু বেশিই ছোটাছুটি করতে হয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের। কিনতেও হয় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু অনাবিল আনন্দের সেই কেনাকাটা করতে গিয়ে যদি সাধ ও সাধ্যের অসঙ্গতি থাকে, বিপত্তিটা ঘটে তখনই।
দেশী দশের সবগুলো হাউজ ঘুরে দেখা গেল, দেশীয় পসরায় সাজানো প্রতিটি হাউজই জমে উঠেছে এরই মধ্যে। বিক্রিবাট্টাও হচ্ছে বেশ। বিক্রেতারা বলছেন, বিদেশি পোশাকে আগ্রহ থাকলেও সব দিক বিবেচনায় দেশি পোশাকেই তরুণ-তরুণীরা বেশি ঝুঁকছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দেশীয় ফ্যাশন ডিজাইনাররা ঋতুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পোশাকে কাটিং ও বৈচিত্র্য আনেন। সেই হিসাবে এবারকার ফ্যাশনে গ্রীষ্ম ও বর্ষার কাল প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া দেশি পোশাকের দামও তুলনামূলক কম। মূলত এই দুই কারণে দেশীয় বুটিক হাউসগুলোর প্রতি নজর থাকে সব সময় সব বয়েসীদের কাছে।
সৃষ্টির ব্রাঞ্চ ম্যনেজার জোবাইর হোসাইন জানান, আমাদের ফতুয়া,শার্ট রাখা হয়েছে বিভিন্ন ভেরিয়েশনের। আর শাড়ি মধ্যে এবার সিল্ক, এন্ডি, হাফসিল্ক, এন্ডিকটন ব্র্যান্ড ও টাঙ্গাইল শাড়ি থাকছে এবারের কালেকশনে। এছাড়া রয়েছে শার্ট,ফতুয়া এমনকি লুঙ্গিও।
ফ্যাশন হাউস অঞ্জন‘সর গিয়ে দেখা গেল সবার জন্য রয়েছে এখানে নানা ডিজাইনের পোশাক। এই সময়টা গরম থাকায় ফেব্রিক ও রঙের ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, এবার কটনের ব্যবহার রয়েছে বেশ, এই গরমে পোশাক যেন আরামদায়ক হয় সে দিকটি লক্ষ্য রেখেছি আমরা। বাংলার মেলার ঈদ আয়োজন ছেলেদের জন্য জয়শ্রি সিল্ক, এন্ডি কটন, খাদি তাঁত কাপড়ে লং, মিডিয়াম ও শর্ট লেংথে পাওয়া যাবে নতুন সব ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি।
আবার ‘রঙ’ এর হাউজ ঘুরে দেখা গেল সালোয়ার-কামিজ করা হয়েছে আধুনিক ডিজাইন ও উজ্জ্বল রঙে। কামিজে দেখা গেল কারচুপি, মেশিন এমব্রয়ডারি, হাতের কাজের সঙ্গে নানা ডিজাইনের মেটেরিয়ালের ব্যবহার। এখানে রয়েছে জুয়েলারি আইটেম যেমন চুড়ি, কানের দুল, গলার সেট, ব্রেসলেট সহ রুচিশীল হ্যান্ড বেগ রয়েছে এখানে।
ঈদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি থাকে শিশুদের। তাই শিশুদের জন্য এবার ১০টি ফ্যাশন হাউজই সাজিয়েছে ঈদের পোশাকে আছে ভিন্ন আয়োজন। পাশাপাশি একটু বয়স্কদের জন্য ওই হাউসগুলো রেখেছে বাড়তি আয়োজন।
‘নিপুন’-এর ব্রাঞ্চ ম্যনেজার রিমেন বৈদ্য জানান, বরাবরের মতো এবারো তারা নিজস্ব কয়েকটি ডিজাইন নিয়ে এসেছেন, যাতে টাইডাই ও হালকা সুতার কাজ রয়েছে। দেশি তাঁতের ওপর লোকজ ও চলমান প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে ঈদ কালেকশন। বাচ্চাদের পোশাকে দেয়া হয়েছে কার্টুন, পাখি, ফড়িং, আর বড়দের পোশাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রকৃতিকে।
দোকানিরা জানা প্রায় সব ধরনের বুটিকেই ছেলেদের পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা, টি-শার্ট ১৮০ থেকে ৮০০ টাকা, শার্ট ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, ফতুয়া ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং জিন্স প্যান্ট ৮০০ থেকে ২৬৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের সালোয়ার কামিজ ১৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, টু পিস ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, টপস ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা, শাড়ি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, ওড়না ৩৫০ টাকা, সালোয়ার ৪০০ টাকা, মেয়েদের টপস ১৫০ থেকে ৭০০, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে পোশাকের কাজ, ধরন এবং কাপড়ভেদে এই দামের ভিন্নতা রয়েছে।

