জামাআতে নামাজ আদায়ের উপকারিতা-সুফল

0
83

সজিদে নববিতে হজরত আবু বকর (রা) ইমামতিতে নামাজ আদায় হচ্ছে, আর তা দেখে আনন্দ অশ্রু ঝরছিল প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দুচোখ বেয়ে। কারণ, তিনি ইসলাম নামক যে জীবনাদর্শ নিয়ে এসেছেন, তা বাস্তবায়নে তিনি সফল।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের কয়েকদিন আগে অসুস্থতার জন্য মসজিদে নববির ইমামতিতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অথচ তিনি তাঁর হুজরা থেকে উম্মতের নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখে কাঁদছিলেন।

এ নামাজ যে ইসলাম ও মুসলমানের প্রধান ইবাদত। পরকালে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কাছে সর্ব প্রথম এ নামাজেরই হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে পারবে; তার জন্য পরবর্তী বিষয়ের সব হিসাবই সহজ হয়ে যাবে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এ নামাজকে জামাআতের সঙ্গে আদায় করার কঠোর তাগিদ দিয়েছেন। দুনিয়াতে ঈমানদার মুসলমানের প্রথম জেহাদ হলো জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।

মুসলিম উম্মাহর অসংখ্য লোক আছে যারা প্রতিদিনই নামাজ পড়ছেন; কিন্তু জামাআতে অংশ গ্রহণ করছেন না। কর্ম-ব্যস্ততা বা অসুবিধা ভিন্ন কথা। ইচ্ছা ও অবহেলা করেই অনেকে জামাআত ত্যাগ করে।

অথচ ইসলামের অন্যতম সুন্দর দৃশ্য হলো জামাআতে নামাজ আদায় করা। জামাআতে নামাজ আদায় হলো সারিবদ্ধ হয়ে ফেরেশতাদের ইবাদাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য।

জামাআতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মানুষের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, পরিচয় লাভ ও সহনশীলতার শিক্ষা লাভ করে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সম্মান, শক্তি প্রদর্শিত হয়।

আরও পড়ুন > নামাজ আদায়কারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার

এ কারণে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মুসলিম; যার মসজিদে যাওয়ার শক্তি রাখে; তাদের জন্য মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব করেছেন। তা সফর অবস্থায় হোক কিংবা বাড়িতে থাকা অবস্থানকালীন সময়ে হোক।

তাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামাআতে নামাজ আদায় সম্পর্কে অনেক সাওয়াব ফজিলত ও মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন।

– হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একা একা নামাজ আদায়ের চেয়ে জামাআতে নামাজ আদায়ের ফজিলত ২৭ (সাতাশ) গুণ বেশি।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, ’২৫ (পঁচিশ) গুণ বেশি।’ (বুখারি, মুসলিম)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কোনো ফরজ (নামাজ) আদায়ের জন্য (নিজ) ঘরে ওজু করে আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) রওয়ানা হয়; ওই বান্দার প্রতিটি কদমের দুই ধাপের প্রথমটির দ্বারা একটি গোনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অপরটির দ্বারা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।’ (মুসলিম)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে; আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির (অতিথির সেবার) ব্যবস্থা করেন, যখন সে সকাল-সন্ধ্যা গমন করে।’ (বুখারি, মুসলিম)

পরিশেষে…
মুমিন মুসলমানকে ইসলামের নানা বিষয় প্রশিক্ষণের জন্য আল্লাহ তাআলা রমজান মাস দান করেছেন। যে মাসে তিনি বিভিন্ন ইবাদতের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। যেভাবে রমজান মাসব্যাপী জামাআতের সঙ্গে অধিক নামাজ আদায়ের নসিহত পেশ করেছেন।

মানুষ তারাবিহ, কিয়ামুস সালাত, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিনসহ বিভিন্ন নামাজ বেশি বেশি আদায় করে থাকনে। মানুষের রমজান মাসজুড়ে এ নামাজের প্রশিক্ষণ থাকে সারা বছর।

‘নিশ্চয় নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। মসজিদে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবির আনন্দ অশ্রুর উপলক্ষ নামাজকে জামাআতে সঙ্গে আদায় করার তাওফিক দান করুন। মসজিদকে আবাদ করার তাওফিক দান করুন। দ্বীন-ইসলামকে জিন্দা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।