নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলেই বুঝবেন দেউলিয়া কারা

0
99

‘রাজনৈতিক ভাবে বিএনপি দেউলিয়া হয় নাই’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তেব্যের জবাবে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে বিএনপি দেউলিয়া হয় নাই বরং আওয়ামী লীগই দেউলিয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই বুঝবেন দেউলিয়া কারা হয়েছে।’

বর্তমান সরকার মামলার ফরম্যাট করে যখন যাকে খুশি তাকে ওই ফরম্যাটে ফেলে জেল-জুলুম করছে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। সরকারপ্রধান হেলিকপ্টারে চড়ে ভোট চেয়ে জনসভা করছে, আর আমাদের সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নগরীর কোতোয়ালি থানার নূর আহমদ সড়কে মহাসমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিএস২২১ বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে সভার কাজ শুর করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর নুর আহম্মদ সড়কে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডে সারাদেশের মানুষ এখন হতাশ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৭৮ হাজার মামলা হয়েছে। আজ যেখানে যাবেন সেখানে হতাশা। চরম অনিশ্চয়তায় দেশের মানুষ।

‘মা আজকে অস্থির কখন তার ছেলেকে তুলে নেয়, স্ত্রী অস্থির হয়ে থাকে কখন স্বামীকে তুলে নেয়, বোন অস্থির হয়ে থাকে কখন তার ভাইকে তুলে নিয়ে যাবে। এটা একদিন দুই দিনের নয়। গত কয়েকবছর ধরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ বিগত কয়েক বছরে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করায় মানুষের আস্থা হারিয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পেয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে অভিযোগ করে দলের মহাসচিব বলেন, যিনি দেশকে রক্ষার জন্য সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জীবন সায়াহ্নে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। একটি নির্জন পরিত্যাক্ত কক্ষে রাখা হয়েছে।

কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যখন দেশনেত্রীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মনে করেছিলাম তিনি ভেঙে পড়বেন। কিন্তু তাকে দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম।

‘সেদিন তিনি আমাদের বলেছিলেন ভয় পাবেন না। আপনারা এগিয়ে যান। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য কাজ চালিয়ে যান। এমনিতেই তাকে গণতন্ত্রের মা বলি না। তিনি রাজনীতিতে আসার পর ৩৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ৩৩ লাখটাকা আত্মসাতের সাজানো মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করে না। তাকে কেবল একটি কারণে জেলে পাঠানো হয়েছে। সেটি হলো সরকার তাকে ভয় পায়। তাই তারা নির্বাচন দিতে চায় না।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এখন আমাদে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা। ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য তৈরি করতে হবে। দল, মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে একত্রিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষ যেভাবে যুদ্ধ করেছিল, বুকের রক্ত দিয়েছিল ঠিক সেইভাবে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাই এক হয়ে মিলেমিশে একটি বিষয়ে আন্দোলন করতে হবে।

আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি আসুন কথা বলি। আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করি। কিন্তু তারা কথা বলতে চান না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্যাতন নিপিড়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। তা কি পারা যাবে, বাংলাদেশের মানুষ কি দমে যাবে, আজকে কি দমিয়ে রাখতে পেরেছে? দমানো যাবে না। অত্যাচার নির্যাতন যত বাড়বে ততই তারা ঐক্যবদ্ধ হবে, ততই অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনাদের কাছে বারবার এই আবেদন জানাতে চাই। আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিশ্বাস রাখুন। আজ দেশেরএই সংকটে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি নেতারা ঐক্যব্ধ, সবাই এক হয়ে, এক কাতারে দাড়িয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছে। আপনাদের কাছে যাচ্ছে, জনগণের কাছে যাচ্ছে। এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করতে হবে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, মো.শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রমিক দল নেতা এ এম নাজিম উদ্দিন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।