স্বকীয় নির্মাণশৈলীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ক্রেতা সাধারণের সাচ্ছন্দ্য কেনাকাটার জন্য ফিন্লে স্কয়ার শপিং মল নগরীর অনেকের মন জয় করেছে । এই বিপণিবিতানের এক ছাদের নিচেই পাওয়া যাচ্ছে পোশাক, জুয়েলারি সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য। চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্ল্যাক্স সিলভার স্ক্রিণ ও রয়েছে খাবারের দোকান। ঈদে নগরবাসীর পছন্দ ও মানসিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে নিরাপত্তাসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে একইসাথে কেনাকাটা, খাবার ও বিনোদনের কেন্দ্রস্থল এই ফিন্লে স্কয়ার।
১৪২টি দোকানের সমন্বয়ে ঈদে ক্রেতা সাধারণের আনন্দ বিনোদন উদযাপন কেন্দ্র যেন শপিং মল ‘ফিনলে স্কয়ার’। কেননা এখানে এক সাথে আছে কেনাকাটা, খাবার ও তারুণ্যের নির্মল আড্ডার স্থল রয়েছে। এটি সারাদেশের প্রথম ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বলিত বণনাধর্মী স্থাপনা । বলা যায় ভিন্নধর্মী স্থাপনা ফিনলে প্রপার্টি লিমিটেডের এই ‘ফিনলে স্কয়ার’ শপিং সেন্টারটি এই নগরে অন্যতম। নগরীর ষোলশহরের দুই নম্বর গেইটের বিপ্লব উদ্যান সংলগ্ন এ স্থাপনার বাইরের দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যা সহজেই নজর কাড়ে এখানে আসা ক্রেতা সাধারণের কাছে।
প্রথম তলায় আছে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্রান্ডের ফ্যাশন হাউজ। দ্বিতীয় তলায় শাড়ি, থান কাপড় ও লেডিস টেইলার্স। তৃতীয় তলায় আছে মেয়েদের তৈরি পোশাক, জুয়েলারি, ঘড়ি, চশমা ও হ্যান্ডিক্রাফটস। চতুর্থ তলায় পুরুষ ও শিশুদের তৈরি পোশাক, জুতা, চামড়াজাত ও শিশুর খেলনাসামগ্রী। পঞ্চম তলায় ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোনের দোকান ও ষষ্ঠ তলায় আছে ফুড কোর্ট ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলার ব্যবস্থা। এছাড়া গ্রাউন্ড ফো¬রে রয়েছে এটিএম বুথ।
উক্ত শপিং মল ঘুরে দেখা গেল এর প্রথম তলায় আছে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্রান্ডের মধ্যে আর্টিস্টিক, ব্লু মুন, ম্যান হুড়, এস্টেসি, অরেঞ্জ, অপেরা, ক্লাউড, আর্ট সি, এনজেলস্, ইলোশন, লুক লাইক, ভারসোনা, ইয়ং লেডি, নিউ গার্ডেন,আজরাফ, নেহা, আল্পনা প্লাস, চন্দ্রছায়া, শৈল্পিক, খাজা মেনস্ ওয়ের সহ আরো অনেক নামী দামী ব্র্যান্ডের শো রুম। যা ক্রেতা সাধারণের কাছে বেশ সুপরিচিত।
নিচ থেকে চারতলা পর্যন্তই ক্রেতার ভিড়। কেউ পোশাকের দোকানে, কেউ গয়না দেখায় ব্যস্ত। অনেকে দলবেঁধে খেতে ছুটছেন ফুডজোনে। ঈদ ঘনিয়ে আসতেই এই বিপণিকেন্দ্র জমে উঠেছে কেনাকাটা।
প্রথম তলায় ব্র্যান্ড শপ এস্টেসিতে দেখা গেল ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট,পাঞ্জাবি আর মেয়েদের টপস্, কামিজ, লং শার্ট,ডেনিম প্যান্ট ও ব্যাগ। এখানে শার্ট রয়েছে ১৩৮০-২০৮০টাকা,ডেনিম প্যান্ট ২০৮০-২৩৮০ টাকা। আর মেয়েদের কামিজ ২৩৮০-৫০০০ টাকা। ব্যাগ রয়েছে ২০০০-৩৫০০ টাকা।
২য় তলায় সাবেরা ফ্যাশন হাউজের স্বত্বাধিকারি লুৎফর রহমান মোরশেদ বলেন, আমরা দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি জনপ্রিয় বিদেশী ফ্যাশনেও নজর দিয়েছি। টিভিতে বিদেশী সিরিয়াল দেখে এসে খুঁজতে থাকে। ফলে এখানে দেশীয় ত্রি পিচ ও শাড়ির মধ্যে কাথাঁ স্টিচ, কারচুপি, বেনারসী কাথাঁন,এমব্রয়ডায়রীর পাশাপাশি হাল ফ্যাশনের কালেকশন রেখেছি।
এবারের ঈদের কেনাকাটা ও ক্রেতা সমাগম নিয়ে প্রথম তলায় অবস্থিত খাজা মেনস্ ওয়ের বিক্রয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এখানে এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি, কাবুলি,কটিসহ কারুকার্যময় সেরোয়ানি রয়েছে বেশ।
অন্যদিকে আবার ৫ম তলায় ছোটদের ও বড়দের পোশাকের বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আল্পনা প্লাসে দেখা গেল শিশুদের শার্ট প্যান্ট ছাড়াও রয়েছে গাউন, পার্টি ফ্রক,লেগিংস ও জুতা। এখানে ছোটদের কাপড় মিলবে ১৫০০- ৭৫০০ টাকার মধ্যে। আর বড়দের শার্ট ১০০০-৪০০০টাকা, প্যান্ট ২০০০-৪০০০ টাকা। সেই সাথে পাঞ্জাবি রয়েছে ১৫০০-৭০০০টাকা পর্যন্ত।
আবার ঈদ অনুষঙ্গের অন্য আইটেমের মধ্যে জুতা, প্রসাধন, ফ্যাশন জুয়েলারী, লেডিস ব্যাগ নিয়ে পসরা সাজিয়েছে দ্বিতীয় তলার আল্পনা প্লাস। এর ম্যানেজার মো:জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পছন্দসই দেশী বিদেশী ব্র্যান্ডের জুতা, প্রসাধনী সামগ্রী, ফ্যাশন জুয়েলারী, লেডিস ব্যাগ রেখেছি ইচ্ছা ও সামর্থের কথা ভেবে।
কথা হলো সুগন্ধা আবাসিক থেকে আসা সিহাব রহমানের এর সাথে। তিনি বলেন, নান্দনিক স্থাপনা। সুন্দর পরিবেশও খোলামেলা ও প্রশস্ত এই মার্কেট বেশ স্বাচ্ছন্দ। আছে নিত্যনতুন পণ্যের সমাহার। কেনাকাটার পরিবেশও বেশ নির্ঝঞ্ঝাট। উপরন্তু সামর্থের মধ্যে রয়েছে পছন্দসই পোশাক সামগ্রি।
ঈদ প্রস্তুতি নিয়ে ফিনলে স্কয়ার শপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিঞা মোহাম্মদ খালেদ বলেন, এই মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরদার। সার্বক্ষনিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশ প্রশাসন ও সর্বাত্তক সহযোগিতা করে আসছে। তিনি মার্কেটের পণ্য সামগ্রী নিয়ে বলেন, ঈদ উপলক্ষে কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্য হয় চট্টগ্রামে। নারী ও শিশুদের পোশাকে রাজধানী ঢাকা ও ভারতমুখী প্রবণতাও ধীরে ধীরে আমরা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এবারও ঈদ বিক্রয় উৎসব উপলক্ষে রয়েছে নগদ টাকাসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার। তাতে ৫০০ টাকার কেনাকাটা করে একজন ক্রেতা পাচ্ছেন ১টি স্ক্র্যাচ কার্ডও ৫০০০ টাকার কেনাকাটায় ১৫টি স্ক্র্যাচ কার্ড। এসবের প্রথম দফা লাকি ড্র হবে ২০ রোজায় এবং এরপর হবে মেগা ড্র । আশাকরি ঈদে কেনাকাটায় ‘ফিনলে স্কয়ার’ শপিং মলটি ক্রেতা আনন্দময় হয়ে উঠবে ।

স্যানমার নামেই যার অধিক পরিচিতি স্যানমার ওশান সিটি। চট্টগ্রামের অভিজাত শপিংমলগুলোর একটি। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা আর নানান বয়সের মানুষের কেনাকাটায় প্রতিনিয়ত মুখর হয়ে উঠছে এই শপিংমল। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি। সকাল থেকে রাত অবধি চলে এই কেনাকাটা। শপিংটিতে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে চমৎকারভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মার্কেটে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও। যাতে ক্রেতা সাধারণ নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারে।

শপিংয়ে নিচতলায় জেন্টস আইটেমের কাপড়ের দোকানের সংখ্যা বেশি। এগুলোর মধ্যে শৈল্পিক, ইয়েলো, ইজি, ওয়েল ক্রাফ্ট, ক্রাফট ক্যাসল, বি ন্যাটি অন্যতম। এসব দোকান ঘুরে দেখা যায় এখানে অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় শার্ট, প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে বেশি।
প্রথম তলায় রয়েছে কসমেটিক, জুয়েলারি, ব্র্যান্ডের ঘড়ির দোকানসহ বিভিন্ন রকমের শো-পিসের দোকান। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে মেয়েদের পোশাক। এখানে থ্রি-পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে মেয়েদের হাল ফ্যাশনের সব কাপড় রয়েছে। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ভারতীয়, পাকিস্তানি আর থাইল্যান্ডের কাপড় ও বাজার দখল করে আছে।
আর তৃতীয় তলায় রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবির দোকান। এগুলোর মধ্যে লুবনান, ম্যানহুড, আর্ট বি অন্যতম। পাঞ্জাবি ছাড়া ও এখানে রয়েছে কিডস আইটেম ও জুতোর দোকান।
চতুর্থ তলায় রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ও এক্সেসরিজের দোকান। এগুলোর মধ্যে স্যামসাং, অপপো, হুয়াই, সিম্পনি অন্যতম। এল এ টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ জিলহাজ জানান, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই মাসে মোবাইল বিক্রি কম হচ্ছে।
পঞ্চম তলায় রয়েছে ফুডকোর্ট। শপিং করতে আসা অনেকে এখানে ইফতার সম্পন্ন করে। আবার অনেক তরুণ-তরুণীর এখানে দলবেঁধে ইফতার করতে দেখা যায়। ষষ্ঠ তলায় রয়েছে ব্র্যান্ডশপ আর্টিস্টি,বাটা আর এপেক্সের বিশাল শোরুম। এখানে ক্রেতার ভিড় একটু বেশি।

জমজমাট বিকিকিনি চলছে সেন্ট্রাল প্লাজায়। সকালের দিকে ক্রেতা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এ মার্কেটে ক্রেতার চাপ। বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করেই এ মার্কেটে আসছেন ক্রেতারা। ঘুরে ঘুরে কিনছেন পছন্দের কাপড়। এতে ভীষণ খুশি বিক্রেতারা।

এখানকার কয়েকটি শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বয়স্কদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত, দেশি জামদানি, বালুচুরি, মিরপুরী কাতান ও পাবনার শাড়ি। তবে তরুণীদের বেশি আগ্রহী বিদেশি শাড়িতে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্থানী কাতান, জর্জেট, কাঞ্চিবরং। এখানে জামদানি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়, টাঙ্গাইল তাঁত ৮শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকায়, রাজস্থানী কাতান ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় এবং বালুচুরি ১ হাজার থেকে ৪ হাজায় টাকায়।

গতবারের তুলনায় এবারের ঈদে অনেক নতুন কালেকশন এলেও কাপড়ের দাম একটু বেশি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের ঈদ মাটি হয়ে যাবে বলে জানন বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া তরুণী লুনা ইয়াসমিন।

নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ের স্বজন সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বড় বিপণিবিতানের চেয়ে এখানে কাপড়ের মূল্যে বিস্তর ফারাক। অন্য মার্কেটে যে থ্রিপিসের দাম ৩ হাজার টাকা, একই মানের থ্রিপিস এ মার্কেটে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় মিলছে। ক্রেতা মোহাম্মদ দেলোয়ার অভিযোগের সুরে জানান, বড় মার্কেটে দাম নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে। বেশ কটা বড় মার্কেট দেখলাম তাই ছোট মার্কেটেই তিনি পোশাক কিনতে এসেছি ।